সুপার ভলক্যানো :জেগে ওঠার আগেই সতর্কতা জরুরি
আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্প হচ্ছে ভয়ঙ্কর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এদের সামনে মানুষ যে কতটা অসহায়, ইতিহাস তার সাক্ষী হয়ে আছে। তবে বিজ্ঞানীরা ইতালির নেপলস শহরের কাছে এক সুপার ভলক্যানো জেগে ওঠার আগেই মানুষকে সতর্ক করতে চান
প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রদীপ সাহা
আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্প হচ্ছে ভয়ঙ্কর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এদের সামনে মানুষ যে কতটা অসহায়, ইতিহাস তার সাক্ষী হয়ে আছে। তবে বিজ্ঞানীরা ইতালির নেপলস শহরের কাছে এক সুপার ভলক্যানো জেগে ওঠার আগেই মানুষকে সতর্ক করতে চান। নেপলস শহরের আশপাশের মাটির নিচে ক্রমাগত বাষ্প উদ্গীরণ ও কম্পন বাড়ছে। বিশাল আগ্নেয়গিরির এ ঝুঁকি লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন করতে পারে। শুধু ভিসুভিয়াস নয়, ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্র বলে পরিচিত প্রায় দেড়শ' বর্গকিলোমিটার এলাকাও এ ঝুঁকির কারণ।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ নিকোলা আলেসান্দ্রো নেপেলস শহরের উপকণ্ঠে পোজুয়োলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। সেখানকার বন্দরে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটছে। দেখে অবনতি মনে হলেও বাস্তবে ঘটনাটা ভিন্ন। খাদের প্রাচীর, টিলা ও গোটা গ্রাম ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকে চাপের ঠেলায় পানি থেকে ওপরে ওঠে আসছে। তিন কিলোমিটারেরও বেশি ভূ-ত্বক এক মিটারেরও বেশি ওপরে ওঠে এলে বোঝা যায়, তার জন্য কত পরিমাণ চাপের প্রয়োজন। ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্রের নিচে সেই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে ভূ-পৃষ্ঠের নিচে 'সুপার ভলক্যানো' রয়েছে। ভূ-ত্বক বিশাল পরিমাণ লাভা ও গ্যাস ওপর দিকে ঠেলছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ নিকোলা বলেন, 'আমরা এবার নমনীয় থেকে অনমনীয় পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছি। হাতে একটা লাঠি নিয়ে সেটিকে বাঁকালে প্রথমে সেটি নমনীয় পর্যায়ে থাকে। চাপ ছেড়ে দিলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়, বাঁকানোর চেষ্টা করলে সেটি মড়মড় করে ভাঙতে শুরু করে। আমি সেই শব্দই শুনতে পাচ্ছি।'
ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্রের নিচে ঠিক সেভাবেই ভূ-ত্বক ভাঙতে শুরু করেছে। ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে এ ধরনের ঘটনা দেখা গিয়েছিল। ভূকম্পনের ফলে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার আগে মাটি এখনকার মতোই প্রায় এক মিটার ওপরে ওঠে গিয়েছিল। সমুদ্রের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে গিয়েছিল। তাই স্থানীয় মানুষের মনে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। সারাক্ষণ একটা আতঙ্কে থাকে, কী জানি কী হয়! গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা সেখানে এসে মিলিত হয়েছেন। ১৯৮০-র দশকেও এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল। সেখানে চাপের ফলে ভূমিকম্প হয়েছিল এবং মাটি আবার নেমে গিয়েছিল। কিন্তু গত বিশ বছর ধরে সেখানে চাপ আবার বাড়ছে। নিকোলা বলেন, এর অর্থ হলো ভূ-ত্বক ভেঙে যাবার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি। তবে এখনই অগ্নুৎপাতের আশঙ্কার কোনো কারণ নেই, যা ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পরিমাপ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তাপমাত্রা সর্বোচ্চ উচ্চতা ছুঁয়েছে। ১৯৮৪ সালের তুলনায় এটি প্রায় দশ সেন্টিমিটার ওঠে গেছে।
প্রথম সম্ভাবনা অনুযায়ী সেখানে ছোট ছোট ভূমিকম্প ঘটতে পারে। গ্যাস বেরিয়ে এলে সেখানে চাপ কমবে এবং জমি আবার নেমে যাবে। তবে দ্বিতীয় সম্ভাবনা অনুযায়ী বিপর্যয় ঘটতে পারে। চাপের ফলে ভয়ঙ্কর অগ্নুৎপাৎ দেখা যেতে পারে। গোটা নেপলস শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সেই কারণে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ নিকোলা আলেসান্দ্রো ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ মাউরো দি ভিতো ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্রের ওপর কড়া নজর রাখছেন। তারা সুপার ভলক্যানোর কার্যকলাপ একটানা পরিমাপ করে সেই তথ্য এক ধরনের কন্ট্রোল সেন্টারে পাঠাচ্ছে। বিপদের ঝুঁকি দেখা দিলে জনসাধারণকে সতর্ক করা যাবে। মাউরো দি ভিতো বলেন, 'ভূকম্পন পরিমাপ যন্ত্রগুলোতে জোরালো বা ঘনঘন কম্পন ধরা পড়লে আমরা সেটি জানাবো। সঙ্গে সঙ্গে সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বার্তা পাঠানো হবে। আমাদের টেবিলের ওপর একটি লাল রঙের টেলিফোন রয়েছে, যা ইতালির সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরের সঙ্গে অবিরাম যোগাযোগ রেখে চলেছে। বড় ভূমিকম্প দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর চলে যাবে।'
ইতালির নেপলস উপসাগরের মানুষ যে বেশ ঝুঁকি নিয়ে সুপার ভলক্যানোর ওপর দিন কাটাচ্ছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সেখানকার লাখ লাখ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে, তাদের ঝুঁকির কথা ভেবে অবশ্যই কার্যকরি ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।