শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বিকল্প হতে পারে বৈদু্যতিক জেনারেটর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিকল্প হতে পারে বৈদু্যতিক জেনারেটর

বৈদু্যতিক জেনারেটর এমন এক ধরনের বৈদু্যতিক যন্ত্র, যা যান্ত্রিক শক্তি বা ক্ষমতাকে বৈদু্যতিক শক্তি বা ক্ষমতায় রূপান্তরিত করে। অবশ্য, ডায়নামো বলতে সাধারণত কেবল জেনারেটরকেই বোঝানো হয়। প্রথম নির্মিত জেনারেটরকে ডায়নামো নামে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এই বৈদু্যতিক যন্ত্র গতিশীল তড়িৎচালক শক্তি উৎপাদনের নীতি ব্যবহার করে এই রূপান্তর ঘটায়। ফ্যারাডের তড়িৎচুম্বক আবেশের নীতি অনুসারে একটি পরিবাহী যখন চৌম্বক ফ্ল্যাক্সের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে তখন এর মধ্যে একটি গতিশীল তড়িৎচুম্বক আবেশের সৃষ্টি হয়। পরিবাহী পদার্থ বা তারকে আবদ্ধ বর্তনীতে অন্তর্ভুক্ত করলে এর মধ্য দিয়ে এই ফ্ল্যাক্সের কারণে একটি তড়িৎপ্রবাহ পাওয়া যায়। এভাবেই বিদু্যতের উৎপত্তি ঘটে। অর্থাৎ তড়িৎশক্তি উৎপাদন করতে গেলে তিনটি জিনিস আবশ্যক : একটি চৌম্বক ক্ষেত্র, একটি তড়িৎ পরিবাহক এবং গতি। এই তিনের সম্মিলন ঘটিয়েই জেনারেটর নির্মিত হয়। তবে ব্যবহার যোগ্যতা এবং উপযোগিতার কথা চিন্তা করে এর মধ্যে নানা ধরনের পরিবর্তন. সংযোজন এবং নকশা অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।

স্থির বৈদু্যতিক জেনারেটর : যেসব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণের জন্য উচ্চ বিভবের প্রয়োজন পড়ে, তাদের ক্ষেত্রে স্থির বৈদু্যতিক জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ উদ্ভাবক জেমস উইমহার্স্ট একটি স্থির বৈদু্যতিক যন্ত্র তৈরি করেছিলেন, যার নাম উইমহার্স্ট যন্ত্র।

স্থির বৈদু্যতিক জেনারেটর বলতে মূলত এমন জেনারেটরকে বোঝায়, যা উচ্চ বিভব এবং খুবই নিম্নপর্যায়ের প্রবাহমান তড়িৎ উৎপন্ন করে, তথা এটি স্থির তড়িৎ তৈরি করে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই স্থির তড়িতের সঙ্গে মানুষ পরিচিত ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে মানুষ ঘর্ষণের মাধ্যমে স্থির তড়িৎ উৎপাদন করত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে তড়িৎ বিজ্ঞান অধ্যয়নের ক্ষেত্রে বৈদু্যতিক জেনারেটর প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে।

ফ্যারাডের আবিষ্কার : ১৮৩১-১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে আবিষ্কার করেন, একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে লম্ব বরাবর গতিশীল তড়িৎ পরিবাহকের দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। এই আবিষ্কারকে ফ্যারাডের তড়িৎ চৌম্বক নীতি বলা হয়। এই নীতির ওপর ভিত করে ফ্যারাডেই প্রথম তড়িৎ চৌম্বক জেনারেটর তৈরি করেন, যা চলবিদু্যৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। তার জেনারেটর তথা ডায়নামোটিকে 'ফ্যারাডে ডিস্ক' বলা হয়। অশ্বক্ষুরাকৃতির একটি চুম্বকের দুই মেরুর মাঝখানে স্থাপিত কপার চাকতির ঘূর্ণন ব্যবহার করে এই যন্ত্রে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়। এই ডিস্ক সামান্য পরিমাণ এশমুখী প্রবাহ বিভব এবং অনেক বেশি তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করেছিল।

