শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা

এক প্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ হলো অতি বেগুনি রশ্মি। এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য- দৃশ্যমান আলোর চেয়ে ছোট এবং রঞ্জন রশ্মির চেয়ে বড়। এই রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০ ন্যানোমিটার থেকে ৪০০ ন্যানোমিটার হয়ে থাকে। এর শক্তিসীমা ৩ ইলেকট্রন ভোল্ট থেকে ১২৪ ইলেকট্রন ভোল্ট। তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের সূত্রে প্রাপ্ত রশ্মিসমূহের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যত কম হয়, ততই তার শক্তি বৃদ্ধি পায়। মানুষের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোর চেয়ে ছোট, তাই দৃশ্যমান আলোর চেয়ে এর শক্তিও বেশি। এ?ই অধিক শক্তির কারণে মানুষের দেহে এই রশ্মি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শক্তির বিচারে অতি বেগুনি রশ্মিকে নানা ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো-

ঘটঠ (ঘবধৎ ঁষঃৎধারড়ষবঃ): তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৩০০-৪০০ ন্যামি। মানুষের দেহে এর ক্ষতিকারক প্রভাব কম। এই রশ্মি মানুষের চোখ শনাক্ত করতে পারে না। তবে কিছু পাখি, পতঙ্গ এবং মাছ এই তরঙ্গ দেখতে পায়।

টঠ-অ (টষঃৎধারড়ষবঃ অ): তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৩১৫-৪০০ ন্যামি। মানুষের দেহে এর ক্ষতিকারক প্রভাব কম। পৃথিবীর বাইরে থেকে আগত এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অতি বেগুনি রশ্মি ঊর্ধ্বাকাশের ওজোন স্তরের ওজোনকে ভাঙতে পারে না। এ কারণে এই অতি বেগুনি রশ্মি ওজোন স্তরে শক্তি না হারিয়ে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। তীব্র

রৌদ্রে এই রশ্মি মানুষের দেহতত্ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে এই ক্ষতির প্রক্রিয়াটি ঘটে দীর্ঘসময় ধরে।

টঠ-ই (টষঃৎধারড়ষবঃ ই): তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ২৮০-৩১৫ ন্যামি। মানুষের দেহে এর ক্ষতিকারক প্রভাব টঠ-অ-এর চেয়ে বেশি। পৃথিবীর বাইরে থেকে আগত এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অতি বেগুনি রশ্মি ঊর্ধ্বাকাশের ওজোন স্তরের ওজোনকে অল্প বিস্তর ভাঙতে পারে। এ কারণে এই অতি বেগুনি রশ্মি ওজোন স্তরে অনেকটাই শক্তি না হারিয়ে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। তীব্র রৌদ্রে এই রশ্মি মানুষের দেহতত্ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ঠট-ঈ (টষঃৎধারড়ষবঃ ঈ): তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০০-২৮০ ন্যামি। মানুষের দেহে এর ক্ষতিকারক প্রভাব অন্য দুটি অতি বেগুনি রশ্মির চেয়ে অনেক বেশি। পৃথিবীর বাইরে থেকে আগত এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অতি বেগুনি রশ্মি ঊর্ধ্বাকাশের ওজোন স্তরের ওজোনকে ভেঙে ফেলে। এ কারণে এই অতি বেগুনি রশ্মি ওজোন স্তরে শক্তি হারিয়ে ফেলে। একে বলা হয়ে ওজোন স্তরের অতি বেগুনি রশ্মির শোষণ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার জন্যই মানুষসহ জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতি সুস্থ জীবনধারণে সক্ষম হয়। এই রশ্মি মানুষের দেহে ক্যানসারের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া মানুষের চোখের ব্যাপক ক্ষতি করে এই রশ্মি।

ঠটঠ (ঠধপঁঁস ঁষঃৎধারড়ষবঃ): তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০-২০০ ন্যামি। বায়ুস্তরে অক্সিজেনের দ্বারা শোষিত হয়ে যায়।

ঊটঠ (ঊীঃৎবসব ঁষঃৎধারড়ষবঃ): তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০-১২১ ন্যামি। বায়ুস্তরে দ্বারা শোষিত হয়ে যায়।

