ফলদবৃক্ষের সমাহারে পরিপূর্ণ জার্মপস্নাজম সেন্টার
প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী
ময়মনসিংহ শহরের দাঁড়প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অবস্থিত জার্মপস্নাজম সেন্টারকে বাহারি রকমের ফলদবৃক্ষের সমাহারের জন্য বলা হয়ে থাকে ফলের স্বর্গরাজ্য। ফলের এই স্বর্গরাজ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির, বিচিত্র রঙের ও ভিন্ন স্বাদের হাজার হাজার ফলের বিপুল সমাচার।
আমেরিকার ইউএস-ডিএআরএসের গবেষণায় বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফলদবৃক্ষের সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত বাকৃবির এই জার্মপস্নাজম সেন্টার।
বাকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের অর্থায়নে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ফল জাদুঘর। এক একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই জাদুঘরটি তৎকালীন সময় 'ফ্রুট ট্রি স্টাডিজ' নামে খ্যাত ছিল। অনতিদূর সময়ের মধ্যেই এই গবেষণাশালার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'ফলগাছ উন্নয়ন প্রকল্প'। এটিই এখন ৩২ একরে বিস্তৃতি নিয়ে 'জার্মপস্নাজম সেন্টার' হিসেবে পরিচিত। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এই জার্মপস্নাজম সেন্টারটিতে রয়েছে অসংখ্য বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতির দেশীয় ফল আর ঔষধি গাছের সমাহার।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই এই সেন্টারটি ফলের জিন সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাকৃবির গবেষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় তন্মধ্যেই প্রায় শতাধিকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ফলের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এই জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাউ আম, বাউ পেয়ারা, বাউকুল, বাউ লেবু, বাউ জাম্বুরা, বাউ কামরাঙা, বাউ লিচু, বাউ জলপাই, বাউ আমলকী, বাউ ডুমুর, বাউ মালটা, বাউ অরবরই, বাউ কাজুবাদাম, বাউ জামরুল, বাউ সফেদা, বাউ মাল্টা, বাউ স্ট্রবেরি, বাউ ডুমুর প্রভৃতি।
বর্তমানে জার্মপস্নাজম সেন্টারের এই ফল জাদুঘরে রয়েছে ২০০ প্রজাতির কাছাকাছি প্রায় ১০ হাজারের অধিক জাতের মাতৃগাছ, যার মধ্যে ১১৯৫টি দেশি-বিদেশি বিরল প্রজাতির গাছ। উলেস্নখিত এই গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে ২২০ ধরনের আম, ৫৭ প্রকারের পেয়ারা, ২৩টি ভিন্ন জাতের লিচু, ৪৭ রকমের লেবু এবং বিচিত্র স্বাদের ৯৪ ধরনের কাঁঠাল। এ ছাড়াও রয়েছে- ৬৭ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় অপ্রধান ফল, ৬৮ প্রজাতির ফলদ ঔষধি গাছ, ২৭ প্রজাতির ভেষজ গাছ ও ৫৮ প্রজাতির বিদেশি ফলের গাছ।
এই সেন্টারের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় প্রধানত পিএইচডি ও এমএস পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এখানে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাকৃবির এই জার্মপস্নাজম সেন্টারটি পেয়েছে বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার, এরই মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- ২০০৩ সালে বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পুরস্কার। এ ছাড়াও জার্মপস্নাজম সেন্টারের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ রহিম পেয়েছেন সুদূর আমেরিকা থেকে নরমেন আরনক বোরলক পুরস্কার। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জার্মপস্নাজম সেন্টার লাভ করেছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৯।
ফলদবৃক্ষের জার্মপস্নাজম সেন্টারটি শুধু গবেষণা কেন্দ্র নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থলও বটে, যেখানে প্রতিনিয়তই দেশি-বিদেশি গবেষক ও দর্শনার্থীরা আসেন ফলের বিপুল বৈচিত্র্য উপভোগ করতে এবং ফলের চারা সংগ্রহ করতে। এই সেন্টারটির কার্যক্রম বাংলাদেশের ফলের পুষ্টি ঘাটতি পূরণে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
জার্মপস্নাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মোক্তার হোসেন বলেন, 'এই জার্মপস্নাজম সেন্টারটির অভিষ্ঠ লক্ষ্যই ফলের জিন সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র, ফলের হিডেন নিউট্রেশন সংরক্ষণ এবং কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।'