আজকাল হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে নারীরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। গণপরিবহণে, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এ সমাজে নারীরা আজ অনিরাপদ সর্বত্রই। এমনকি যেই অভিভাবকদের পিতৃসম মনে করা হয় সেখানেও। শিক্ষাদানের অন্যতম কারিগর যে শিক্ষক আজকাল সেই শিক্ষাগুরুই ছাত্রীদের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠেছে!
আমাদের সমাজে বরাবরই শিক্ষক অর্থ হলো তিনি পিতৃসম। পিতার আশ্রয়ে যেমন সন্তান বেড়ে ওঠে ঠিক তেমনই মানুষ হিসেবে প্রতিপালনের জন্য শিক্ষকের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকে এ সমাজ ধ্বংসের মুখে। পিতার আশ্রয়ে কন্যা সন্তান নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আবার স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা হচ্ছে নানাভাবে। রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়ে ওঠে তবে এই শিক্ষার্থীরা সর্বোপরি নারীরা কোথায় পালাবে? তাহলে কী নারী শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ঘরে বন্দি হবে! এ সমাজে নারীকেই কেন প্রতিনয়ত এত যাতনা সহ্য করতে হবে? নারী শিক্ষার্থী কেন পিতৃসম শিক্ষকের লালসার শিকার হবে? কোথায় যাচ্ছে বিবেক- মনুষ্যত্ব? আর কোন স্তরে নামছে আমাদের রুচিবোধ- বিকারগ্রস্ত! শিক্ষা খাতেও যদি নারীরা এই বিকৃতমনাদের শিকার হয় তবে কিসের শিক্ষক এরা! আর কী ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় পৌঁছেছি আমরা। জাতির বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে এই নরকাসুরেরাই যথেষ্ট।
সমাজে আজ বিবেক-মনুষ্যত্ব বিকোচ্ছে পানির দরে। সহজলভ্য হয়ে উঠেছে নীতিনৈতিকতা। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, যেই শিক্ষকরা নিজেরাই দুর্নীতি, পরহিংসা, নিন্দা, ঈর্ষাকাতরতা, চরিত্রের স্খলনে পরিপূর্ণ- তারা এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেবে! একইসঙ্গে বলতে হয়, আজকাল শিক্ষাস্তর এবং শিক্ষকরা যে অপকর্মের আখড়া হয়ে উঠছে এর ফল ভয়াবহ। স্কুল-কলেজ তো আছেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন নারীর জন্য ভয়াবহ ফাঁদ। কোনো শিক্ষকের চোখে যদি কোনো নারী শিক্ষার্থীকে পাওয়ার বাসনা জমে, তবে সেই শিক্ষার্থীর জীবন বরবাদ। নানাভাবে বিড়ম্বনায় ফেলা একটা অছিলা হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবই শিক্ষকের হাতের মুঠোয়। ফলে, শিক্ষার্থীরা খেলার পুতুল হয়ে পড়ে। পরীক্ষায় কম মার্কস, অ্যাটেনডেন্সে যেমন খুশি কমিয়ে দেওয়া- এমনকি সর্বত্র কীভাবে অন্য শিক্ষকদেরও চক্ষুশূল করে তোলা যায়- সে ব্যবস্থাও করেন।
এই শিক্ষকরা যেখানে ভাগ্য নির্মাতা সেখানে তারা অনৈতিকতার আশ্রয় নিচ্ছে। সন্তানসম ছাত্রীদের সঙ্গে নোংরা আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এসব বীভৎস মানসিকতার লালন যদি তাদের মতো উচ্চশিক্ষিতরা করেন তবে সমাজের অন্য শ্রেণিকে কী দোষে দুষ্ট করবে এ জাতি! তাই শিক্ষকরা যাতে কোনো ছাত্রীর জন্য বিধ্বংসী হয়ে উঠতে না পারে সে লক্ষ্যে স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়র প্রতি প্রশাসনকে কড়া তদারকি রাখতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর জন্য বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে। যাতে নারী শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হলে দ্রম্নত প্রতিকার পায়। একইসঙ্গে শিক্ষক নীতিমালায় যুক্ত করতে হবে যদি কোনো শিক্ষকের দ্বারা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তবে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরিচু্যত করা হবে। এখনই সময় এ ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ দিন দিন মৃতু্যফাঁদে পরিণত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো!
নারী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে গিয়ে সম্ভ্রম হারালে এর দায় এ সমাজ, রাষ্ট্রের। তাই সবকিছু পর্যালোচনা করে নারী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশকে এগিয়ে নিতে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। ফলে বাল্যবিবাহ রোধে, উচ্চ শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রকে। কারণ দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়।
গভীর কালো অমানিশা সর্বত্র। ওঁৎ পেতে আছে হায়েনাসম বিকৃত মানব। যারা শিক্ষার নামে অপশিক্ষাকে মননে ধারণ করছে। নিজের মমতা দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখার হাতিয়ার না হয়ে বরং ভোগ করার মনোবাসনা পোষণ করছে। যেই পিতাসম শিক্ষকরা লালন-পালনের ভার বহন করবে তারা কেন এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হবে? প্রকৃত অর্থে আমাদের দেশে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়া নিত্য একটি ঘটনা। যার বদৌলতে এরা ভয়হীন চিত্তে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে অপরাধকর্মে লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে। ফলে, যদি দেশ থেকে এমন ব্যভিচার চিরতরে দূর করতে হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকার, প্রশাসনিক পর্যায়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। নতুবা ক্রমাগত নারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়বে। দেশ হয়ে পড়বে মেধাহীন!