শিল্পোন্নত বিশ্বে ইলেকট্রিক যানের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু এমন গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাটারির কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করা সহজ নয়। ফলে জার্মানিতে ব্যাটারি রিসাইকিংয়ের বিশাল উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
জরুরি অবস্থায় বিদু্যৎচালিত যানের ব্যাটারি যত দ্রম্নত সম্ভব পানিতে ফেলে দেওয়া উচিত। সেই ব্যাটারি রিসাইকেল করতে গেলে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিশাল বিধি মেনে চলতে হয়। এমন গুদাম কয়েক মিনিটের মধ্যে ফেনায় ডুবিয়ে দিতে হবে। ইলেকট্রিক ভেহিকেল ব্যাটারি অত্যন্ত দাহ্য এবং বিস্ফোরক।
রিসাইকেলের প্রথম কোম্পানি বিশাল মুনাফা করেছে। কারণ, ব্যাটারির মধ্যে কোবাল্ট ও নিকেলের মতো মূল্যবান ধাতু রয়েছে। ইএমআর কোম্পানির প্রতিনিধি মুরাত বায়রামের মতে, '২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানির রাজপথে দেড় কোটি ইলেকট্রিক যান নামবে বলে আমরা মনে করি। অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে ২০৩০ সাল আগামী পরশুর মতো।'
কয়েক মাস আগে ইউরোপে ইলেকট্রিক যানের সবচেয়ে বড় রিসাইকিং কারখানা খোলা হয়েছে। মুরাত বলেন, 'আমরা জার্মানির সবচেয়ে দামি ফ্যাক্টরি ফোরের একটির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছি। নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেই অর্থ সাশ্রয় হয় না। এই ফোর সম্পূর্ণ পানি-নিরোধক, কয়েক মিটার পুরু এবং সেখানে এমন সেন্সর রয়েছে, যে কোনো পদার্থ মাটিতে প্রবেশ করলেই যা অবিলম্বে আমাদের জানিয়ে দেবে।'
এসব ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গাড়ির কারখানা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু খুব কম ব্যাটারিই এখানে আসে। রিসাইকিং পস্ন্যান্টের প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার লার্স মুন্ডিন বলেন, 'আমরা মূলত নতুন প্রযুক্তি পরীা ও কার্যকর করি এবং নিজেরাই ব্যবহার করি। আমরা শিাকে যতটা সম্ভব গুরুত্ব দেই? পুরনো ব্যাটারি বেরিয়ে এলে এবং আচমকা বেশি পরিমাণে এসে পড়লে প্রস্তুত থাকতে চাই।'
কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম প্রজন্মের ইলেকট্রিক যানগুলোর ব্যাটারি বাতিল হওয়ার পরই বিশাল পরিমাণে রিসাইকিং শুরু হবে। তখন বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তথাকথিত 'বস্নাক মাস' ও সেগুলোর মধ্যকার ধাতু উদ্ধার করার উদ্যোগ নেবে। লার্স মুন্ডিন বলেন, 'সবচেয়ে দামি ধাতু হিসেবে ৯৫ শতাংশ নিকেল, সেই সঙ্গে অবশ্যই অ্যালুমিনিয়াম ও তামা উদ্ধার করাই আমাদের ল্য।'
গোটা বিশ্ব ইলেকট্রিক যানের দিকে ঝুঁকছে এবং ব্যাটারির জন্য এই ধাতুগুলোর চাহিদা উলেস্নখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যাবে। রিসাইকিং করতে পারলে প্রস্তুতকারকদের এমন খনির ওপর নির্ভরতা কমবে, যেখানে কাজের পরিবেশ খুবই খারাপ। মুরাত বায়রাম মনে করেন, কোম্পানিগুলো এখনো কাঁচামালের ক্ষেত্রে অন্য দেশের ওপর অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরশীল।
জার্মানির রিসাইকিং পস্ন্যান্টে উদ্ধার হওয়া উপাদান ইউরোপের উত্তরে এক পাইলট পস্নান্টে জমা হয়। ব্যাটারি শ্রেডিং করে এক রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে 'বস্নাক মাস' নামে পরিচিত অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়? একেই রিসাইকিং শিল্পের কালো সোনা বলা হয়। সেই মিশ্রণ থেকে নিকেল, ম্যাংগানিজ ও কোবল্টের সবুজ এক তাল বার করা যায়, যা সেভাবেই নতুন ব্যাটারিতে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু সেটির মূল্য কি ন্যায্য? লার্স মুন্ডিন বলেন, 'এই মুহূর্তে সঠিক মূল্য বলা কঠিন, কারণ এই ব্যবসা এখনো গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ব বাজারে মূল্য অনেক ওঠানামা করে। ফলে হিসাব করা কঠিন।'
কাজ একবার শুরু হলে প্রক্রিয়ার একটা বড় অংশ স্বয়ংক্রিয় করে তোলা হবে। কিন্তু রিসাইকিং-এর হার বাড়াতে ব্যাটারাগুলো আরও উন্নত করা প্রয়োজন। মুরাত বায়রাম বলেন, 'গাড়ির ব্যাটারির প্রসঙ্গে বলতে হয়, আমরা স্পষ্ট দেখছি যে, জার্মান গাড়ি কোম্পানিগুলো আরও বেশি করে রিসাইকিং-এর কথা ভেবে পণ্য ডিজাইন করছে। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছে, কারণ তারাও আমাদের মতোই কাঁচামাল পেতে আগ্রহী। তারাও চক্র পূর্ণ করতে চায়।'
অ্যালুমিনিয়ামের মতো উচ্চ রিসাইকিং হার নিশ্চিত করতে পারলে আরেকটি সুবিধাও পাওয়া যাবে। শেষ পর্যন্ত জলবায়ুর জন্যও এই উদ্যোগ ইতিবাচক হবে। এই রিসাইকিং পস্ন্যান্টের পরিচালনকারীরা কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছেন। এই উদ্যোগ নিরাপদ হবে বলেই তারা আশা করছেন।