রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবারও চার বাঙালি নারী

সাহানা হক
  ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবারও চার বাঙালি নারী

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি ৪ নারীর বিজয় লাভ বহুজাতিভিত্তিক যুক্তরাজ্যের সহবস্থান ও সমন্বয়মূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। ব্রিটেনের রাজনীতিতে ক্রমশ বহুজাতিক অংশগ্রহণ বাড়ছে। এ থেকে দেশটির উদার ও সহবস্থানমূলক বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনেও সেই বৈশিষ্ট্যেরই জয় হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবারও বাজিমাত করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী প্রার্থীরা। লন্ড?নের হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র টিউলিপ সিদ্দিক। এই আসনে বিপুলসংখ্যক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি। এদিকে, টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসন থেকে টানা পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রোশনারা আলী। বাংলাদেশি পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে আপসানা বেগম দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভ করেছেন। আর লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন আসনে টানা চতুর্থবারের মতোন জয়ী হয়েছেন ড. রূপা হক। তারা সবাই বিরোধী লেবার পার্টির প্রার্থী।

টিউলিপ সিদ্দিক

হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসনে মোট ২৩ হাজার ৪৩২টি ভোট পেয়েছেন টিউলিপ। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৪৬২টি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ৪১ বছর বয়সি টিউলিপকে লেবার পার্টির অভ্যন্তরে নতুন প্রজন্মের তুমুল সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখছেন।

২০১৫ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরাপদ বা 'সেফ সিট' নয় এমন আসনে মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারই বাজিমাত করেন টিউলিপ। দুবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় স্থান পান তিনি। লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসায় এবার মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পেতে পারেন।

রোশনারা আলী

মোট ১৫ হাজার ৮৯৬টি ভোট পেয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো জিতেছেন রোশনারা আলী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭টি ভোট। ৪ হাজার ৭৭৭ ভোটে তৃতীয় হয়েছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী রাবিনা খান।

এ আসনের অপর দুই স্বতন্ত্র বাংলাদেশি প্রার্থী স্যাম উদ্দীন ৩২৫টি এবং মো. সুমন আহমদ ৩১৫টি ভোট পেয়েছেন।

আপসানা বেগম

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির আপসানা বেগম। মোট ১৮ হাজার ৫৩৫টি ভোট পেয়েছেন তিনি।

আপসানার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট ৫ হাজার ৯৭৫টি, কনজারভেটিভ পার্টির ফ্রেডি ডউনিং ৪ হাজার ৭৩৮টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী আপসানার সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক ৪ হাজার ৫৫৪টি ভোট পেয়েছেন।

পূর্ব লন্ডনের অপর আসনটিতে গতবার লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের বিরোধিতার মুখেই লেবারের মনোনয়ন পান এবং নির্বাচনে জয়ী হন আপসানা বেগম।

টাওয়ার হ্যামলেটসের শ্যাডওয়লে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশে তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আফসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার এমপির মধ্যে আপসানাই বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সভা সমাবেশে সবচেয়ে বেশি সময় দেন।

ড. রূপা হক

লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়নে ড. রূপা হক ২২ হাজার ৩৪০টি ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির জেমস উইন্ডসর ক্লাইভ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩৪৫টি ভোট।

পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে ৫২ বছর বয়সি এই ব্রিটিশ বাংলাদেশি কন্যা লন্ডনের কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে শিক্ষকতা করতেন। কিংসটন ইউনিভার্সিটিতে সর্বশেষ সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি একজন কলামিস্ট ও লেখক।

১৯৭০ সালে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আসা মোহাম্মদ হক ও রওশন আরা হক দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে বড় রুপা হক। তার বাবার বাড়ি পাবনা শহরের কুঠিপাড়ায়। সাদামাটা জীবনযাপন ও বিনয়ী ব্যবহারের জন্য সবার প্রিয় পাত্র তিনি।

হারলেন যারা

লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রুফিয়া আশরাফ ও রুমী চৌধুরী। যে আসনগুলোতে তারা হেরেছেন, সেগুলো কনজারভেটিভের দুর্গ ও ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।

সাবেক মেয়র রুফিয়া আশরাফ সাউথ নর্থামটনশায়ার আসনে ১৫ হাজার ৫০৪টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। এই আসনে ১৯ হাজার ১৯১টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির সারাহ বুল।

উইথাম আসনে কনজারভেটিভের তারকা প্রার্থী প্রীতি প্যাটেল ১৮ হাজার ৮২৭টি ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এই আসনে ১৩ হাজার ৬৮২টি ভোট পেয়েছেন কাউন্সিলর রুমী চৌধুরী। বাঙালি বংশদ্ভূত এই ব্রিটিশ আইন প্রণেতাদের আমরা নিজের মানুষ মনে করি। বাঙালিত্বের গৌরব উদ্ভাসিত এই ৪ জয়ী নারীর মাধ্যমে ব্রিটিশ বাংলাদেশ সৌহার্দ্য ও সৌভ্রাতৃত্বের জায়গাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ অবস্থায় দেখতে আগ্রহী আমরা। যুক্তরাজ্যের সাথে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও বহুমাত্রিক। আমরা এই সম্পর্কের আরও উন্নতি দেখতে চাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে