ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বছর জুড়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীন এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্প। এর মধ্যে দিয়েই সুগম হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ। তথ্য ও সেবাপ্রাপ্তি, লেনদেন ও সরকার ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় এ প্রকল্পের অধীনে। প্রযুক্তিনির্ভর সেবা উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ এটুআই এবং এর উদ্যোগসমূহ বছরজুড়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১৭টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছে।
২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি শুরু হয়। ২০১৮ সালে এটুআই'কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প হিসেবে ন্যস্ত করা হয়। ২০২০ সালে শুরু হয় এসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) কার্যক্রম শুরু হয়।
সরকারি প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও মানোন্নয়ন করতে ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এটুআই। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের দক্ষতা বাড়াতেও এটুআইয়ের ভূমিকা রয়েছে। এই প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের জন্য এ বছর আন্তর্জাতিক মান সংস্থার (আইএসও) সনদ পায় এটুআই।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সেবাও দিচ্ছে প্রকল্পটি। এ লক্ষ্যে এটুআইয়ের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবে সরকার এক্সেসিবিলিটি গাইডলাইনও প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া দেশের জনবান্ধব সেবা ব্যবস্থা ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় এটুআইকে প্রকল্প থেকে এজেন্সি গঠন করতে একাদশ জাতীয় সংসদে 'এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই)' বিল পাস করা হয়েছে।
ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন চালু করা হয়েছে এ প্রকল্পের অধীনে। নিউইয়র্কে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে 'ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশন' উদ্যোগের সূচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে জিরো ডিজিটাল ডিভাইড (তবৎড় উরমরঃধষ উরারফব) গেস্নাবাল ক্যাম্পেইন।
প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান বিনিময়ের পাশাপাশি ই-কোয়ালিটি সেন্টারের অধীনে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক আইসিটি ইনোভেশন (আই-৩) ম্যাচিং ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচটি দেশ- গাম্বিয়া, উগান্ডা, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে, সোমালিয়া ও ঘানাকে প্রযুক্তিগত সহায়তায় আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ডিজিটাল বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে অক্টোবরে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করা হয়। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন থেকে প্রযুক্তিখাতে গুরুত্বপূর্ণ ১০ দফার 'ঢাকা সনদ ২০২৩'-এর ঘোষণা আসে।
অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে স্মার্ট সেবা, স্মার্ট ই-ট্রেড লাইসেন্স, একপাস, নৈপুণ্য এবং স্মার্ট প্রেগনেন্সি মনিটরিং সিস্টেমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও নাগরিক সেবা আরও সহজ ও জনবান্ধব করতে 'সাথী' নামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়। এদিকে সব সরকারি সেবা এক ঠিকানায় নিশ্চিত করতে চালু করা হয় মাইগভ (সুমড়া.নফ) পস্ন্যাটফর্ম।
সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে নাইস পস্ন্যাটফর্মে (হরংব.মড়া.নফ) স্মার্ট ক্যারিয়ার গাইডেন্স নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং ও চাকরিবিষয়ক ক্যারিয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উদ্ভাবনী সংস্কৃতির বিকাশ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে এটুআই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এ বছর বিভিন্ন জেলায় স্মার্ট ডিস্ট্রিক্ট ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ, রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ, স্মার্ট মিটার ও সাব-মিটার তৈরি, গর্ভবর্তী নারীদের ডিজিটাল উপায়ে গর্ভাবস্থার গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক তথ্য পর্যবেক্ষণসহ নানা আয়োজন করা হয়।
অন্তর্ভুক্তিমূলক বেস্নন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সবাই একত্রে কাজ করতে আন্তর্জাতিক কনসালটেশনের আয়োজন করা হয়। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বেস্নন্ডেড শিক্ষাপদ্ধতি পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরের উপযোগী করে তোলার জন্য সচেতনতা তৈরি করা ছিল এই কনসালটেশনের মূল লক্ষ্য।
টোল-ফ্রি কল সেবার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত তথ্য, সতর্ক সংকেত ও আবহাওয়া বার্তা এবং জরুরি সহায়তা দিয়েছে এই জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩। উপকূলের ধেয়ে আসা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'মোখা' মোকাবিলায় দিনের ২৪ ঘণ্টা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় জাতীয় হেল্পলাইন।