ফেসবুকে আপনার নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট দেখলে সাবধান হন। দুর্বৃত্তরা প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতে ব্যবহারকারীর নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলছে। সম্প্রতি তথ্য পরিচয় চুরি করার নতুন একটি কৌশল (স্ক্যাম) ফেসবুকে ছড়িয়েছে। প্রতারণার এই কৌশলকে বলা হচ্ছে 'অ্যাকাউন্ট ক্লোনিং'। ফেসবুক ক্লোনিংয়ে ব্যবহারকারীর নাম ও প্রোফাইলের ছবি কপি বা নকল করে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খোলে দুর্বৃত্তরা। ওই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আসল অ্যাকাউন্টের পার্থক্য সহজে ধরা যায় না।
অ্যাকাউন্ট তৈরির পর ব্যবহারকারীর ছদ্মবেশে বন্ধু ও পরিবারের লোকজনকে বন্ধু হওয়ার আমন্ত্রণ (ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট) জানায়। এমনকি ফেসবুকে চ্যাটও শুরু করে। একপর্যায়ে অর্থ চেয়ে বসে। এমনকি ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগের সময় বিভিন্ন লিংক শেয়ার করে অন্যদের সঙ্গে তা শেয়ার করতে বলে। এভাবে একজনের প্রোফাইল থেকে আরেক প্রোফাইলে এই স্ক্যাম ছড়ায়। ফেসবুক যোগাযোগে নানা রকম প্রলোভন দেখানো হয়।
যুক্তরাজ্যের সানডে এক্সপ্রেসের এক খবরে বলা হয়েছে, ফেসবুকে সম্প্রতি এ ধরনের স্ক্যাম বেড়ে গেছে। এর মাধ্যমে ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের লটারি জেতার খবর প্রচার করার অনুরোধ অনেকের কাছে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে যারা এ ধরনের প্রতারণার আশঙ্কা করছেন, তারা অবশ্যই ফেসবুক প্রোফাইলটি আসল কিনা, তা যাচাই করে দেখবেন। কারও বন্ধু হয়ে থাকা অবস্থায় আবার তার অ্যাকাউন্ট থেকে আবারও অনুরোধ পেলে সেটি আসল কিনা, তা যোগাযোগ করে জেনে নিন।
ফেসবুকে যা শেয়ার করবেন না :যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের কিছু নিয়মনীতি জেনে রাখা কর্তব্য। এতে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেমন সুরক্ষিত থাকে, তেমনি দুর্বৃত্তদের কুনজর থেকে নিরাপদ থাকা যায়। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা ফেসবুকে নিরাপদ থাকার পাঁচটি নিয়মের কথা বলেছেন। ফেসবুকে যোগাযোগ ও শেয়ার করার আগে এগুলো মনে রাখা উচিত।
১. ফেসবুকে নয়, বাড়ির ঠিকানা
ফেসবুকে বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বিপদ ডেকে আনার কোনো মানে হয়? ফেসবুক বন্ধু তালিকায় সবাই যে প্রকৃত বন্ধু, তা কিন্তু নয়। অনেক অপরিচিত ও আগন্তুকের কাছে বাড়ির ঠিকানা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে।
২. পাসওয়ার্ড থাকুক নিজের কাছেই
অবিশ্বাস্য মনে হলেও অনেকে ফেসবুকে পাসওয়ার্ড বিনিময় করেন। হয়ত কাছের বন্ধু বা ব্যক্তিগত বার্তা আদান-প্রদান করার সময় পাসওয়ার্ড লিখে বিনিময় করেন। কিন্তু এভাবে পাসওয়ার্ড বিনিময় করা নিরাপদ নয়। বন্ধু কখন শত্রম্ন হয়, কে জানে! এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলাপচারিতায় পাসওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিময় করাটা ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
৩. অসঙ্গত ছবি শেয়ারে আসে বিপদ
ফেসবুকে কাউকে হেয় করে ছবি বা মন্তব্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের বা পারিবারিক অসঙ্গত ছবিও সেখানে দেবেন না। এ ছাড়া শেয়ার করার সময় কোনো অসঙ্গত ছবি শেয়ার করা হচ্ছে কিনা, তা খেয়াল রাখুন। কারণ, আপনার ফেসবুকে শেয়ার করা অসঙ্গত ছবিগুলো আপনার গুরুত্বপূর্ণ কন্টাক্ট, সহকর্মী ও চাকরিদাতার নজরে তো আসতেই পারে। অযথা অসঙ্গত ছবি শেয়ার করে ঝামেলায় কেন জড়াবেন?
৪. গোপন রাখুন বর্তমান অবস্থান ও সম্পর্ক
আপনি কী একা? অনেকেই এটা খোঁজ করে আপনার ওপর নজরদারি করতে পারে। কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন- এসব তথ্য এবং আপনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানা থাকলে দুর্বৃত্তদের পক্ষে আপনার ওপর নজরদারি করা সহজ হতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্য যতটা সম্ভব কম শেয়ার করুন।
৫. জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান গোপন রাখুন
আপনার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থানের মতো ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ফেসবুকে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানা সহজ হয়। সাইবার দুর্বৃত্তদের কুনজর থেকে বাঁচতে একটু সতর্কতা আপনাকে একধাপ এগিয়ে রাখবে।