শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

পানীয়জল শোধনে কার্যকর প্রযুক্তি

পানি এবং বর্জ্য পানি শোধনে একটি সাধারণ বিষয়। মৌসুম, মান এবং পরিবেশগত প্রভাব উৎস জলের মূলধন খরচ এবং পরিচালন ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শোধন জলের ব্যবহার শেষে প্রয়োজনীয় মানের পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তিকে নির্দেশ করে এবং স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ দক্ষতা সাধারণত গৃহীত স্বয়ংক্রিয়তার স্তরকে নির্দেশ করে
তানভীর আমিন
  ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
পানীয়জল শোধনে কার্যকর প্রযুক্তি

পানি শোধন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ব্যবহার শেষে পানিকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এটির গুণমানকে আরও উন্নত করা হয়। অন্তিম ব্যবহারের মধ্যে সম্ভবত পানি পান, শিল্পে পানি সরবরাহ, সেচ, নদীপ্রবাহ রক্ষণাবেক্ষণ, পানিতে বিনোদন বা অন্যান্য অনেক ব্যবহার, যেমন- পানি নিরাপদে পরিবেশে ফিরে আসাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে পারে। পানি শোধন দূষণকারী এবং অবাঞ্ছিত উপাদানগুলো সরায় বা তাদের ঘনত্ব হ্রাস করে যাতে পানি তার পছন্দসই ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। পানি এবং বর্জ্য পানি শোধনে একটি সাধারণ বিষয়। মৌসুম, মান এবং পরিবেশগত প্রভাব উৎস জলের মূলধন খরচ এবং পরিচালন ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শোধন জলের ব্যবহার শেষে প্রয়োজনীয় মানের পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তিকে নির্দেশ করে এবং স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ দক্ষতা সাধারণত গৃহীত স্বয়ংক্রিয়তার স্তরকে নির্দেশ করে।

পানীয়জল শোধনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অপরিশোধিত জল থেকে দূষণকারী উপাদান সরানো যাতে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা যায় যা কোনো প্রতিকূল স্বাস্থ্যের প্রভাবের স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি ছাড়া মানুষের ব্যবহারযোগ্য হয়। পানীয় জল শোধনে যেসব পর্দাথ সরিয়ে ফেলা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাতিল কঠিন বস্তু, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, ভাইরাস, ছত্রাক এবং খনিজ পদার্থ যেমন- আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ।

পানির অপর নাম জীবন হলেও যদি তা দূষিত হয় তাহলে পানিই হতে পারে নানা রোগের কারণ।

ভূগর্ভস্থ পানি বা নদী থেকে যে পানি আহরণ করা হয় তা দুই দফায় পরিশোধনের মাধ্যমে পুরোপুরি দূষণমুক্ত করা হয় ঠিকই তারপরও ঢাকার বাড়িগুলোয় এই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যায় না।

তার কারণ যে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই পানি মানুষের বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা হয় সেখানে লিকেজ বা পুরনো পাইপের কারণে পানি দূষিত হয়ে পড়ে।

এছাড়া বাড়ির ট্যাংকগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায়ও পানি দূষিত হয়ে পড়ার আরেকটি কারণ।

ঢাকাসহ সারা দেশের সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে সম্প্রতি এক জরিপ চালায় বিশ্বব্যাংক।

তাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাসাবাড়িতে যে পানি সরবরাহ হয় সেখানে এই ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ প্রায় ৮২ শতাংশ। তবে এই পানিকে চাইলে ৯টি উপায়ে শতভাগ বিশুদ্ধ করা সম্ভব।

ফুটিয়ে : পানি বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে পুরনো ও কার্যকর পদ্ধতির একটি হলো তা ফুটিয়ে নেওয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, পানি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ধরে ফোটানো হলে এরমধ্যে থাকা জীবাণু, লার্ভাসহ সবই ধ্বংস হয়ে যায়।

তারপর সেই পানি ঠান্ডা করে ছাকনি দিয়ে ছেকে পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন ওয়াটার এইডের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি বিভাগের প্রধান আবদুলস্নাহ আল মুঈদ।

পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পস্নাস্টিকের পাত্রের পরিবর্তে কাচ অথবা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করার কথাও জানান তিনি।

সেই সঙ্গে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন সেই সব পাত্র বা যে গস্নাসে পানি খাওয়া হচ্ছে সেটি যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা।

মিস্টার মুইদ জানান, সেদ্ধ করা পানি বেশিদিন রেখে দিলে তাতে আবারও জীবাণুর আক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

এ কারণে তিনি ফোটানো পানি দুদিনের বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেন।

ফিল্টার : পানি ফোটানোর মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণু দূর করা সম্ভব হলেও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত থাকতে ফিল্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা যেতে পারে।

তা ছাড়া যাদের গ্যাসের সংকট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ফিল্টারে পানি বিশুদ্ধ করাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার মধ্যে অনেক জীবাণুর পাশাপাশি পানির দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম।

বাজারে মূলত দুই ধরনের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার একটি সিরামিক ফিল্টার এবং দ্বিতীয়টি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত রিভার অসমোসিস ফিল্টার।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সিরামিক ফিল্টার ব্যবহার করে থাকে।

তবে আবদুলস্নাহ আল মুঈদের মতে, এই ফিল্টার থেকে আপনি কতটুকু বিশুদ্ধ পানি পাবেন তা নির্ভর করে ফিল্টারটি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় কিনা, তার উপরে।

ক্লোরিন ট্যাবলেট বা বিস্নচিং : পানির জীবাণু ধ্বংস করতে ক্লোরিন বহুল ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক।

যদি পানি ফোটানো বা ফিল্টার করার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে পানি বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি পরিশোধন করা যেতে পারে।

সাধারণত দুর্গম কোথাও ভ্রমণে গেলে অথবা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বা জরুরি কোনো অবস্থায় ট্যাবলেটের মাধ্যমে পানি শোধন করা যেতে পারে।

সাধারণত প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট বা ১০ লিটার পানিতে বিস্নচিং গুলিয়ে রেখে দিলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।

এভাবে পরিশোধিত পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকলেও তা পরিষ্কার স্থানে খোলা রাখলে বা পরিচ্ছন্ন কোনো কাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করলে গন্ধটি বাতাসে মিশে যায় বলে জানান আবদুলস্নাহ আল মুঈদ।

পটাশ বা ফিটকিরি : এক কলসি পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে পানির ভেতরে থাকা ময়লাগুলো তলানিতে স্তর হয়ে জমে।

এ ক্ষেত্রে পাত্রের উপর থেকে শোধিত পানি সংগ্রহ করে তলানির পানি ফেলে দিতে হবে। অথবা পানি ছেকে নিয়ে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন মিস্টার মুঈদ।

সৌর পদ্ধতি : যেসব প্রত্যন্ত স্থানে পরিশোধিত পানির অন্য কোনো উপায় নেই সেখানে প্রাথমিক অবস্থায় সৌর পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করা যেতে পারে।

এ পদ্ধতিতে দূষিত পানিকে জীবাণুমুক্ত করতে কয়েকঘণ্টা তীব্র সূর্যের আলো ও তাপে রেখে দিতে হবে।

এতে পানির সব ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়।

আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি : পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য অতিবেগুনি বিকিরণ কার্যকর একটা পদ্ধতি।

এতে পানির সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়।

বাজারের বেশ কয়েকটি আধুনিক ফিল্টারে এই আল্ট্রাভায়োলেট পিউরিফিকেশন প্রযুক্তি রয়েছে।

তবে ঘোলা পানিতে বা রাসায়নিকযুক্ত পানিতে এই পদ্ধতিটি খুব একটা কার্যকর নয়। তাছাড়া এই উপায়টি কিছুটা ব্যয়বহুলও।

আয়োডিন : এক লিটার পানিতে দুই শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

তবে এই কাজটি শুধু দক্ষ কারও মাধ্যমে করার পরামর্শ দিয়েছেন মিস্টার মুঈদ। কেননা পানি ও আয়োডিনের মাত্রা ঠিক না থাকলে সেই পানি শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে