একবিংশ শতকের এই দ্রম্নত পরিবর্তনশীল যুগে, বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনগুলো শুধু শিক্ষার মাধ্যম নয় বরং উদ্ভাবনী শক্তি এবং সৃজনশীলতার উর্বর ক্ষেত্র। তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা সংগঠনগুলোতে বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি নেতৃত্বদানের গুণাবলি, দক্ষতা বৃদ্ধি, তাদের নিজস্ব চিন্তাশীলতাকে এবং গবেষণার দক্ষতাকে, তীব্রভাবে বিকাশিত করার সুযোগ পায়।
জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ১৭ নম্বর কক্ষে গেলে দেখা মিলবে একদল শিক্ষার্থী বিজ্ঞানচর্চায় মগ্ন। তারা বিজ্ঞান-বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আলোচনার বিষয় ন্যানো টেকনোলজি থেকে মহাকাশে বিজ্ঞানের সাফল্য। বলছিলাম 'জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাব' (জেইউএসসি) এর কথা। সারাদেশে বিজ্ঞানের আর্শিবাদ ছড়িয়ে দিতে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন স্বপ্নবাজ বিজ্ঞানপ্রেমী তরুণ গঠন করে 'জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সায়েন্স ক্লাব' (জেইউএসসি) নামে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন। বিজ্ঞানের ফেরিওয়ালা জাবি সায়েন্স ক্লাব এ বছর ১৭ আগস্ট গৌরবময় পথচলার দুই দশক পূর্তি উদ্যাপন করেছে।
প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কামাল পাশা, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুলস্নাহ আল মাসুদ, রুহুল আমীন, দীপা এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মিজানুর রহমান আকাশ অন্যতম। এর আগে 'ইয়াং ফিজিসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন' গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তখন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইরফান কাদের চৌধুরীর পরামর্শ দেন ডিপার্টমেন্টকেন্দ্রিক কোনো সংগঠনের চেয়ে সব বিভাগের জন্য উন্মুাক্ত বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন থাকলে ভালো হয়। এরপর তৎকালীন 'জাহাঙ্গীরনগর ইয়ং ফিজিসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'র সংগঠকরা বিজ্ঞান ও সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে ক্লাবে ৩১ জন কার্যকরী সদস্যসহ নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ৮৭ জন এবং প্রায় তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। ক্লাবের দীর্ঘ দুই দশকের পথচলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সুনাম পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। ক্লাবটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি তরুণদের আগ্রহ এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে নিরলসভাবে কাজ করছে।
দুই দশক ধরে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ পৌঁছে দিচ্ছে জাবি সায়েন্স ক্লাব। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বিজ্ঞানমুখী কার্যক্রমে গুরুত্বারোপ করে এসেছে সংগঠনটি। বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন তৈরির কাজটি সফলতার সঙ্গে করে চলছে। শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধির জন্য ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব আয়োজন করে আসছে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর আয়োজিত জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড ক্লাবের অন্যতম আয়োজন। গণিতের প্রতি শিক্ষর্থীদের আগ্রহ বাড়াতে এবং গাণিত্যিক সমস্যার সমাধানের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে এই প্রতিযোগিতা। সর্বশেষ, ২০২৩ সালে জাবি বিজ্ঞান ক্লাবের আয়োজিত নবম জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড ও পঞ্চম জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় সারাদেশের প্রায় ২০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
এ ছাড়াও, ক্লাবটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিয়মিতভাবে গবেষণা ও প্রযুক্তি-বিষয়ক সভা ও সেমিনার এবং শিক্ষাসফর আয়োজন করে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাম্প্রতিক উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন বিষয়ে জানতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ লেখার জন্য জাবি সায়েন্স ক্লাব ত্রৈমাসিক 'নিউক্লিয়াস' এবং বার্ষিক 'অরবিটাল' নামে দুটি প্রকাশনা প্রকাশ করে থাকে।
গত দুই দশকে জাবি সায়েন্স ক্লাব পরিবারের সদস্যরা দেশ-বিদেশে নানা ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছেন। তাদের অনন্য অর্জন এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে সাফল্য ক্লাবের গৌরবকে আরও উজ্জ্বল করেছে। সাবেক সদস্যদের সাফল্য প্রমাণ করে ক্লাবটি শুধু স্থানীয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেধাবীদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের দুই দশকের সাফল্য উদযাপন দেশের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। ক্লাবটির এই যাত্রা আমাদের সামনে এক অনন্য উদাহরণ, যা বর্তমান প্রজন্মকে প্রেরণা যোগাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি এই নিবেদিতপ্রাণ প্রচেষ্টা আগামী দিনে আরও নতুন নতুন সাফল্যের দিক উন্মুচন করবে বলেই আশা করা যায়।
জাবি সায়েন্স ক্লাবের বর্তমান সভাপতি তারেক মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন বলেন, ঈড়সসরঃঃবফ :ড় ঊীঢ়ষড়ৎরহম :যব ঞৎঁঃয স্স্নোগানকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দেশের প্রথম ক্যাম্পাসভিত্তিক বিজ্ঞানসেবী সংগঠন জাবি সায়েন্স ক্লাব এ বছর দুই দশকে পদার্পণ করেছে। ক্লাবের এই দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় সাবেক, বর্তমান সদস্য, উপদেষ্টামন্ডলী এবং সব শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এই দীর্ঘ সময় দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করেছে জাবি সায়েন্স ক্লাব। ক্লাবের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটবে -এই প্রত্যাশা করছি।
\হপ্রযুক্তির প্রসারে সার্বজনীন একটা পস্ন্যাটফর্মে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই ভাবনা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞনভিত্তিক সংগঠন হিসেবে জাবি সায়েন্স ক্লাব যাত্রা শুরু করে।
মাত্র ৫ জনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করলেও শুরুর দিকে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিলো না। মিটিং গুলোতে দেখা যেতো ১০-১৫জন উপস্থিত থাকত। ওই সময় মূলত