পৃথিবীর ডিজিটাল টুইন তৈরির পরিকল্পনা

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
নিজের একটি ডিজিটাল টুইন তৈরির কথা ভেবেছেন কখনো? কিংবা পুরো পৃথিবীর একটি ডিজটাল টুইন থাকলে কেমন হয় ভেবেছেন? ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের পৃথিবীর এক হুবহু ডিজিটাল সংস্করণ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা থেকে শুরু করে নানা কাজে ব্যবহার করা যাবে এই ডিজিটাল টুইন। বন্যা, খরা, দাবানল- বিরুপ আবহাওয়া আমাদের সবার ওপর প্রভাব ফেলছে! কিন্তু আপনার শহর, পাড়া, বাড়ির আসলে কী হবে? আমাদের বিষয়টি বোঝাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ এক বিশাল প্রকল্প নিয়েছে। আমাদের ধরিত্রির এক ডিজিটাল টুইন বা জমজ। ডিজিটাল টুইন কী? ডিজিটাল টুইন আসলে কী? ডিজিটাল টুইন হচ্ছে-একটি বস্তু বা ব্যবস্থার ভার্চুয়াল উপস্থাপন। একটি সত্যিকারের পরিস্থিতির প্রতিরূপ। বাস্তবধর্মী করে ডিজিটাল টুইন তৈরি করা হয় এবং এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হয়। আমরা যাতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারি, এ জন্য এসব তৈরি করা হয়। ইইউর 'ডেস্টিনেশন আর্থ' বা 'ডেস্টিনই' নামের এই প্রকল্প 'আমার বাড়ি তৈরির জন্য এটা কি আদর্শ স্থান?' এমন প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারে। 'ডেস্টিনই'কে আমরা আর কোন কোন কাজে ব্যবহার করতে পারি? 'ডেস্টিনই' পস্ন্যাটফর্মে নানারকম সিমু্যলেশনে প্রবেশ করা যাবে। আপনার এলাকায় বন্যা হলে কী ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে বা জলবায়ু পরিবর্তন পর্যটনের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এই অ্যাপ দেখাতে পারে। আপনি যদি কৃষক হন, তাহলে হয়ত জানতে চাইবেন, আপনার শষ্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাব কী হবে? বা সোলার প্যানেল বসানোর আদর্শ জায়গা কোনটা... অর্থাৎ জানার ক্ষেত্র অনেক। ডেস্টিনই পস্ন্যাটফর্ম এটির ব্যবহারকারী এবং বিকাশকারীদের নিজেদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেয়। বর্তমানে অবশ্য সীমিত কিছু সেবা চালু রয়েছে, কেননা, অ্যাপটিতে অনেক তথ্য এখনো যোগ হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর অবিকল ডিজিটাল প্রতিরূপ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এই প্রকল্প। এটি কীভাবে তৈরি হচ্ছে? ডেস্টিনই তৈরির মূলে রয়েছে 'ডেটা লেক' নামের এক বিশাল তথ্যভান্ডার। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা, পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কোপার্নিকাসসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিবেশ-বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে এটি। যখনই বিজ্ঞানীরা ডিজিটাল টুইনে কোনো সিমু্যলেশন করেন, সেসব তথ্যও ডাটাবেসে যুক্ত করা হয়। ভালো কথা, শুধু ইইউই কিন্তু আমাদের পৃথিবীর ডিজিটাল টুইন তৈরি করছে না। চিপনির্মাতা এনভিডিয়ারও একটি রয়েছে। তারা জানিয়েছে যে, তাইওয়ান সরকার ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেতে এটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। আর শুধু আমাদের বিশ্বের ডিজিটাল টুইনই নয়- এই ডেটা মডেল সব ধরনের কনটেক্সটেই ব্যবহার করা যায়। আর কোন কাজে ডিজিটাল টুইন ব্যবহার করা যায়? এখানে তিনটি উদাহরণ দেওয়া হলো- ১. সার্জারি আরও নিরাপদ করা : প্রকৃত অস্ত্রোপচারের আগে মানবদেহ বা এটির কোনো সুনির্দিষ্ট অঙ্গের ডিজিটাল টুইনের ওপর পুরো প্রক্রিয়া যাচাই করা যায়? ডিজিটাল টুইনের ওপর এমন সিমু্যলেশন প্রকৃত পরিস্থিতিতে কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে? ২. আপনার শহরকে আরও বসবাসোপযোগী করা : বিভিন্ন শহরের ডিজিটাল টুইন ব্যবহার করে নগর পরিকল্পনাকারীরা সবুজায়ন এবং ভবনের কাঠামো কীভাবে বায়ুর মান, তাপমাত্রা এবং বাতাসের ওপর প্রভাব ফেলবে তা যাচাই করতে পারেন? এ ধরনের তথ্য ব্যবহার করে কোথায় দোকানপাট, কোথায় বিদ্যালয় বা কোথায় সড়ক নির্মাণ করা উচিত, তা নির্ধারণ করা যাবে? ৩. রেলযোগাযোগ আরও সময়ানুবর্তী করা : জার্মানির জাতীয় রেলওয়ে কোম্পানি ডয়চে বান এটির রেল নেটওয়ার্কে ডিজিটাল টুইন তৈরি করছে? এটিতে সিমু্যলেশনের মাধ্যমে ট্রেন রুট বা সময়সীমায় কী ধরনের পরিবর্তন আনলে এর প্রভাব কী হবে, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে? কার্যকারিতা বাড়াতে এবং ঝুঁকি কমাতে ডিজিটাল টুইন তৈরি করা হচ্ছে?তবে এসব অনেক কম্পিউটিং ক্ষমতা দরকার, যা বর্তমানে শুধু বড় ইন্সটিটিউটগুলোর রয়েছে?