সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে ভাঙনকবলিত যমুনা চরের অসহায় মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইউনিয়ন গভার্ন্যান্স প্রকল্পের মাধ্যমে তারা প্রকৃতির নির্মমতায় নিষ্ঠুরতার সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হতে চলেছে। ভাঙনকবলিত যমুনার করাল গ্রাস থেকে বাঁচার প্রত্যাশায় ধু-ধু মরুভূমি মতো বালির পথ পেরিয়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চলে নতুন ঠিকানায়। কিন্তু সর্বগ্রাসী যমুনা সেখানেও হানা দিয়ে ওদের করছে সর্বস্বান্ত। এর সঙ্গে রয়েছে বন্যা। এরপরও চরবাসী বেঁচে আছে।
প্রতিনিয়তই অভাব আর সীমাহীন দরিদ্রতার কবলে কেবলই ওদের হাহাকার। এর সঙ্গে প্রকৃতির আরেক দুর্যোগ শোক-জ্বরা-ব্যাধি জীবনকে দুর্বিষহ করলেও থেমে থাকে না হাজেরা, তফুরা, খোদেজা, চানভানু, করিমন বেগমদের মতো হাজারো নারীর জীবন। অবিরাম জীবন সংগ্রামী যমুনা চরের নারীরা জীবনের কাছে হার মানতে শিখেনি। প্রবল ভাঙন, ভূমি ক্ষয়, বারবার বন্যা, ঝড়, ক্ষুধা-বঞ্চনা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত সিরাজগঞ্জের যমুনা চরে সংগ্রাম করছে।
বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, শস্যখেত বানের পানিতে তলিয়ে যায়। আয়-রোজগারহীন দরিদ্র ভূমিহীন হাজার হাজার নারী-পুরুষের জীবন হয়ে পড়ে বিপন্ন। নিরুপায় অনেকেই ঘরের টিন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি বিক্রি করে কিছুদিন সংসারের চাকাকে সচল রাখে। ভূমিহীন নিঃস্ব দিনমজুররা অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করে। অপুষ্টিজনিত কারণে এ সময় রোগাক্রান্ত হয়ে অনেক নারী, শিশু ও বয়স্করা অকাল মৃতু্যর শিকার হয়। নদীভাঙনে বারবার বসতবাড়ি স্থানান্তর ওদের নিত্যসঙ্গী। তবুও তারা চরের মাটি কামড়ে পড়ে আছে।
যমুনার চর ঘুরে জানা গেছে, নারীদের বেঁচে থাকার সংগ্রামী জীবন কাহিনী। জীবনের অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত যমুনার চরের হাজার হাজার নারী আজ নানা সামাজিক বঞ্চনায় দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। অসুখে নেই চিকিৎসা। ঝাড়ফুঁক আর কবিরাজের নির্দেশনা ওদের বেঁচে থাকার দাওয়াই। গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মায়েদের অবস্থা সেই আদিম সভ্যতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। সারাদিনে যা রোজগার হয়, তাতে চালিয়ে নিতে হয় সংসার। বারবার যমুনার সঙ্গে লড়াই করে চরের নারীরা ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত। ওদের জীবনমান নিয়ে তেমন কেউ কাজ করে না।
আর এ সবকিছু চিন্তা করেই সিরাজগঞ্জে গৃহীত হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে ইউজেডজিপি আর ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউপিজিপি প্রকল্প। ইউএনডিপির সহায়তায় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে এসব প্রকল্প নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সচল হয়েছে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ। তারা চরের নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। সেলাই প্রশিক্ষণ, ধাত্রী প্রশিক্ষণ, ঠোঙা বানানো, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের মতো প্রকল্পগুলো ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া প্রতিপালনসহ আরও নানা প্রকল্প শুরু করেছে। এগুলো বাস্তবায়নে ওদের সংগ্রামী জীবন স্বনির্ভরতার আলোয় ভরপুর হয়ে উঠবে।