গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি হলো- পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং ডিজাইন। দিন দিন পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশবান্ধব গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি হতে পারে অন্যতম সমাধান। গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজির ধারণাটিকে প্রায়ই 'টেকসই বিল্ডিং টেকনোলজি' হিসেবে উলেস্নখ করা হয়, যার অর্থ হল বিল্ডিংটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এটি কম শক্তি খরচ করে, চমৎকার ডিজাইন, কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, নির্মল বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি। সমীক্ষা মতে, বিশ্বব্যাপী বিল্ডিং এবং নির্মাণ কার্যক্রমে প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন টন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি এই সংখ্যাটা কমিয়ে আনতে পারে।
শিল্পায়ন এবং নগরায়নের জন্য বিল্ডিং নির্মাণের ফলে প্রতবছর ব্যাপকহারে বেড়ে যাচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা। যার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মানব হুমকি হয়ে উঠছে। তাই গ্রিন বিল্ডিং হতে পারে এর সমাধান। গ্রিন বিল্ডিং হলো- এমন কাঠামো, যাতে নবায়নযোগ্য শক্তি, সবুজায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে তৈরি করা কাঠামো। এ ধরনের ভবন নির্মাণে শক্তি অপচয়ের পরিমাণ কম হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কম হয়। এ ছাড়া ভবনটি এমনভাবে নকশা করা হয়, যাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ভবনের নকশা করার সময় উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম হিসেবে নকশা করা হয়, যাতে আলো-বাতাস সহজে চলাচল করতে পারে। কৃত্রিম শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন না হয়। তাই বিদু্যৎ খরচও কম হয়। আবার পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যা ব্যবহার করা যেতে পারে টয়লেটে। যার ফলে মাটির নিচে ভূগর্বস্থ পানির ওপর চাপ কম পড়বে। ভবন নির্মাণে কাঁচামাল অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে। ভবনে ব্যবহৃত রং, সিমেন্ট যাতে মানব দেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রকৌশলীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। গ্রিন বিল্ডিং প্রকল্পে এমন কাঁচামাল ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং টেকসই হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা সবুজ উপাদান হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম, পস্নাস্টিক, লোহা, লাইমস্টোন, ইট, সিরামিক্স টাইলস, বাঁশ, কাঠ, কাঁচ, বালি ইত্যাদি ব্যবহার করার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। কেননা, এসব উপাদানগুলোকে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। গ্রিন বিল্ডিং প্রকল্পে বিদুৎ চাহিদা মেটাতে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা যেতে পারে, যা বিদুৎ চাহিদার প্রতি চাপ কমাবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং গরম থেকে বাঁচতে সবুজ ছাদ ব্যবহার করা যেতে পারে। ছাদবাগানের মাধ্যমে ছাদে সবুজায়ন করা যেতে পারে।
এরূপ গ্রিন বিল্ডিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কম খরচে এবং সঞ্চয়ী প্রযুক্তি মানুষকে আকৃষ্ট করছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করবে এমন প্রযুক্তি।