কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের সব কাজ সহজ করে দিয়েছে। এটি ধীরে ধীরে আমাদের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে। জ্বালানির ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে। জার্মানিতে শীতের সময় ঘর-অফিস গরম রাখার জন্য অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুলও। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এখানকার কয়েকটি ভবনে জ্বালানি সাশ্রয় এবং এর ব্যয় কমানো সম্ভব হচ্ছে। বার্লিনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অভিনব হিটিং ব্যবস্থা চালু আছে। ছাদে আছে সোলার প্যানেল। আরও আছে পাইপ, যেগুলো বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আসা গরম বাতাসে পূর্ণ। আছে এমন এক ব্যবস্থা, যা মাটির ১০০ মিটার নিচ থেকে 'জিওথার্মাল এনার্জি' পাম্প করে ওপরে তোলে। এটি একটি টেকসই ব্যবস্থা- তবে অনেক জটিল। জটিল এ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সফটওয়্যার। 'গ্রিন ফিউশন এআই এনার্জি ম্যানেজমেন্ট'-এর পাউল হোক বলেন, 'জ্বালানি কতখানি ব্যবহৃত হবে, তা আগে থেকে অনুমান করা হয়। এছাড়া কখন জ্বালানির ব্যবহার হচ্ছে এবং কীভাবে সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর উপায়ে জ্বালানি ব্যবহার করা যায়, তা-ও এখানে বিবেচনা করা হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি এক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। গরম পানিতে গোসল করেও এভাবে খরচ ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো যায়।'
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই স্মার্ট ব্যবস্থা আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে জ্বালানির সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেয়। পাউল হোক বলেন, 'বর্তমানে যে হিটিং ব্যবস্থা আছে, সেটি বাইরের বর্তমান তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কাজ করে। ভবিষ্যতের তাপমাত্রা জানার উপায় এ ব্যবস্থায় নেই। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সিস্টেম মানুষকে ভবিষ্যৎ দেখার
সুযোগ করে দেয়। যখন সূর্যের আলো থাকবে, তখন তা দিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করে রাখা যাবে। যখন আলো থাকবে না, তখন ওই বিদু্যৎ ব্যবহার করা যাবে। ফলে কাজ থেকে ঘরে ফিরে গরম পানি দিয়েও গোসল করা সম্ভব হবে।' ফ্রাঙ্কফুর্টে একটি ডাটা সেন্টারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিদু্যৎ সাশ্রয়ে সহায়তা করছে। সেখানকার হাজার হাজার কম্পিউটার অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সেগুলো নিয়মিত ঠান্ডা করার প্রয়োজন হয়। সেজন্য নিচ থেকে পানি পাম্প করে ওপরে সার্ভার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। আরও বেশি গরম হলে পানি ছাদ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আবার বেসমেন্টে পানি নিয়ে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হয়। এতে অনেক জ্বালানি খরচ হয়।
এআই প্রযুক্তি সরবরাহকারী টোমাস ভেবার বলেন, 'যখন বাইরে অনেক ঠান্ডা থাকে তখন শুধু কুলিং টাওয়ার নয়, পাম্পও কম কাজ করে অর্থাৎ একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল।
আমাদের এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা এ বিষয়টি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বয় করে। ফলে জ্বালানি কম খরচ করে ডাটা সেন্টারের কম্পিউটার ঠিক রাখা যায়।' কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বার্লিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কে যখন প্রয়োজন হয়, তখন হিটিং ব্যবস্থা চালু হয়। বিষয়টি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে। 'উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন' (ডাবিস্নউআইএসটিএ) বিজনেস লোকেশনসের লুকাস বেকার বলেন, 'দুই বছর আগেও বছর শেষে হাতে মিটার রিডিং পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোন ভবনে কত জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে, তা জানা সম্ভব ছিল না। এছাড়া জ্বালানি কখ ন বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, তা বছর শেষে পাওয়া রিডিংয়ে দেখা যায় না।' কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে যখন যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, শুধু তখন সেখানে গরমের ব্যবস্থা করা যায়।
লুকাস বেকার বলেন, 'এখন জনগণ তার নির্ধারিত কাজের জায়গা কখন গরম করতে হবে, তা ঠিক করে দিতে পারছেন। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবস্থার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে।' কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবস্থার কারণে হিটিং ব্যবস্থার কাজ কমে যায়। এতে জ্বালানির সাশ্রয় হয় অনেক বেশি। এই ব্যবস্থার উদ্ভাবকরা খরচের বিষয়টি প্রকাশ করতে চাননি। তবে তাদের দাবি, ব্যবহারের মাত্র এক বছরের মধ্যেই খরচ ওঠে আসবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জ্বালানি খরচ কতটুকু সাশ্রয় করবে- তা দেখার জন্য আমরাও তৈরি হয়ে রইলাম। হয়তো আমরাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে একদিন সবকিছু জয় করতে পারব এবং সেই সময়টি আর দূরে নেই।