দুধ শিশুর বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য পুষ্টিকর খাদ্যসমূহের অন্যতম। পুষ্টিগুণের বিবেচনায় এটি আদর্শ খাদ্য। দুধে বিদ্যমান খাদ্যবস্তুর পরিমাণ প্রাণী থেকে প্রাণীতে ভিন্নতর। দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদের প্রভাষক ডা. জামিনুর রহমানের মতামত তুলে এনেছেন শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী আবু হুরায়রা।
দুধ হচ্ছে স্ত্রী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্তন্যপায়ী গ্রন্থি দ্বারা নিঃসৃত তরল, যা জন্মের পরপরই শুরু হওয়া সময়ের জন্য তাদের বাচ্চাদের পুষ্টি দেয়। গৃহপালিত পশুর দুধ মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস। প্রায় ৮৭ শতাংশ পানি এবং ১৩ শতাংশ কঠিন উপাদানের সমাহার দুধ একটি সর্বজনস্বীকৃত স্বয়ংসম্পূর্ণ খাদ্য।
দুধের চর্বি অংশে চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন এডিই থাকে। চর্বি ছাড়া অন্যান্য কঠিন পদার্থের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন (বি ও সি) এবং খনিজ। দুধের এই পুষ্টিগুলো এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে নিখুঁত খাবারে পরিণত করতে সাহায্য করেছে।
দুগ্ধজাত পণ্যের উচ্চমানের প্রোটিন মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। ক্যাসিন, একটি প্রোটিন যা শুধুমাত্র দুধে পাওয়া যায়। এতে সব প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এটি দুধের মোট প্রোটিনের ৮২ শতাংশের জন্য দায়ী এবং অন্যান্য খাবারের প্রোটিন মূল্যায়নের জন্য একটি মান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শরীরের টিসু্য তৈরি, মেরামত এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করতে প্রোটিনের প্রয়োজন হয়, যা রক্তে সঞ্চালিত হয় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
দুধে পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম উলেস্নখযোগ্য। ক্যালসিয়াম শরীর দ্বারা সহজেই শোষিত হয়। ফসফরাস ক্যালসিয়াম শোষণ এবং ব্যবহারে ভূমিকা পালন করে। হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের সঠিক অনুপাতে ফসফরাস প্রয়োজন। দুধ হাড়ের মধ্যে পাওয়া প্রায় একই অনুপাতে এই দুটি খনিজ সরবরাহ করে। দুধ রিবোফ্লাভিনের (ভিটামিন বি-২) একটি উলেস্নখযোগ্য উৎস, যা স্বাস্থ্যকর ত্বক, চোখ, সেই সাথে ভিটামিন এ এবং ডি উন্নীত করতে সহায়তা করে।
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম, কিশোর-কিশোরীদের জন্য ১৩০০ মিলিগ্রাম, ছোট শিশুদের জন্য (৫০০-৮০০) মিলিগ্রাম এবং ৫১ বছরের বেশি বয়সি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। খাবারে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ছাড়া পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া কঠিন। খাদ্য সরবরাহে পাওয়া ক্যালসিয়ামের প্রায় ৭৩ শতাংশ দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য দ্বারা সরবরাহ করা হয়।