মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

প্রিন্টিং প্রেসের প্রচলন প্রযুক্তির অনন্যতা

শেখ একেএম জাকারিয়া
  ০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
প্রিন্টিং প্রেসের প্রচলন প্রযুক্তির অনন্যতা

পনেরো শতকের একটি বিশেষ উদ্ভাবন প্রিন্টিং প্রেস। এর উদ্ভাবন না হলে আমরা হয়তো এখনো বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে অবগত হতে পারতাম না। এমনকি অনেক বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনও আমাদের কাছে পৌঁছাতে কয়েক শতাব্দী লেগে যেত। তাই প্রিন্টিং প্রেসের প্রাচীন কাহিনী সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ জ্ঞান রাখা আবশ্যক। প্রিন্টিং প্রেস প্রযুক্তি বিজ্ঞানের এমন একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি যা কোনো কাগজ বা কাপড়ের পৃষ্ঠে চাপ প্রয়োগ করে কালি বা রঙের একটি আস্তরণ তৈরি করে। এই আস্তরণ হতে পারে কোনো লেখা কিংবা কোনো নকশা অথবা কোনো চিত্র। অদূর অতীতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের দেশেও যে কোনো লেখা বা চিত্র প্রিন্ট করা হতো। তবে এখন আর সেই পদ্ধতির প্রয়োগ নেই। একেবারে আধুনিক লেজার প্রিন্টার বা অপটিক্যাল প্রিন্টারের প্রয়োগ সর্বত্র লক্ষ্য করা যায়।

প্রিন্টিং প্রেসের উদ্ভাবক হিসেবে জোহানেস গুটেনবার্গকে মানা হয়। তিনি ১৪৪০ সালে (পনেরো শতকের দিকে) প্রিন্টিং প্রেস উদ্ভাবন করেন। উদ্ভাবক জোহানেস গুটেনবার্গ কর্মজীবনে একজন স্যাকরা ছিলেন এবং জার্মানে বসবাস করতেন। তবে এটা সত্য প্রিন্টিংয়ের পূর্ববৃত্তান্ত প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেস উদ্ভাবনের ৮০০ থেকে ৯০০ বছর আগে অর্থাৎ ষষ্ঠ শতকে চীন দেশে ট্যাং রাজবংশের আমলে উদ্ভূত অনেক উদ্ভাবনের মধ্যে একটি হলো উডবস্নক প্রিন্টিং। এ পদ্ধতিতে কাঠের তৈরি কোনো বস্নকে কালি লাগিয়ে কোনো কাগজের পৃষ্ঠে নকশা বা লেখা প্রিন্ট করা হতো। উডবস্নক প্রিন্টিং পদ্ধতিতে মুদ্রিত প্রথম বই উরধসড়হফ ঝঁঃৎধ (৮৬৮ খ্রি.)।

অষ্টম শতকে কোরিয়া-জাপানেও এই পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। ১০৪১ খ্রিষ্টাব্দে চীনা মুদ্রক 'বি শেঙ' মাটির তৈরি চলন্ত মুদ্রণ ব্যবস্থার উদ্ভাবন করেন। ১২৯৮ খ্রিষ্টাব্দে আরেক চীনা মুদ্রক ওয়াং ঝেন প্রিন্টিংয়ের ম্যান উন্নয়নের জন্য আরও শক্তিধর কাঠের মুদ্রণযন্ত্রের উদ্ভাবন করেন। এরপর এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে চীনে আস্তে আস্তে বিকাশ ঘটতে থাকে প্রিন্টিং পদ্ধতির। তাছাড়া পনেরো শতকে জাইলোগ্রাফি নামে আরেকটি প্রিন্টিং পদ্ধতির ব্যবহার ছিল ইউরোপে। এটিও কিছুটা চাইনিজদের ব্যবহৃত উডবস্নক পদ্ধতির মতোই ছিল। তবে এ সবকিছুর অবসান ঘটে গুটেনবার্গের উদ্ভাবনের মাধ্যমে। গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেসে প্রথম তেলভিত্তিক কালি ব্যবহার করা হয়, যা আগে ব্যবহৃত পানিভিত্তিক কালির তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী ছিল। এ মেশিনের টাইপিংয়ের অংশটুকু টিন, সিসা এবং এন্টিমনির সমন্বয়ে তৈরি বিধায় অন্য মেশিনের তুলনায় এর টাইপিং বেশি পোক্ত হতো। গুটেনবার্গ ১৪৫৫ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি, দীর্ঘ এক বছর যাচাই-বাছাই শেষে তার মেশিনের দ্বারা প্রথমবারের মতো বাইবেলের ১৮০ কপি প্রিন্ট করেন। মোটকথা, আগের চেয়ে উন্নত ও দ্রম্নত প্রিন্টিংয়ে যন্ত্রটি ছিল অনেকটাই এগিয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে