ছত্রাক চাষের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও নেই ব্যাপকতা

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
ছত্রাক হলো এককোষী বা বহুকোষী সুকেন্দ্রিক জীব, যা সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে শর্করা তৈরি করতে পারে না এবং যাদের দৃঢ় কোষ প্রাচীর আছে। ছত্রাক ইউক্যারিওটিক কোষ দ্বারা গঠিত। ছত্রাক (ঋঁহমঁং) ক্লোরোফিলবিহীন সালোকসংশ্লেষে অক্ষম, পরজীবী বা মৃতজীবী উদ্ভিদ। তাদের আকার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাদের কোনো কোনোটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। আবার কোনো কোনোটি অনেক বড় আকারের হয়ে থাকে। আকার ও আকৃতি র. এককোষী ছত্রাক রর. বহুকোষী ছত্রাক বহুকোষী ছত্রাক অসংখ্য সরু সরু সুতার মতো অংশ নিয়ে গঠিত। এগুলোকে হাইফা (ঐুঢ়যধ) বলে। এগুলো একত্রিত হয়ে মাইসিলিয়াম (গুপবষরঁস) গঠন করে। ছত্রাকের শ্রেণিবিন্যাস গঠন কাঠামো অনুসারে ছত্রাককে নিম্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায় : ইস্ট : এরা এককোষী। যেমন : ক্রিপ্টোকক্কাস নিওফরমেন্স। \হমোল্ড : এরা বহুকোষী। যেমন : ট্রাইকোফাইটন রুব্রাম। ডিমরফিক : পরিবেশের ওপর নির্ভর করে এরা কখনো এককোষী কখনো বহুকোষী। যেমন : হিস্টোপস্নাজমা ক্যাপসুলেটাম। অর্থনৈতিক গুরুত্ব : পেনিসিলিনসহ বহু মূল্যবান ওষুধ ছত্রাক থেকে থেকে তৈরি করা হয়। পাউরুটি তৈরিতে ঈস্ট নামক ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। ঈস্ট ভিটামিনসমৃদ্ধ বলে ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এগারিকাস নামক এক ধরনের মাশরুম ছত্রাক শৌখিন খাদ্য বলে বিবেচিত। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বহু দেশে মাশরুম চাষ করা হয়। আবর্জনা পচিয়ে মাটিতে মেশাতে ছত্রাকের ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে ছত্রাকুলের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। ছত্রাকের প্রকৃত মূল, কান্ড এবং পাতা নেই। এখানকার আর্দ্র জলবায়ু ছত্রাকের বৃদ্ধি ও বিকাশের অত্যন্ত অনুকূল এবং সেজন্য এখানে নানা জাতের অজস্র ছত্রাক থাকা সম্ভব। কৃষিপ্রধান দেশ বিধায় এখানে ধান, পাট, আখ, চা, টমেটো, আলু, বেগুন, মরিচ, গম ও ভুট্টার মতো অনেকগুলো প্রধান ফসলের ক্ষতিকর ছত্রাক রয়েছে এবং সেগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। অপরাপর বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকের আক্রমণের কারণে জীবদেহে নানা প্রকার রোগের সৃষ্টি হয়। আর্থিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছত্রাক হলো ঈস্ট ও মাশরুম। পাউরুটি তৈরিতে ঈস্ট ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে ছত্রাক চাষের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও এগুলোর ব্যাপক চাষের কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয়নি। \হউপকারী ছত্রাক : \হপেনিসিলিয়াম- পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোষী মৃতজীবী ছত্রাক। এই ছত্রাক ফল, জেলি, শাক-সবজি এবং বিভিন্ন সংরক্ষিত খাদ্য বস্তুর ওপর জন্মায়। এরা সাধারণত নীল বা সবুজ ছাতা নামে পরিচিত। বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে পেনিসিলিয়াম নোটেটাম নামক ছত্রাক থেকে বিখ্যাত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ 'পেনিসিলিন' আবিষ্কার করেন। এই ওষুধ ক্ষত, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, সিফিলিস এবং বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। ঈস্ট : ঈস্ট এক রকমের এককোষী মৃতজীবী ছত্রাক। এরা পাকা ফল, আখ, খেজুর, তাল ইত্যাদির মিষ্টি রসে জন্মায়। ঈস্ট মূলত শর্করা জাতীয় খাদ্যকে পচিয়ে অ্যালকোহল উৎপন্নে সাহায্য করে থাকে। অ্যালকোহল বিভিন্ন রকমের ওষুধ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ঈস্ট থেকে বি-কমপেস্নক্স ট্যাবলেট প্রস্তুত হয়। ঈস্ট থেকে প্রাপ্ত উৎসেচক জাইমেজ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ঈস্ট পাউরুটি, কেক ও বেকারি জাতীয় খাদ্য তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। \হঅপকারী ছত্রাক : \হঅ্যাসপারজিলাস : অ্যাসপারজিলাস শাকসবজি, ফল, জ্যাম, জেলি, আচার, রান্না করা খাদ্যসামগ্রী, রুটি, মাছ, মাংস, দুধ, দই, মাখন প্রভৃতি খাদ্যবস্তুকে আক্রমণ করে ও বিনষ্ট করে। এ ছাড়া অ্যাসপারজিলাসের বিভিন্ন প্রজাতি সেলুলোজ, কাগজ, কাপড়, চামড়া ও পস্নাস্টিকের জিনিস, ফটোফিল্ম, রবারের বস্তু, রেশম ইত্যাদিকেও ধ্বংস করে। এমনকি এই ছত্রাকটি মানুষের ত্বক, ফুসফুস, কর্নিয়া, কানের ভেতর বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ। পাকসিনিয়া গ্রামিনিস : এটি এক ধরনের পরজীবী ছত্রাক। এই ছত্রাক গম গাছের পাতায় ব্রাউন রাস্ট বা পিঙ্গল বর্ণের রাস্ট বা মরিচা রোগ সৃষ্টি করে এবং গম গাছের কান্ড ও পাতায় বস্ন্যাক রাস্ট বা কৃষ্ণ বর্ণের মরিচা রোগ সৃষ্টি করে, ফলে গম গাছের পাতায় ও কান্ডে মরিচার মতো দাগ দেখা যায়। পাকসিনিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত গাছে গমের ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।