প্রবাসী নারী শ্রমিকদের অবদান

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানকে ইতোবাচক উলেস্নখ করে বলছেন, নারীরা যদি বিদেশে যাওয়ার আগে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেন এবং একটু সতর্ক ও সচেতন হন, তবেই ঝুঁকিগুলো এড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দূতাবাস ও সরকারের নজরদারির কথাও বলছেন তারা। গৃহকর্মীর পাশাপাশি নার্সসহ বিভিন্ন খাতে নারী কর্মী পাঠানোর সময় এসেছে বলেও মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

শান্তা ইসলাম
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে চলেছেন প্রবাসে কর্মরত নারী কর্মীরা। এদের একজন হলেন মোসাম্মৎ ফজিলা খাতুন। তিনি চার বছর আগে ঢাকায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে জর্ডানে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন। মাসিক যা আয় করে তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব ভালোভাবে সংসার চলছে দেশে থাকা ফজিলার পরিবারের। তার মতো আরও শতশত নারী শ্রমিক জর্ডানের পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। দুই সন্তানের জননী ফজিলা খাতুন জর্ডান থেকে টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি এখন বিদেশে খুব ভালো আছেন। সুখে আছে দেশে তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি আরও জানান, যে বেতন-ভাতা পান তা দিয়ে খুব ভালোভাবে পরিবার-পরিজনের আশা পূরণ করতে পারছেন তার মতো আরও বাংলাদেশের শত শত প্রবাসী নারী কর্মীরা। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৯০ হাজার নারীকর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন প্রায় ৫৪ হাজার, জর্ডানে ১৬ হাজার ৪৭১ জন, ওমানে ১০ হাজার ৪৯৬ জন এবং কাতারে ৩ হাজার ২৪১ জন নারী কর্মী বিদেশ গিয়ে বাংলাদেশে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছেন। নারী অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে নারী কর্মীরা বৈধভাবে যাওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক নারী কর্মী তালিকাভুক্ত করছেন। আর এখন নারীদের বিদেশে যেতে কোনো খরচ হচ্ছে না। নিয়োগ কর্তারাই টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। কাজেই দালালদের কথা না শুনে যারা বিদেশে যেতে চান, তারা সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেই যেতে পারেন। আর নারী কর্মীদের এখন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়। ফলে, তারা অনেক দক্ষ হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস বা গৃহকর্মী ছাড়াও অন্যান্য পেশায় আরও বেশি নারী কর্মী পাঠানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানকে ইতোবাচক উলেস্নখ করে বলছেন, নারীরা যদি বিদেশে যাওয়ার আগে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেন এবং একটু সতর্ক ও সচেতন হন, তবেই ঝুঁকিগুলো এড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দূতাবাস ও সরকারের নজরদারির কথাও বলছেন তারা। গৃহকর্মীর পাশাপাশি নার্সসহ বিভিন্ন খাতে নারী কর্মী পাঠানোর সময় এসেছে বলেও মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং মহিলা শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি শামসুন নাহার ভূঁইয়া, এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার নারী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের ভাষা শিক্ষা দিয়ে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিদেশে গিয়ে নারী কর্মীদের তেমন কোনো অসুবিধায় পড়তে হয় না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৬৩টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৭ জন প্রবাসী রয়েছেন। এর মধ্যে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩২ জন নারীকর্মী। এদের মধ্যে সৌদি আরবেই রয়েছেন ৩ লাখ ৩২ হাজার ২০৪ জন। নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থান ইতিবাচক। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখে চলেছেন তারা। তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তৈরি করতে হবে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ।