বাংলাদেশের ওঞ খাতের রূপরেখা ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের আইটি খাতকে আরও বিস্তৃত করতে হলে, উদ্যোক্তাদের যথাযথ সহায়তা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ও অবকাঠামো ব্যবহার করে শুধু নিজে কাজ করলেই চলবে না, বরং অন্যের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহজলভ্য ফান্ডিং, ইনকিউবেশন সেন্টার, এবং মেন্টরশিপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নিরব রাজ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের আইটি খাত সমৃদ্ধ হয়েছে কয়েকগুণ। যা সরাসরি ভূমিকা রাখছে অর্থনীতিতে, অবদান রাখছে জিডিপিতে এবং সর্বোপরি চাকরিপ্রাপ্তিতে। বাংলাদেশকে আইটি হাব হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করা জরুরি। যা আমাদের আইটি খাতকে $ ৫ বিলিয়ন ডলার সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪,৫০০ টিরও বেশি ক্রমবর্ধমান ওঞ/ওঞঊঝ কোম্পানি রয়েছে এবং ৭৫০,০০০ টিরও বেশি আইসিটি পেশাদার নিয়োগ করছে। এই খাতটি বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখছে।
১. দ্রম্নতগতি ইন্টারনেট ব্যবস্থা
আইটি সেক্টরের মূল চালিকাশক্তি ইন্টারনেট। দ্রম্নতগতি ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এতে করে কাজের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং দ্রম্নত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সহজতর হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের অপটিক্যাল ফাইবার ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এমনকি মোবাইল ইন্টারনেট সেবার মান বাড়াতে হবে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মানসম্মত ও দ্রম্নতগতির ইন্টারনেট সেবা চালু করতে হবে। সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট দাম নির্ধারণ নীতিমালা ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও স্যাটেলাইট মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা সম্ভব, বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঝঃধৎষরহশ-এর মতো উচ্চগতির সেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে পারে।
২. সহজ পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস
ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবস্থা শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে। পেমেন্ট মাধ্যম যত বেশি সহজ হবে, তত বেশি কাজ করার আগ্রহ বাড়বে, এতে করে কাজ ডেলিভারি বৃদ্ধি পাবে এবং ইনকাম বেশি জেনারেট হবে। ব্যাংক ও অনলাইন সার্ভিসগুলো সহজ ও দ্রম্নত সময়ের মধ্যে সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে উন্নত ও নিরাপদ টেকনোলজি ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক, অনলাইন সার্ভিসগুলোকে নিরাপদ পেমেন্ট ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ চধুচধষ-এর মতো আন্তর্জাতিক পস্ন্যাটফর্মের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হলে দেশি ও আন্তর্জাতিক কাজের সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে। বাংলাদেশে চধুচধষ সার্ভিস প্রদানে সরকারকে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে ও লোকাল সার্ভিসগুলোকে প্রায়োরিটি দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেমেন্ট সার্ভিস প্রদান করতে হবে।
৩. শিক্ষাব্যবস্থা ও ট্রেনিং
জ্ঞানভিত্তিক তরুণ সমাজ গড়তে হলে আধুনিক ও উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা অপরিহার্য। কোর এবং ফান্ডামেন্টাল কোর্সগুলোকে নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢেলে সাজানো এবং গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রেনিং করার সুযোগ করে দিতে হবে। এ ছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে, সময়-সাময়িক ও উন্নত টেকনোলজি সম্পর্কে শিক্ষকদের জন্য সরকারি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। যা সরাসরি ভূমিকা রাখবে শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে। শিক্ষার্থীদের উচিত, নতুন নতুন আবিষ্কার ও রিসার্চ করা এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে আপডেট রাখা। আইটি খাতের উন্নতির জন্য উদ্ভাবন অপরিহার্য। অও, ঋরহঞবপয, ওড়ঞ, ইষড়পশপযধরহ ইত্যাদির মতো উচ্চ-বৃদ্ধির খাতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করলে, দেশি ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে তারা প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।
৪. উদ্যোক্তা তৈরিতে মনোনিবেশ
বাংলাদেশের আইটি খাতকে আরও বিস্তৃত করতে হলে, উদ্যোক্তাদের যথাযথ সহায়তা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ও অবকাঠামো ব্যবহার করে শুধু নিজে কাজ করলেই চলবে না, বরং অন্যের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহজলভ্য ফান্ডিং, ইনকিউবেশন সেন্টার, এবং মেন্টরশিপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত, প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
৫. চাকরি মেলা ও সুযোগ
আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে পেশাদার লোকজনের সব সময় প্রাধান্য দেওয়া হয়। পেশাদারদের চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়মিত চাকরি মেলার আয়োজন করা উচিত। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের রিসোর্স বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে গেস্নাবাল জব ফেয়ার আয়োজন করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। যাতে দেশের আইটি ট্যালেন্ট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।
আইটি সেক্টর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত। যা এখন সরাসরি জিডিপিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে. ২০২১ সালের তথ্য মতে, ওঞ-বহধনষবফ ংবৎারপবং (ওঞঊঝ), ইঁংংরহবংং চৎড়পবংংরহম ঙঁঃংড়ঁৎপযরহম (ইচঙ) খাত থেকে $১.৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। যা ছিল ২০১৩ সাল থেকে ২১% বেশি। আশা করা যায়, ২০২৫ সালে তা গিয়ে দাঁড়াবে $৫ নরষষরড়হ ডলারে। সরকার ও সবার প্রচেষ্টায় পারে আইটি খাতকে বহুদূর এগিয়ে নিতে।
আইটি খাত বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। বাংলাদেশের আইটি খাতের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এটি আন্তর্জাতিক বাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।