রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

নারী-পুরুষ সম্পর্কের বঞ্চনা

আমরা অল্পতেই হাল ছেড়ে দেই। অতঃপর ভাগ্য-সময়ের দোষ দিই। আফসোস করতে করতে কপাল চাপড়াই। অথচ যতদিন নিজের দোষ বুঝতে পারব না এবং বিচার না হবে আমার- ততদিন অতৃপ্তির মধ্যে বাস করবে আত্মা। যারা বিচ্ছেদ করেছে, বিচ্ছিন্ন হয়েছে কোনো মোহে কিংবা প্রলোভনে ভুলে গেছে অতীত- সুখে আছে? আশাতীত কঠিন।
রাজু আহমেদ
  ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নারী-পুরুষ সম্পর্কের বঞ্চনা

নারী-পুরুষ সম্পর্কের বঞ্চনার যেন শেষ নেই। এই সম্পর্ক আছে এই নেই। ভেঙে যাওয়ার আগেও যেন জোড়া লাগা এবং লাগানোর জন্য শেষ চেষ্টাটুকু থাকে। বলে চলে যাওয়া সহজ- তবে না বলে থেকে যাওয়ার মধ্যে স্বপ্নীল অনুভূতি আছে। বিচ্ছিন্ন থাকা, বিচ্ছেদ করা- এসব কত সহজে পারা যায় অথচ থেকে যাওয়ার মতো সৌন্দর্যমন্ডিত অমূল্য সাফল্য পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। রেখে দেওয়ার মতো দামি আর কিছু নেই। সম্পর্কে বিশ্বাসের ভিত মজবুত হলে, পারস্পরিক যত্ন করলে এবং সম্মান দিলে যা পাওয়া যায় তা সম্পদের অধিক। সে সম্পর্ক শানিত শোভিতের সম্পূরক। সহ্য-ধৈর্য আর চাওয়া-পাওয়ার সম্মিলনে যে মধুর মিলন তার জন্য একশ' বছর অনায়াসে অপেক্ষা করা যায়। একটু সুখে জন্য আরেকটু যত্ন হোক। মনের ভাষা বুঝতে পারা আর স্বপ্নগুলো জানার জন্য সুন্দর মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। চেষ্টা বিফল হয় না।

অসময় এলো বলে চলে গেলাম- কাপুরুষতা হবে। চিরকাল সময় কারো সমান নাহি যায়। দুঃখ-দুঃসময়ে যে হাত ভরসা দেয়, যে আকাশ ছায়া ফেলে এবং যে বুক আশ্রয় হয় তার সঙ্গে বেইমানির চেয়ে মন্দ কিছু অন্ধের খোঁজেও নেই। আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে গেলে, বিশ্বাস-ভরসা হত্যা করলে একসঙ্গে বাঁচা দায়। তখন ছন্নছাড়ার তকমা পায়। ছেড়ে যাওয়া আর ধরে রাখার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক তা গন্তব্যে পৌঁছানো সফলরা জানে। ভালোর আলো মাখাতে লেগে থাকতে হয়। ত্যাগ-তিতিক্ষায় যে ফল তা অধিক মিষ্টি। ইগোকে সীমানাপ্রচীর বানালে সে সম্পর্ক যত মধুর হোক- টিকবে না। মোহ যখন গভীর হবে তখন বধূর সম্পর্কও থাকবে না। লোভ যদি সম্পর্ক নির্ণায়কের মাপকাঠি হয় তবে তা মনের রঙে রাঙবে না।

ভালোবেসে যা জয় করা যায় তা কেনা যায় না, আবার দখল করেও ধরে রাখা যায় না। মন যত্ন চায়। যে মনকে স্বপ্ন দেখাতে পারে, পারে হাওয়ার ঘোড়ায় সওয়ার করাতে সে থাকে, তাকে রেখে দেয়। ঝড়-ঝাপটা মোকাবিলা করে যারা থেকে গেছে তারা বুঝেছে সম্পর্কের পূর্ণতা ও গভীরতা কতখানি। পেয়েছে তৃপ্তিদায়ক স্বস্তি। কালোমেঘ দেখেই যারা পালিয়ে গেছে, যুদ্ধের মুখোমুখি হতেই যারা হাল ছেড়ে দিয়েছে তাদের কপালে শান্তির পাল জোটেনি। তাদের ভোগ পূরণ হয়েছে কিস্তু শখ-সাধ মেটেনি। অনায়াসে মনের অনাহার দেখে ধুঁকে ধুঁকে যারা জীবন থেকে মুক্তি খুঁজেছে তারা বুঝেছে জীবনযন্ত্রণা কত অধিক হতে পারে। তারা সয়েছে পরাজয়ের গস্নানি, দেখেছে পথচলার ক্লান্তি। অথচ আরেকটু ধৈর্য দেখালে ধরা দিত স্বপ্ন। এখানেই নেমে আসতো স্বর্গ।

আমরা অল্পতেই হাল ছেড়ে দেই। অতঃপর ভাগ্য-সময়ের দোষ দিই। আফসোস করতে করতে কপাল চাপড়াই। অথচ যতদিন নিজের দোষ বুঝতে পারব না এবং বিচার না হবে আমার- ততদিন অতৃপ্তির মধ্যে বাস করবে আত্মা। যারা বিচ্ছেদ করেছে, বিচ্ছিন্ন হয়েছে কোনো মোহে কিংবা প্রলোভনে ভুলে গেছে অতীত- সুখে আছে? আশাতীত কঠিন। সৌন্দর্য নষ্ট করে গেলে, পরীক্ষা কঠিন ভেবে আগেই নতজানু হলে কিংবা ক্ষোভের লোভে দগ্ধ হলে তার আনুকূল্য কোথাও মিলবে না, পাবে না একফোঁটা তৃপ্তি। সে যতবার জাগবে ততবার পরের যন্ত্রণা বাড়াবে। নিজেও পুড়বে অশান্তির অনলে। ডুববে হতাশার অতলে। অথচ একটু যদি ধৈর্য ধরে তবে আঁধার শেষে আলো আসে। বর্ষা শেষে যে রোদের দেখা তার চেয়ে কাঙ্ক্ষিত কিছু হয় না! বরং একটানা রোদ কিংবা বৃষ্টি অসহ্য। ভালোবাসাও অনুরূপ। টক-ঝাল-মিষ্টি মিলেই তো স্বাদের সমষ্টি।

প্রত্যেকটা বিচ্ছেদ বেদনার, সব বিদায় শূন্যতার। গাছের শাখা থেকে ঝরে যাওয়া পাতারও কষ্ট আছে। অথচ একজন মানুষ ছেড়ে চলে যাওয়া, মন থেকে মন তুলে নেওয়া পাষাণের পরিচয়। সহিষ্ণুতা বাড়লে তবেই নৃশংসতা কমে। যত্ন করলে পাথরেও ফুল ফোঁটে, মানুষের মন তো কত কোমল- যেমন সদ্য পরিস্ফুটিত পবিত্র কমল। কদমের দেখা হোক। থেকে যাওয়ার এবং ধরে রাখার শেষ চেষ্টাটুকু থাকতেই হবে। ভোগের চেয়ে সম্প্রদান অধিক সম্মানের। জয় করার পরে তবেই স্মৃতিচিহ্ন পড়ুক।

দুঃখ ভুলতে গিয়ে যত দুঃখ বাড়ে তা একাকিত্বের মতো যন্ত্রণায় থাকে। বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য বিশ্বাসের বারুদ দরকার। ত্যাগের তাজমহলে ভালোবাসা থাকে, ভোগে থাকে ভোগান্তি। যতন করণে রতনের দেখা পাবে। কপালে আলোর রেখায় দু'জনার নাম যেন পাশাপাশি লেখা থাকে।

কাউকে দুঃখ দিয়ে যে সুখের জন্য চলা তাতে প্রশান্তি আসবে? পৌঁছাবে চূড়ান্ত গন্তব্যে নাকি ঠিকানায় ভুল হবে? কাউকে ঠকিয়ে, আঘাত করে কিংবা অভিশাপের ভার বহন করে সামনে আগানো যায় না। চোখের দেখাই শেষ সত্য নয়। সুখ ভিন্ন বিষয়। অল্পে তুষ্ট থাকলে, অহেতুক অভিযোগ না রাখলে এবং সব দোষ অন্যের ভাগে না ঠেললে তবেই ভালো থাকা যায়। নিজের ভুল নিজের চোখে পড়তে হবে, নিজের দোষ ধরতে হবে এবং সেগুলো শোধরাতে হবে তৎক্ষণাৎ। তবেই টিকে থাকা টেকসই হবে। একা থাকা কিংবা কারো বিশ্বাস ভেঙে অন্য নীড়ে থাকা- তাতে দুঃখ বাড়বে। ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আগে ভালোবাসতে হয়।

\হযত্ন পেয়ে মূল্য চুকাবো- এই যুক্তিতে সম্পর্ক সামনে বাড়ে না বরং বাঁধা প্রাপ্ত হয়। কারো ঝড়-তুফানে দেয়াল হোন, কারো দুঃসময়ের খেয়াল হোন কিংবা কারো মন খারাপের সময়ে সুখের রঙের পেয়ালা হোন- তবে ভালোবাসা পাওয়ার আশা করা যায়। চোখের ভাষা এবং মনের আশা বোঝার দক্ষতাতেই জাগতিক যাবতীয় সার্থকতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে