ভয়ের জেনেটিক বিন্যাস নিয়ে গবেষণা
প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
ভয় বিষয়টি মানুষের অন্যতম একটি সহজাত প্রবৃত্তি। এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি জীবনে কোনো দিন ভয় পাননি। মানুষের মৌলিক আবেগগত একটি বিষয় হচ্ছে ভয়। ভয় নিয়ে মনোবিজ্ঞানী এবং স্নায়ুজীব বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন করে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা প্রতিনিয়তই উন্মোচন করছেন নানা ধরনের তথ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ভয় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা তথ্য উন্মোচন করেছেন। এ গবেষণায় তারা অতি কমন একটি বিষয় ব্যবহার করেছেন। তা হচ্ছে ইঁদুরের বিড়ালভীতির বিষয়টি। একটি অতিপরিচিত বিষয়কে কাজে লাগিয়ে কিভাবে অসাধারণ অর্জন সম্ভব এটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিজ্ঞানীরা জানতে উদগ্রীব ছিলেন কিভাবে ইঁদুর বিড়ালের অবস্থান বুঝতে পারে এবং ভয়ের সংকেত লাভ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এ ক্ষেত্রে সবার আগে সাফল্য দেখিয়েছেন। তারা ইঁদুরের বিড়াল বা কুকুরভীতির কারণ বের করেছেন। ইঁদুরের 'ভোমেরোনাসাল' অর্গান নামে এক ধরনের সংবেদনশীল অঙ্গ আছে। অন্যদিকে বিড়াল বা কুকুরের মতো শিকারি প্রাণীরা এক ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন করে। ইঁদুর তার বিশেষ এ অঙ্গের সাহায্যে আগেভাগেই এ প্রোটিনের গন্ধকে বিপদের গন্ধ হিসেবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, শিকারি প্রাণীর মুখে লালা বা স্যালাইভা থেকে এক ধরনের রাসায়নিক সংকেত পায় ইঁদুর। এ সংকেতই ইঁদুরের জন্য ভীতির কারণ। এ স্যালাইভা মূলত এক ধরনের প্রোটিন। এ প্রোটিনটির নাম মাপস। এ প্রোটিনটির গন্ধই ইঁদুরের সংবেদনশীল অঙ্গের মাধ্যমে ধরা পড়ে। গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে 'সেল' সাময়িকীতে। গবেষণায় জানা গেছে, 'ভোমেরানাসাল' অর্গানের নিউরনগুলো শিকারি প্রাণীর প্রোটিনের সংকেত পেয়ে উদ্দীপ্ত হয়। আর এর ফলেই ইঁদুর ভয় পেয়ে নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় ও চারপাশে ভয়ের উৎস খুঁজতে থাকে।
ইঁদুরের এ অর্জনকে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন মানুষের ক্ষেত্রে। তারা দেখিয়েছেন মস্তিষ্কের কোন কোন স্নায়বিক গঠন এবং কোন কোন জিন সার্কিট এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এতদিন ধরে লিম্বিক সিস্টেমের নিচের দিকের অংশ অ্যামিগডালাকে বলা হতো ভয়ের অন্যতম উৎস। বিজ্ঞানীরা অ্যামিগডালার সঙ্গে আরো একটি বিষয় যুক্ত করেছেন তা হচ্ছে সেরেব্রাল কর্টেক্সের গোলাপি কোষের জালিকাগুলো। এ জালিকাগুলো থেকে যে স্নায়বিক সূত্র অ্যামিগডালাতে গেছে তা-ই ধারণ করে ভয়ের সচেতন ও অবচেতন যোগসূত্র।
মানুষের ভয় নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করেছেন এরূপ বিজ্ঞানীরা বিড়াল ও ইঁদুরের মাধ্যমে অর্জিত এ সাফল্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের সেন্টার ফর নিউরোসায়েন্সের বিজ্ঞানী জোসেফ লেডক্স বলেন, ভয় মানুষের অত্যন্ত সহজাত একটি বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্য অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। তাই তুলনামূলক স্নায়ুবিজ্ঞানের মাধ্যমে এ সম্পর্কে গোছানো তথ্য পাওয়া সম্ভব। ভয়ের বিজ্ঞানকে আরও বেশি সুস্পষ্ট করার ক্ষেত্রে এই বিজ্ঞানীরা যে প্রয়াস দেখিয়েছেন তা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লিওন নাং সি জানান, ভয়ের সঙ্গে জড়িত নতুন জেনেটিক বিন্যাস ও নির্উযাল সার্কিট আবিষ্কৃত হয়েছে জেনে ভালো লাগছে। তবে আমার ধারণা ভয়ের সঙ্গে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার জিন আবিষ্কার এখনো বাকি রয়ে গেছে। এ জিনগুলো আবিষ্কার হলে আমরা তখন বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, চেতনাবোধ, ভাষা, স্মৃতি-বিস্মৃতির সঙ্গে ভয়কে আরো গোছানো উপায়ে উপস্থাপন এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে পারব।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লরেন্স জেন্ট জানান, ভয়ের গবেষণায় যে নতুন অর্জন হয়েছে তা অসাধারণ। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে ইমেজিং প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের কারণে। এখন আমরা ফাংশনাল এমআরআইয়ের সাহায্যে অনায়াসে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ ইমেজিং করতে পারছি। বুঝতে পারছি মস্তিষ্কের কোন অংশ সক্রিয় আর কোন অংশ নিষ্ক্রিয়। ফলে মস্তিষ্কের অজানা তথ্য বের করতে আমাদের সুবিধা হচ্ছে।