উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারী সমাজের অবস্থা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েগেছে প্রায় ৬০ কোটি নারী। অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলোতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা নারীদের সংখ্যাও কম নয়। ইতালি, নরওয়ে, ফ্রান্স বা সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশেও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নারী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বলাবাহুল্য, দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা নারীদের হার পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। সমগ্র বিশ্ব- প্রেক্ষাপটে নারী-পুরুষের তুলনা করলে বর্তমান বিশ্বে নারীদের অবস্থা আরও স্পষ্ট হবে। বিশ্বের অশিক্ষিত জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ নারী এবং বিশ্বে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ৭০ শতাংশই নারী। আমাদের দেশের নারীরা পুরুষশাসিত সমাজের কাছে অবহেলিত। এ দেশের আর্থসামাজিক পরিবেশে গোঁড়ামি, অসাম্প্রদায়িকতা প্রবল। ফলে, নারীর অধিকার লঙ্ঘিত হয় সবচেয়ে বেশি। নারীর সমঅধিকার ও নারী মুক্তির কথা জোর গলায় বলা হচ্ছে, কিন্তু নারীর অবস্থানে প্রত্যাশিত পরিবর্তন হয়নি। আজও অসংখ্য নারী অ্যাসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ ও যৌতুকের শিকার হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অবদানকে ছোট করে দেখা হয়। তাই সব সময় তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার হন। বেসরকারি অক্সফামের একটি প্রতিবেদন অনুসারে গত এক দশকে শ্রমবাজারে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ২ কোটির ওপরে বেড়েছে- যার ৭৭ শতাংশ গ্রামীণ নারী শ্রমিক। আর এদের অধিকাংশই মজুরি বৈষম্যের শিকার। নারীদের বৃহৎ অংশ দেশের প্রধান রপ্তানি বাণিজ্য পোশাক শিল্পে কাজ করেন। এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৪.৭ শতাংশ নারী শ্রমিক পোশাক কারখানায় মৌখিক নির্যাতন বা গালাগালির শিকার হন। ৭১.৩ শতাংশ মানসিক নির্যাতনের, ২০ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের এবং ১২.৭ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হন। দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নারী হওয়ায় দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সর্বত্র নারীর জয়জয়কার। দুই দশকে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, ক্রীড়া এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি ইতিবাচক মনোভাবের কারণে। অর্থনৈতিকভাবে নারী সমাজ অনেক অগ্রসর হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের শ্রমমূল্য বৈষম্য দূর করা তাই জরুরি।