ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব একটি সুবিশাল নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটে অনেক কাজ হয় যেগুলোকে অ্যাপিস্নকেশন বলা হয় এবং ওয়েব হলো তার মধ্যে একটি কাজ। যখন কোনো ই-মেইল পাঠাতে হয়, তখন ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। কারণ ম্যাসেজটি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অন্য কম্পিউটারে গিয়ে পৌঁছাবে। আবার যখন কারও সঙ্গে চ্যাট করতে হয় তখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। কারণ ম্যাসেজটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রেরণ এবং গ্রহণ হয়। কিন্তু যখন কোনো বস্নগ আপডেট করতে হয় বা গুগলে কোনো কিছু অনুসন্ধান করতে হয়, তখন ইন্টারনেটের ওয়েব ব্যবহৃত হয়।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হলো পৃথিবীজুড়ে টেক্সট পেজস, ডিজিটাল ফটোগ্রাফস, মিউজিক ফাইলস, ভিডিওস এবং অ্যানিমেশনের এক বিরাট সম্ভার, যা আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করতে পারেন। দ্যা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সবচেয়ে স্পেশাল বিষয়টি হলো, এর প্রত্যেকটি তথ্য একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকে। ওয়েব তৈরির সবচেয়ে বেসিক উপকরণ হলো টেক্সট পেজ, যা ওয়েবপেজ নামেও পরিচিত। একটি কম্পিউটারে থাকা অনেক ওয়েবপেজ সংগ্রহমালাকে বলা হয় ওয়েবসাইট। প্রত্যেকটি ওয়েব পেজে হাইলাইট করা বাক্যাংশ থাকে যাকে লিংকস বলা হয়। যেকোনো লিংকে ক্লিক করার
মাধ্যমে আরেকটি ওয়েবপেজে প্রবেশ করা যায়, আর এভাবে এ প্রক্রিয়াটি চলতেই থাকে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হলো ইন্টারনেট দিয়ে দর্শনযোগ্য আন্তঃসংযোগকৃত তথ্যাদির একটি ভান্ডার। একটি ওয়েব ব্রাউজারের সহায়তা নিয়ে একজন দর্শক ওয়েবপাতা বা ওয়েবপৃষ্ঠা দেখতে পারে এবং সংযোগ বা হাইপারলিংক ব্যবহার করে নির্দেশনা গ্রহণ ও প্রদান করতে পারে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হাইপার টেক্সট ডকুমেন্টগুলো নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে পরিচিত। হাইপার লিংকের সাহায্যে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে, ওয়েবপৃষ্ঠা দেখা যায়, যা টেক্সট, চিত্র, ভিডিও ও অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ হতে পারে। ১৯৮৯ সালের মার্চে ইংরেজ পদার্থবিদ টিম বার্নাস লি, বর্তমানে যিনি ওয়ার্ল্ড ওয়েব কনসোর্টিয়ামের ডিরেক্টর, পূর্ববর্তী হাইপারটেক্সট সিস্টেম থেকে ধারণা নিয়ে, যে প্রস্তাবনা লেখেন তা থেকেই উৎপত্তি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের। পরে এ কাজে লি'র সঙ্গে যোগ দেন বেলজিয়ান বিজ্ঞানী রবার্ট কাইলিয়াউ। এ সময় তারা উভয়েই সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সের্নে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে তাদের প্রকাশিত এক প্রস্তাবনায় তারা উলেস্নখ করেন, 'হাইপারটেক্সট-কে লিংক ও ওয়েব থেকে নানাবিধ তথ্যের সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে একজন ব্যবহারকারী তার ইচ্ছামতো ওয়েব পরিভ্রমণ করতে পারবে।'
