উষ্ণতা বৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রাণীদের অভিযোজন শক্তি
প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
সমুদ্র জলে খাদ্য পিরামিডের সর্বনিম্ন স্তরে আছে পস্ন্যাঙ্কটন জাতীয় ক্ষুদ্র জীব, যারা অন্য জলজ প্রাণীদের আহার্য। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পস্ন্যাঙ্কটনের সংখ্যা দ্রম্নত কমছে। অ্যান্টার্কটিকায় এমন বহু সামুদ্রিক প্রাণী ধীরে ধীরে অপসৃত হচ্ছে, যারা ওখানকার পেঙ্গুইনদের মুখ্য খাদ্য। ফলে নানা প্রজাতির পেঙ্গুইনের সংখ্যা কমছে। সুমেরু অঞ্চলের সমগ্র বাস্তুতন্ত্রই আজ বিপন্ন। খাদ্যাভাবে মেরুভালস্নুকদের ওজন এতটাই অস্বাভাবিক হারে কমছে যে, এরপর তাদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় আজ তারা শীর্ষে।
বরফগলা পানি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলবর্তী ও দ্বীপ অঞ্চলে। লবণাক্ত জলের পরিমাণ বাড়ছে, মুখ্য বৃষ্টিপাত ঘটছে মৌসুমি বাতাস চলে যাওয়ার পরে। এর ফলে যে সার্বিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তাতে সেখানকার বাঘ ও হরিণের (বার্কিং ডিয়ার) মতো অনেক প্রাণী আজ অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে প্রাণী দেহের বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। যেমন- বাসা বাঁধা আর মিলনের চিরাচরিত অভ্যেস। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে মাছ, কচ্ছপ, পরিযায়ী পাখিদের চলাচলের পরও।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, উষ্ণতা বৃদ্ধির এ বর্তমান ধারা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক চক্রেরই অন্তর্গত। উষ্ণ ও শীতল যুগের পর্যায়ক্রমিক আবর্তন পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। একুশ শতকের শেষে উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ নাকি হবে ২-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে পার্বত্য হিমবাহ ও মেরু অঞ্চলের বরফ আরও গলছে। এতে ডুবে যেতে থাকবে বেশকিছু উপকূলবর্তী অঞ্চল।
বাংলাদেশেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপ থেকে গত এক দশকে প্রায় দশ হাজার মানুষ কেবল এই কারণে ভিটে ত্যাগ করেছেন। অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলেও এ দৃশ্য মেলে। একদিক থেকে দেখলে প্রাকৃতিক ক্রমপরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়াই জৈব বিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। যা সৃষ্টি করেছে এই বিপুল জৈব ঐশ্বর্য। সাম্প্রতিক সমস্যা কিন্তু অন্যত্র।
উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক কারণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মানুষের অবদান। ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা জলবায়ুর পরিবর্তনের ধারা এখন এতটাই দ্রম্নত, তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না প্রাণীদের অভিযোজন শক্তি। অরণ্যচ্ছেদন, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্য- এই প্রতিটি ঘটনার পেছনে আছে মানুষের ক্রিয়াকলাপ। এ নিয়ে রাজনৈতিক বাগ্বিতন্ডা যত চলেছে, সমাধানের লক্ষ্যে ততটা এগুনো যায়নি। মনুষ্যত্বের প্রাণীদের এ দুরবস্থা নিয়ে মানুষের উদাসীনতা বুমেরাং হয়ে তাদেরই আবার অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করাবে না তো?
মাঝেমধ্যেই নানা সমীক্ষার মাধ্যমে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অদূর ভবিষ্যতের যে ভয়াল চিত্র তুলে ধরেন, তা যদি যথাযথ গুরুত্বসহকারে বিচার করে দ্রম্নত সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে চরম বিপদ থেকে রেহাই মিলবে না।