বর্তমানে শুধু চাহিদাই নয়, পোশাক এখন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যমও বটে। আর যুগে যুগে এই পোশাকে এসেছে অনেক পরিবর্তন, যাকে বলা হয় ট্রেন্ড পরিবর্তন। এই ট্রেন্ডের ওপর নির্ভর করেই ফ্যাশনও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, বারবার ফিরে এসেছে সেই পুরনো দিনের জামার ডিজাইন। প্রতিবছরই নতুন ট্রেন্ড আসে, তা চলে গিয়ে আরেক নতুন ফ্যাশন আসে। ট্রেন্ডের এই আসা-যাওয়া সবই ঘটে একটা ফ্যাশন সাইকেলের মাধ্যমে। আর এ ফ্যাশন সাইকেলের মধ্যে যুগে যুগে বদলে চলে ট্রেন্ড। এ থেকেই বোঝা যায় ফ্যাশন হচ্ছে পরিবর্তনশীল। আজকে যা নতুন কালকেই তা আবার পুরনো হয়ে যাচ্ছে। ৭০-৮০ দশকের পোশাকগুলোই হালের ফ্যাশন হয়ে আবার ধরা দিচ্ছে ফ্যাশনসচেতন মানুষের কাছে। শাড়ি, কামিজ, পায়জামা, বস্নাউজ সব কিছুতেই সময়ের পালাবদলে প্রাচীন রূপ আবার নতুনরূপে আসছে।
শাড়ি
শাড়ি বাঙালি নারীদের কাছে সব যুগেই পছন্দের শীর্ষে। তাই তো যে কোনো উৎসব-পার্বণের আগে শাড়ি নিয়েই যত জল্পনা-কল্পনা। যুগে যুগে এই শাড়ি নারীদের মন জয় করলেও এর কিন্তু ট্রেন্ডের অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিছু বছর আগেও শাড়িতে চুমকি, পুঁতি, জরি, পাথরের কাজ করা ফ্যাশন ছিল না। তবে এই ধরনের শাড়ির চল সত্তর ও আশির দশকে দেখা গিয়েছিল। আমাদের মা-খালাদের সেই সময়ের অনেক চুমকি, জরি বা পুঁতির কাজ করা শাড়ি পাওয়া যাবে, যেই ফ্যাশনকেই আবার নতুন করে আসে প্রায় পাঁচ বছর আগে যার চল এখনো অব্যাহত আছে।
বস্নাউজ
শাড়িতে যেমন ফ্যাশনের পরিবর্তন এসেছে তেমনি এর ব্যতিক্রম ঘটেনি বস্নাউজেও। শাড়ির সঙ্গে মানানসই ডিজাইনের বস্নাউজের অনেক ধরন দেখা যায় পোশাক বাজারে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোয় ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে বাংলার অতি প্রাচীন আমলের ডিজাইন ব্যবহার করছেন ডিজাইনাররা। আগের দিনের ঠাকুরবাড়ির বউরা শাড়ির সঙ্গে যে ধরনের পোশাক পরতেন সেই প্রথাই আবার ফিরে এসেছে। শাড়ির যেমন খুব গুরুত্বের সঙ্গে বাছাই করা হয় তেমনি বস্নাউজের ডিজাইনের প্রাধান্যও আছে অনেক নারীদের কাছে। বস্নাউজের নানা ধরনের ডিজাইন যেমন ডাবানো গোল গলা, আবার থ্রি-কোয়ার্টার হাতা দিয়ে তাতে লেইস বসানো বস্নাউজ খুব চলছে এখন। তাছাড়া ঘটিহাতা, পিস্তলহাতা, চুড়িহাতার বস্নাউজ যা সত্তর ও আশির দশকে বেশ জনপ্রিয় ছিল, তা এখন আবার ফিরে এসেছে। বস্নাউজের পিছনে লেইস দেয়া ফিতা, এমনকি বোতাম দেয়াটাও দেখা গিয়েছিল আশি-নব্বইয়ের দশকে। তা ছাড়া এখন বস্নাউজের সামনে গোল ও পেছনে ভি গলার ওপর কুঁচি ব্যবহার করে পুরনো দিনের আমেজটাই যেন ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
সালোয়ার-কামিজ
শাড়ির পরই যে পোশাকটি বাঙালি নারীরা বেশি পরে তা হলো সালোয়ার কামিজ। শাড়ির মতো এখানেও ফিরে এসেছে পুরনো দিনের ডিজাইনের বা কাটিংয়ের ধাঁচ। গত ঈদের আগে বিভিন্ন বাজার ঘুরে খুব ভালো মতোই বোঝা গেছে লন কামিজের জ্বর যেন সব তরুণীকে ধরে বসেছে। তবে এই লম্বা বা লন কামিজের ফ্যাশন ছিল আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে, ঘুরে-ফিরে সেই জামার চলই আবার ফিরে এসেছে। তা ছাড়া এক সময়ের চুমকি, পুঁতি, ডলার, জরির কাজ করা জামা এখন চলছে হরদম। সালোয়ারের ক্ষেত্রে রয়েছে ষাট-সত্তরের দশকের চুড়িদার, ধুতি, পেশোয়ারি, পাটিয়ালি এবং চাপাশেপের সালোয়ার ও নিচে মুহুরি। এ ছাড়া চুড়িদার সালোয়ারের সঙ্গে চুড়িদার হাতার কামিজও ভালো চলছে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সুতি, মসলিন, শিফন ওড়নাই বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। ওড়নাকে আকর্ষণীয় করতে বস্নক, স্ক্রিনের পাশাপাশি লেইস, পুঁতি, চুমকি, টারসেল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে যার ব্যবহার অনেক আগে দেখা গিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাশনের তুঙ্গে থাকা শর্ট কামিজের জায়গা এবার দখল করে নিয়েছে লম্বা কামিজ। ঈদকে সামনে রেখে নব্বই দশকের লম্বা কামিজ আবার ফিরে আসছে।
কাপ্তান বা টপস
আশির দশকের যে পোশাকের নাম ছিল কাপ্তান এখন তার নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে টপস এবং তা ফিরে এসেছে নতুনরূপে। এক সময়ে খুব চলতো হাতে কাজ করা কোটি আর এখন এ ধরনের টপসগুলোতেই ওড়নার বদলে ব্যবহার করা হয়েছে সেই কোটি, কোনোটি টপসের সঙ্গে ফিটিং করা, আবার কোনোটি ফিটিং ছাড়া। এই কোটির প্রচলন ছিল প্রায় ১৫ বছর আগে। অনেকে শখ করে হাতে সুতার কাজ করে তারপর কোটি তৈরি করত। আর এখন রেডিমেট পাওয়া যাচ্ছে কোটি। টপসে ফুলহাতা ও থ্রি-কোয়ার্টার হাতার ব্যবহারও আছে। টপসের গলায় ও হাতে রয়েছে হালকা হাতের কাজ, কাঠ, কাচের পুঁতি, স্টোন, বিভিন্ন ধরনের পাতি ও মেটালের কারুকাজ। এ ছাড়া কিছু টপসে রয়েছে কারচুপি ও সিকোয়েন্সের কাজ। এসবের সঙ্গে রয়েছে হাতে, গলায় লেইসের ডিজাইন করা। আবার একরঙা টপসে স্ক্রিনপ্রিন্ট, বাটিক, অ্যামব্রয়ডারি, বস্নক, হ্যান্ড পেইন্ট ও অ্যাপলিকের কাজও দেখা যায়।
পালাজ্জো
বর্তমানে পোশাকের বাজারে যে নামটি খুব বেশি প্রচলিত সেটি হচ্ছে পালাজ্জো। কিন্তু কিছুদিন আগেও চাপা পায়জামার বেশ চল ছিল। এই পালাজ্জোর ইতিহাস যদি দেখি তবে দেখা যাবে এক সময় ডিভাইডার নামে প্রচলিত এই পায়জামা একটু ঘের বাড়িয়ে এখন পালাজ্জো। কিন্তু এ ধরনের পায়জামা আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে পোশাকের বাজার দখল করে রেখেছিল। বর্তমানে লম্বা কামিজের সঙ্গে পালাজ্জো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকে আবার বিভিন্ন টপসের সঙ্গেও পালাজ্জো পরতে পছন্দ করছে। প্রায় সব বয়সি মেয়েদের কাছেই এখন পালাজ্জো মানেই ফ্যাশন। তবে এই পালাজ্জো যখন ডিভাইডার নামে পরিচিত ছিল তখন কিন্তু এই পায়জামার ঘের কিছুটা কম ছিল। সময়ের পরিবর্তনে নামের সঙ্গে এর কাটিংয়ে কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে এখন তা পালাজ্জো নামে পোশাক বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে। আগের ডিভাইডারগুলো বিভিন্ন কাপড়ের হতো যেমন- সুতি, সিল্ক, জর্জেট তবে বর্তমানে এখানেও পরিবর্তনের ফলে শুধু জর্জেট কাপড়ের পালাজ্জোই বেশি চলছে।