বর্তমান ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে, অন্যান্য ওয়েবসাইট তৈরি হয়। সারা বিশ্বব্যাপী যখন ডোমেইনের নাম ও এইচটিএমলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান স্থাপিত হয় তখন থেকেই বার্নাস লি ওয়েব স্টান্ডার্ডের ব্যাপারে তার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব সহজে ব্যবহারযোগ্য ও সাবলীল প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যসমূহের প্রসার বা বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। আর এভাবেই তারা ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অনেক সময় সাধারণত এদের অর্থকে গুলিয়ে ফেলা হয় যদিও ইন্টারনেট কখনই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রতিশব্দ নয়। ওয়েব হলো মূলত ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটা অ্যাপিস্নকেশন মাত্র।
ওয়েবপৃষ্ঠা দেখার প্রক্রিয়া সাধারণত কোনো ব্রাউজারে ইউআরএল টাইপ করা বা কোনো পাতা থেকে হাইপারলিংক অনুসরণের মাধ্যমে শুরু হয়ে থাকে। এরপর ওয়েব ব্রাউজার যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কিছু বার্তা প্রদান শুরু করে। এর ফলে পরিশেষে পাতাটি দর্শনযোগ্য হয়ে ওঠে। প্রথমেই ইউআরএলের সার্ভার নামের অংশটি আইপি অ্যাড্রেস ধারণ করে। এজন্য এটি একটি বিশ্বজনীন ইন্টারনেট ডেটাবেজ বা তথ্যভান্ডার ব্যবহার করে, যা ডোমেইন সিস্টেম নামে পরিচিত। এই আইপি ঠিকানাটি ওয়েব সার্ভারে ডেটা প্যাকেট প্রেরণের জন্য জরুরি।
এরপর ব্রাউজার নির্দিষ্ট ঠিকানাটিকে একটি এইচটিটিপির আবেদন জানায় ওয়েব সার্ভারের কাছে। সাধারণ ওয়েবপৃষ্ঠার ক্ষেত্রে পাতাটির এইচটিএমএল লেখার জন্য শুরুতেই আবেদন জানানো হয়। এরপর ওয়েব ব্রাউজারটি ছবিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফাইলের জন্য আবেদন পৌঁছে দেয়।
ওয়েব সার্ভার থেকে আবেদনকৃত ফাইলগুলো পাওয়ার পর ওয়েব ব্রাউজারটি এইচটিএমএল, সিএসএস ও অন্যান্য ওয়েব ল্যাঙ্গুয়েজ অনুযায়ী পাতাটিকে স্ক্রিনে সাজিয়ে ফেলে। অধিকাংশ ওয়েব পাতাগুলোতে নিজস্ব হাইপারলিংক থাকে যাতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পাতা এবং ডাউনলোডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লক্ষ্য উলিস্নখিত থাকে। এই প্রয়োজনীয় ও পরস্পর সংযুক্ত হাইপারলিংকগুলোর সমষ্টিই ওয়েব নামে পরিচিত। টিম বার্নার্স-লি সর্বপ্রথম একে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে নামাঙ্কিত করেন।
১৯৮৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সার্ন এ কর্মরত অবস্থায় স্যার টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তৈরি করেন। সেটা থেকে শুরু করে ওয়েবের উন্নতি সাধনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরিতে ভূমিকা রাখেন যার মাধ্যমে ওয়েবপৃষ্ঠা অলঙ্করণ বা কম্পোজ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সেমান্টিক ওয়েব তৈরিতেও উৎসাহ প্রদান করেছেন।
আজকের ওয়েব পদ্ধতি থেকে এটি অনেকটা আলাদা হলেও এদের ভিতরে যথেষ্ট মিল আছে। ১৯৮৯ সালে টিম বার্নার্স-লি এনকোয়ারসহ আরও বিশদ একটি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রস্তাবনা করেন। রবার্ট কাইলিয়াউয়ের সহায়তায় ১৯৯০ সালের ১২ নভেম্বর তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের আরও আনুষ্ঠানিক একটি প্রস্তাবনা প্রদান করেন।