জীবন নিয়ে আমাদের কতই না চিন্তাভাবনা যেমন- ছেলেটি একদম তার বাবার মতো হয়েছে, মেয়েটির বুদ্ধিমত্তা তার মায়ের মতো- এমন কথা আমরা প্রায়ই বলতে শুনি, বাস্তবে এমনটি দেখেও থাকি। কিন্তু কেমন করে বাবা-মার বৈশিষ্ট্য সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়? এই প্রশ্নের জবাব বিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তার নাম বংশগতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এসব বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত হয় কিছু বস্তুর মাধ্যমে যেগুলোকে বলে বংশগতি বস্তু। বংশগতি বস্তুর প্রধান উপাদান হলো ক্রোমোজম। এই ক্রোমোজম নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করা যাক। মানুষের দেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষের একটি কেন্দ্র থাকে যার নাম নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে ক্রোমোজম, জোড়ায় জোড়ায়। ক্রোমোজম হলো কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতর অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতাসম্পন্ন রং ধারণকারী নিউক্লিও প্রোটিন নিয়ে গঠিত সূত্রাকৃতির ক্ষুদ্রাজ্ঞ, যা বংশগতির প্রভৃতি কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্রোমোজম আবার নিউক্লিয়াসের বাইরে সাইটোপস্নাজমেও থাকতে পারে। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসে প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে নির্দিষ্টসংখ্যক ক্রোমোজম থাকে। আদিকোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকায় এতে কোনো সুগঠিত ক্রোমোজম থাকে না। ক্রোমোজমকে একমাত্র কোষ বিভাজনের মেটাফেজ ধাপে মাইক্রোসফটে দেখা যায়। টেলোমিয়ার নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, টেলোমিয়ারকে নিয়ন্ত্রণ করে জীবের বয়স একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির রাখা যাবে। টেলোমিয়ার ক্রোমোজমের উভয় প্রান্তে অবস্থিত একমাত্র অঞ্চল যেখানে ডিএনএ একসূত্রক। স্বাভাবিক কোষে টেলোমিয়ার ছোট হয় প্রত্যেক কোষ বিভাজনে এবং টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য যখন ছোট হয়ে চরম সীমায় পৌঁছায় তখন কোষের মৃতু্য হয়। এই টেলোমিয়ার টেলোমেরাস এনজাইম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুব আশাবাদী, হয়তো এরই কল্যাণে আমরা অদূর ভবিষ্যতে দেহঘড়িকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধতে পারব। এবার ক্রোমোজমের রাসায়নিক গঠন নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলা যাক। ক্রোমোজমের রাসায়নিক উপাদানের ভেতর রয়েছে উঘঅ, জঘঅ, নন হিস্টোন প্রোটিন, অন্যান্য যৌগিক প্রোটিন, লিপিড, এনজাইম এবং বিবিধ আয়ন। এত সময় ধরে শুধু ক্রোমোজমের গঠন নিয়ে বলা হলো, কিন্তু এর কাজ কী তা বলা হয়নি। ক্রোমোজমকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা হয়, কারণ তা জীবের বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে, কোষ বিভাজনে সহায়তা করে, জিন অনুধারণ করে। এ জন্যই ক্রোমোজমকে জীবনের মূল ভিত্তি বলা হয়।
আবার জীবনের রহস্য কী? যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে এক কথায় বলে দেয়া যায় ডিএনএ। জীবের সব বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রিত হয় এই ডিএনএ'র মাধ্যমে। আদি কোষগুলোয় কোনো জেনেটিক তথ্য ছিল না, অর্থাৎ ছিল না কোনো ডিএনএ এবং আরএনএ যা আজকের দিনের কোষগুলোর একটি অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। আমরা জানি, সব জীবিত বস্তু সে উদ্ভিদ হোক আর প্রাণী হোক, তার প্রকৃতি নির্দেশিত হয় বংশগতির বাহক জিনের কতগুলো জটিল রাসায়নিক অণুর মাধ্যমে। জিনের এই রাসায়নিক অণুগুলো হলো ডিএনএ এবং আরএনএ। এই দুটির সমন্বিত সংযোগে রচিত হয়েছে আমাদের জীবনের নীলনকশা। ডিএনএ হচ্ছে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক এসিড এবং আরএনএ হলো রাইবোনিউক্লিয়িক এসিডের সংক্ষিপ্ত রূপ। প্রতিটি ডিএনএতে থাকে চার ধরনের নাইট্রোজেনাস বেস থাকে।