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে মূলত তিন ধরনের- এ, বি এবং সি। আমরা যেহেতু বিষুব রেখার কাছাকাছি থাকি, তাই আমাদের দেশে এ এবং বি বেশি পাওয়া যায়। অতি বেগুনি রশ্মি বেশি ছড়ায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত, অর্থাৎ যখন ছায়া নিজের চেয়ে ছোট থাকে। অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। সূর্য রশ্মির মতো আমাদের ত্বকেরও নানা প্রকারভেদ আছে। ত্বকে মেলানিনের মাত্রার ওপর নির্ভর করে এই প্রকারভেদ। আমাদের ত্বকে ইউ মেলানিন বা তামাটে মেলানিনের মাত্রা বেশি বলে আমরা সূর্যালোকের সঙ্গে কিছুটা বেশি খাপ খাইয়ে নিতে অভ্যস্ত। শ্যাম বর্ণের মানুষ তাই প্রখর সূর্যালোকে 'ট্যান' হয়, কিন্তু 'বার্ন' হয় না। ফলে ক্ষতির মাত্রা কিছুটা কম। আবার ইয়েলো মেলানিন যাদের বেশি, যেমন অস্ট্রেলীয় বা পাশ্চাত্যের অনেক দেশে ত্বকের এই ফটোপ্রোটেকশন ক্ষমতা কম। ফলে ত্বকে পোড়াটে ভাব আসে, ত্বকের বিশেষ ক্ষতিও হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এ কারণে ত্বকের ক্যানসার পরিচিত এক রোগ। সব ধরনের ক্যানসারের মধ্যে এটি দশম। ক্যানসার ছাড়াও সূর্যের সরাসরি আলো ত্বকের আরও কিছু ক্ষতি করতে পারে। অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি ত্বকের ওপর পড়লে ত্বকের নিচের কানেকটিভ টিসু্যর কোষগুলো ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে ত্বকের টানটান ভাব নষ্ট হয়। যারা সূর্যের আলোতে বেশি কাজ করেন, তাদের ত্বক দ্রম্নত বুড়িয়ে যায়, কুঁচকে যায়, বলিরেখা পড়ে। তা ছাড়া সূর্যের আলোয় ত্বক দ্রম্নত আর্দ্রতা হারায়। এই সমস্যাগুলোকে ফটোড্যামেজ বলা হয়। এর বাইরে তিল পড়া, কালো পিগমেন্টেশন হওয়া, মেছতা পড়া, ডার্ক স্পট, কেরাটোসিস ইত্যাদির কারণ এই অতি বেগুনি রশ্মি।

অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা :

১. সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রখর সূর্যের আলোয় বাইরে কাজ না করা উচিত।

২. এ সময় বেরোতে হলে ছাতা, বড় হ্যাট, সানগস্নাস ইত্যাদি ত্বক প্রতিরোধ করা সামগ্রী ব্যবহার করা ভালো। ঢিলেঢালা সাদা বা হালকা রঙের কাপড় অতি বেগুনি রশ্মিকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। আটসাঁট ও গাঢ় বা কালো কাপড় দিনে সূর্যের আলোয় না পরাই ভালো।

৩. বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা উচিত। মেঘলা দিনে বা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চড়লে বা অফিসে কাজ করলেও অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকে লাগে। তাই যে কোনো দিনই বের হলে বা বাড়ির ছাদ, বারান্দায় গেলে সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন লাগানো ভালো। ঘেমে গেলে এর প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলে মুছে আবার লাগানো উচিত।

৪. সমুদ্র বা পাহাড়ে অর্থাৎ খোলা জায়গাসমূহে অতি বেগুনি রশ্মি আরও বেশি করে প্রতিফলিত হয়। তাই বেড়াতে গেলে অবশ্যই ছোট-বড় সবাই ত্বকের উন্মুক্ত জায়গায় সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করবেন।

অতি বেগুনি রশ্মি তিন ধরনের যেমন: আলট্রাভায়োলেট এ, আলট্রাভায়োলেট বি এবং আলট্রাভায়োলেট সি। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা যে কোনো ঋতুতেই আলট্রাভায়োলেট এ এবং আলট্রাভায়োলেট বি ত্বকের জন্য বিপদজ্জনক। যা শুধু সানবার্নই করে না, ত্বকের বলিরেখা, ফ্রেকলস, মেছতা, আঁচিল এমনকি স্কিন ক্যানসারও হতে পারে। দিনের ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অতি বেগুনি রশ্মির বিকিরণ ক্ষমতা বেশি থাকে বলে এ সময় প্রয়োজন ছাড়া রোদের সংস্পর্শে না আসাই ভালো। যদি সূর্যের সংস্পর্শে আসতেই হয় তবে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। সূর্য অতি বেগুনি রশ্মির প্রধান উৎস হলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত টিভি, টিউব লাইট, ট্যাব, কম্পিউটার এগুলোর থেকেও আমরা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির সংস্পর্শ পাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে