ন্যানো টেকনোলজির বদৌলতে বিজ্ঞান এখন এমন সব উদ্ভাবন মানুষকে উপহার দিচ্ছে তা ভবিষ্যৎ জ্ঞানের পরিধিকে যে গভীরতর পর্যায়ে নিয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ন্যানোটেকের মাধ্যমে আবিষ্কৃত ওয়্যারট্যাপ সে রকমই একটি আবিষ্কার।
আমরা জানি জীবের অন্যতম কেন্দ্রীয় সংগঠন হচ্ছে কোষ। কোষের খবর যত ভালো জানা সম্ভব হবে আমরা তত জীবকে ভালোভাবে বুঝতে পারব। এ বোঝাটা বা জ্ঞান শুধু জীব সম্পর্কে জানতেই আমাদের সাহায্য করবে তা নয়। পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যা মানে জীবের জটিল রোগগুলো থেকে দেবে আমাদের সমাধানের পথ। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ন্যানো 'ওয়্যারট্যাপ' নামে ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর তৈরি করেছেন তা আসলে বিজ্ঞানের বদৌলতে সুন্দর ভবিষ্যতেরই আরেক নাম। সম্প্রতি বিজ্ঞান পত্রিকা ন্যাচারের মাধ্যমে জানা গেছে যে বিজ্ঞানীরা ন্যানো 'ওয়্যারট্যাপ' নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। গবেষকদের মাধ্যমে আগেই জানা গেছে, এ ন্যানো 'ওয়্যারট্যাপ' জীবিত কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং রিয়েল টাইমে কোষের কার্যক্রম মনিটর করতে পারে। কোষের বায়োলজিক্যাল ফাংশনগুলো 'শুনতে' পারে এ ওয়্যারট্যাপ।
জীবদেহের গঠন ও কাজের একক কোষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে এ বিশেষ ধরনের ন্যানো প্রযুক্তির কল্যাণে। ওয়ারট্যাপের মেমোরিতে থাকা তথ্য বা ওয়ারট্যাপ থেকে ধারণকৃত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারে কোষের একটি ভার্চুয়াল পরিবেশ তৈরি সম্ভব হবে। এভাবে কোষীয় পর্যায়ে জীবদেহকে দেখতে পারার বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে আরো সহজতর করবে। কোষের কার্যক্রমের ব্যাঘাতের কারণেই জীবদেহের মারাত্মক সব রোগ হয়ে থাকে। তাই কোষের কার্যক্রমের অস্বাভাবিকতা আবিষ্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ ন্যানো ওয়ারট্যাপ। পাশাপাশি অনেক কল্পবিজ্ঞানী লেখক এবং ভিডিও গেম নির্মাতা প্রযুক্তিটির বেশ প্রশংসা করেছেন। তারা বলছেন শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক ভিডিওচিত্র ও গেমস নির্মাণে এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যাবে।
ন্যানো ওয়ারট্যাপের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে কম্পিউটারের মাধ্যমে কোষের একটি ভার্চুয়াল ফিল্ম তৈরি করতে আগ্রহী। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ ভার্চুয়াল ফিল্ম বিনোদনের মাধ্যমে কোষীয় কার্যক্রম বুঝতে সহায়ক হবে। তারা আরও জানান, এ ন্যানো ওয়ারট্যাপ প্রযুক্তির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে এ প্রযুক্তির ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলতে গেলে একেবারেই নেই। পাশাপাশি এটি ভবিষ্যতে বাইরে থেকে রিমোটের মাধ্যমে কোষের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারবে। অনেকটা এ রকম যে মহাকাশে মহাকাশযানের মতো শরীরের মধ্যে ন্যানো ওয়ারট্যাপ ভ্রমণ করবে। এ ভ্রমণ কোষের বাইরে থেকে কোষের ত্রম্নটি সমাধানেও কাজে লাগানো যাবে। তবে একটি বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো ভাবনার মধ্যে রয়েছেন। সেটি হচ্ছে সাইটোপস্নাজমে এ ন্যানো ওয়ারট্যাপ ভ্রমণ করতে পারলেও নিউক্লিয়াসের মধ্যে নিউক্লিওপস্নাজমে এটি কীরূপ ভ্রমণ করতে পারবে তা দেখার বিষয়। কারণ কোষের অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা হচ্ছে নিউক্লিওপস্নাজম।
এভাবে ন্যানো ওয়ারট্যাপ জীববৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী অর্জন। এ অর্জনকে মানুষের কল্যাণে লাগানোই হচ্ছে মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।