ডায়নামো : ডায়নামো ছিল প্রথম বৈদু্যতিক জেনারেটর, যা শিল্প-কারখানার জন্য বিদু্যৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। ডায়নামো তড়িৎ চুম্বকত্বের নীতি ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তিকে খানিকটা স্পন্দনশীল একমুখী তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে। ডায়নামোতে একটি স্থির কাঠামো সুষম চৌম্বক ক্ষেত্র সরবরাহ করে, আর স্থির কাঠামোর ভেতর কিছু ঘূর্ণনশীল ওয়াইন্ডিং স্থাপিত হয়, যারা চৌম্বক ক্ষেত্রকে আড়াআড়ি বা লম্বভাবে অতিক্রম করে। ছোট আকারের যন্ত্রে কয়েকটি স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করে চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হলেও বড় আকারের যন্ত্রের জন্য সার্বক্ষণিক তড়িৎ চুম্বক সরবরাহ করতে হয়।

ফ্যারাডের নীতি ব্যবহার করে প্রথম ডায়নামো নির্মিত হয় ১৮৩২ সালে। ফরাসি যন্ত্রপাতি নির্মাতা ঐরঢ়ঢ়ড়ষুঃব চরীরর এটি তৈরি করেছিলেন। ঘূর্ণনশীল চুম্বকটিকে এমনভাবে স্থাপিত করা হয়, যাতে এর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু তার দিয়ে পেঁচানো একটি লৌহদন্ডকে অতিক্রম করে যেতে পারে। তিনি দেখতে পান, প্রতিবার যখন একেকটি মেরু তারের কুন্ডলীকে অতিক্রম করে তার সঙ্গে সঙ্গেই তারের মধ্যে একটি স্পন্দনশীল তড়িৎ প্রবাহের উৎপত্তি ঘটে। ফ্যারাডে ডিস্কের তুলনায় চরীরর'র ডায়নামো বেশি কর্মক্ষম ছিল।

একটি ডায়নামোতে যান্ত্রিক ঘূর্ণন এবং তড়িৎ প্রবাহের মধ্যে সম্পর্কটি প্রত্যাবর্তী। এর মাধ্যমেই পরবর্তীতে বৈদু্যতিক মোটর নির্মাণ সম্ভব হয়। মোটর এবং জেনারেটর প্রকৃতপক্ষে একটি যন্ত্রের দুটি ভিন্ন কার্যক্রিয়ার নাম। একটি ডায়নামো, তার সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবে সংযুক্ত আরেকটি ডায়নামোকে ঘোরাতে পারে (অর্থাৎ দ্বিতীয়টিতে তড়িৎ উৎপন্ন হওয়ার পরিবর্তে তা যান্ত্রিক শক্তি সরবরাহ করবে) যদি দ্বিতীয়টিতে তড়িৎ সরবরাহ করা যায়। যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদু্যতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তা থেকে আবার যান্ত্রিক শক্তি লাভের এই প্রক্রিয়ার কারণেই ডায়নামোকে বিদু্যতের ক্ষতিপূরণ এবং ভারসাম্য রক্ষাকারী যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

জেডিকের ডায়নামো : ১৮২৭ সালে হাঙ্গেরীয় উদ্ভাবক অহুড়ং ঔবফষরশ তড়িৎ চৌম্বক ঘূর্ণনশীল যন্ত্র নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি এ ধরনের যন্ত্রের নাম দিয়েছিলেন তড়িৎ চৌম্বক আত্ম-ঘূর্ণনশীল যন্ত্র। ১৮৫২-১৮৫৪ সালের মাঝামাঝি সময় তিনি একক-মেরুবিশিষ্ট বৈদু্যতিক স্টার্টার তৈরি করেন। এই স্টার্টারের স্থির এবং ঘূর্ণনশীল, উভয় অংশই তড়িৎ চৌম্বক ছিল। তিনি আর্নস্ট ভের্নার ফন সিমেন্স এবং চার্লস হুইটস্টোনের ছয় বছর আগেই ডায়নামো ধারণাটি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। তার ধারণাটি ছিল, স্থায়ী চুম্বকের পরিবর্তে দুটি বিপরীত তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করে রোটরের চারদিকে চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে