সূর্য আমাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র। সূর্য থেকে আলো আসতে ৮ মিনিটের মতো সময় লাগে, কাজেই সূর্যের দূরত্ব হচ্ছে আনুমানিক ৮ আলোক মিনিট। আমাদের সৌরজগতের আকার হচ্ছে ১০ আলোক ঘণ্টার মতো। সূর্যের পরে আমাদের নিকটবর্তী তারা হচ্ছে ৪ আলোকবর্ষ দূরত্বে।
পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ, সূর্য ও অন্যান্য তারা ও নক্ষত্র, জ্যোতির্বলয়ের স্থান ও এদের অন্তর্র্বর্তীর গুপ্ত পদার্থ, ল্যামডা-সিডিএম নকশা, তমোশক্তি ও শূন্যস্থান (মহাকাশ)- যেগুলো এখনো তাত্ত্বিকভাবে অভিজ্ঞাত কিন্তু সরাসরি পর্যবেক্ষিত নয়, এমন সব পদার্থ ও শক্তি মিলে যে জগৎ তাকেই বলা হচ্ছে মহাবিশ্ব বা বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড। আমাদের পর্যবেক্ষণ-লব্ধ মহাবিশ্বের ব্যাস প্রায় ২৮ বিলিয়ন ঢ়ধৎংবপ (৯১ বিলিয়ন ষরমযঃ-ুবধৎ)। পুরো বিশ্বের আকার অজানা হলেও এর উপাদান সৃষ্টিধারা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বিদ্যমান। মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিষয়কে বলে বিশ্বতত্ত্ব। দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সুদূরতম প্রান্তের পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক গবেষণায় মনে হয় মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রক্রিয়ায় তার সৃষ্টি থেকেই একই ধরনের প্রাকৃতিক নিয়ম ও কয়েকটি নির্দিষ্ট ধ্রম্নবক দ্বারা নির্ধারিত হয়। বিগ ব্যাং (ইরম ইধহম) তত্ত্ব অনুসারে এর আয়তন ক্রমবর্ধমান।
প্রাচীনকালে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য নানাবিধ বিশ্বতত্ত্বের আশ্রয় নেওয়া হতো। পুরাতন গ্রিক দার্শনিকরাই প্রথম এই ধরনের তত্ত্বের গাণিতিক মডেলের সাহায্য নেন এবং পৃথিবীকেন্দ্রিক একটি মহাবিশ্বের ধারণা প্রণয়ন করেন। তাদের মডেলে পৃথিবীই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সব গ্রহ, সূর্য ও নক্ষত্ররা ঘুরছে। গ্রিকদের এই মডেলে মহাবিশ্বের মোট আয়তন বর্তমানে জ্ঞাত বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মধ্যেই ছিল। তারা ভেবেছিলেন আকাশের তারারা আমাদের থেকে খুব বেশি দূরে অবস্থিত নয়।
বেশ কয়েকজন জ্যোতির্বিদ পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেও যতদিন না চৌদ্দশ' শতকে কোপের্নিকাস সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বকে যৌক্তিকভাবে তার বইয়ে উপস্থাপনা করলেন ততদিন পৃথিবীকেন্দ্রিক ধারণা মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে গেঁথেছিল। পরে নিউটনের গতি ও মহাকর্ষ সংক্রান্ত গভীর ধারণা পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সৌরকেন্দ্রিক জগতের সামঞ্জস্য নির্ধারণ করে। ধীরে ধীরে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করেন সূর্যের মতোই কোটি কোটি তারা দিয়ে একটি গ্যালাক্সি গঠিত। কয়েকশ' বছর বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সমগ্র মহাবিশ্ব মানে শুধু আমাদের এই ছায়াপথ গ্যালাক্সিটিই। ১৯২০-এর দশকে উন্নত দুরবিনের কল্যাণে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করলেন ছায়াপথের বাইরে অন্য গ্যালাক্সিদের।
বিজ্ঞানীদের ধারণা হলো- সুদূর অতীতে সব গ্যালাক্সিগুলো বা তাদের অন্তর্নিহিত সব পদার্থই একসঙ্গে খুব ঘন অবস্থায় ছিল এবং কোনো মহাবিস্ফোরণের ফলে বস্তুগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই বিস্ফোরণের নাম দেওয়া হলো বিগ ব্যাং।
বিগ ব্যাং মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল একটা ভীষণ ঘন ও উষ্ণ দশা থেকে। আমরা চোখে বা ডিটেক্টর মাধ্যমে যা দেখি তা মহাবিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশের কম। এই মডেলে মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ১৩.৭৫ বিলিয়ন বা ১,৩৭৫ কোটি বছর। এই মহাবিশ্বের দৃশ্যমান অংশের ব্যাস প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোক বছর। যেহেতু মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দু প্রতিটি বিন্দু থেকে প্রতি মুহূর্তে আরও দ্রম্নত সরছে, মহাবিশ্বের ব্যাস ১৩.৭৫ ী ২ = ২৭.৫০ বিলিয়ন আলোক বছরের চেয়ে বেশি।