শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য

ইভা আক্তার
  ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য

শারীরিক সুস্থতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই মানসিক সুস্থতাও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। কারোর মানসিক সমস্যা বলতে 'পা-গ-ল' শব্দটি জুড়ে দেন সেই ব্যক্তির সাথে। তাই প্রতিবছর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে 'বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস' পালন করা হয়। এ বছরে দিবসটির প্রতিপাদ্যের বিষয়টা হলো 'কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এখনই।' বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গভীর নজর দিলে দেখা মিলে প্রায় অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তারা তাদের দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন তাদের কর্মস্থলে। তবে কি কর্মস্থলগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার দিক দিয়ে অজ্ঞান? বর্তমানে কর্মসংস্থানের চিত্র বর্ণনা করেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ।

আমরা প্রায়ই একটা কথা শুনে থাকি 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল'। সেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা কি শুধু শারীরিক সুরক্ষা, মানসিক সুরক্ষা নয়? যদি একটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সুন্দর ও ভালো থাকে তবেই তার জীবন সুন্দর হতে পারে। এবারের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে প্রতিপাদ্যে উঠে এসেছে কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি। কেন আসলে কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে? কারণ কর্মক্ষেত্র এমন একটি জায়গা আমরা যারা চাকরিজীবী আমাদের জীবনের একটি দীর্ঘ সময় কর্মক্ষেত্রেই নিয়োজিত থাকি। সেই জায়গাটি যদি মানসিক শান্তিটা বিনষ্ট করে তাহলে সেটির প্রভাব আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে পড়ে। আমাদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশটা যদি সুন্দর হয় তাহলে সবাই ভালোভাবে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলি কর্মক্ষেত্রে যারা ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে থাকেন যেমন : প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে রিপোর্টিং বস থাকেন বা যার অধীনে কাজ করে তারা সবসময় একটা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে অনেকটা চাপিয়ে দেওয়ার মনমানসিকতা নিয়ে থাকেন (যেমন : হয়রানি, অপদস্ত, অসহযোগিতা)। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ হয়তো তাদের মেধা বা কাজ দিয়ে অনেক ভালো করছে তার পাশের সহকর্মী হয়তো ভালোভাবে নিতে পারছে না তখন তিনি নানাভাবে মানসিক অশান্তির জায়গা তৈরি করতে থাকেন। এই বিষয়গুলোর কারণে অনেক সময় তারা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা কাজে অমনোযোগী চলে আসে। যে মনোযোগ বা স্পৃহা নিয়ে কাজ করতে চায় সেটি হয়তো অনেক সময় পান না বা সে ভালোর দিকে অগ্রসর হতে পারে না। ফলে সে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা ভুগতে থাকেন। এখানেও আমাদের মানসিকতার একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই আমরা যদি আমাদের মনটাকে আরও উদার করতে পারি কর্মক্ষেত্রে নিজের সহকর্মীর ওপর বা আমরা যার অধীনে থাকি বা অধীনে রাখি তাদের প্রতি যদি সহমর্মিতা আচরণ, একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে বন্ধুত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে কর্মক্ষেত্রটি একটি সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারি, যা একটি মানুষের মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে অনেকাংশে সহযোগিতা করবে। যদি কারোর আচরণে বোঝা যায় সে মানসিক অসুস্থতা বোধ করছে তাকে দূরে ঠেলে নয় বরং বিনোদন বা তার সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা জরুরি। কর্মস্থলে একটা কাজ কর্মজীবীদের দিয়ে দুইভাবে আদায় করা যেতে পারে। যেমন- একটি কাজ ভীষণভাবে বকাঝকা করে, মানসিক চাপ ফেলে করিয়ে নিতে পারে; কিন্তু ওই একই কাজটি চমৎকারভাবে, সহমর্মিতার আচরণে এবং যত্ন করে বুঝিয়েও ওই একই কাজটি আদায় করিয়ে নেওয়া যায়। আমি বিশ্বাস করি দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যে কাজটির ফল আপনি পাবেন সে কাজটি তুলনামূলক অনেক ভালো হবে। কারণ সেখানে তার কাজে আন্তরিকতা ও স্বাচ্ছন্দ্য থাকবে। তাই নতুন বাংলাদেশে একটি চমৎকার দেশ গঠনে আমরা যদি কর্মক্ষেত্রে এই পরিবেশ তৈরি করতে পারি তাহলে মানসিক স্বাস্থ্যের অনেক বেশি বিকাশ ঘটবে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করার একটি ভালো কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে