রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

বর্তমান সমাজে নারীর মর্যাদা

নারীদের নিরাপত্তা ও তাদের সম্মান প্রদর্শন আমাদের সমাজের একটি অপরিহার্য বিষয়। তাদের অধিকার প্রদান ও স্বাধীনতা সমাজের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। তবে এই স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা প্রচার একটি গুরুতর সমস্যা, যা সমাজের মৌলিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করে। সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং অশ্লীলতা বন্ধ করা উভয়ই জরুরি। নারীর স্বাধীনতা মানে হলো তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, স্বাবলম্বী হওয়া এবং সমাজে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার।
তামান্না ইসলাম
  ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
বর্তমান সমাজে নারীর মর্যাদা

ইসলাম আগমনের আগে জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগে নারীরা ছিল চরম অবহেলিত ও ঘৃণিত। তখন কারো কন্যা জন্ম নিলে সেই কন্যাসন্তানকে জীবিত মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্মম ঘটনার সাক্ষী ছিল তখনকার সমাজ ব্যবস্থা। ইসলাম এসে এই বর্বরতা রুখে দিয়েছে। ইসলাম সম্মানের সঙ্গে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। এক সময় নারীদের উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হতো, ইসলাম তা কঠোরভাবে বন্ধ করেছে। নারীর মর্যাদা বর্ণনায় আলস্নাহ তায়া'লা সূরা 'নিসা' নাজিল করেছে, যার অর্থ নারী।

মহান আলস্নাহ নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান মায়ের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন-হাদিসে মাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী করে বর্ণনা করেন।

একদা মু'আবিয়াহ বিন জাহিমাহ আস-সুলামী রাসুলুলস্নাহ (সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম)-এর খেদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, 'হে আলস্নাহর রাসুল (সা.)! আমি যুদ্ধে যেতে চাই। আর এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কামনা করছি। উত্তরে তিনি বলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হঁ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তার খিদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তার দু'পায়ের নিচে (নাসাঈ, হা/৩১০৪, সনদ হাসান)।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আলস্নাহর রাসুল (সা.), মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা অধিকারী ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এর পরও তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, তার পরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, এরপর তোমার পিতা। (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৯৪)

ইসলামে নারীকে স্ত্রী হিসেবেও অত্যধিক সম্মান জানানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পোশাকস্বরূপ হিসেবে তাদের তৈরি করা হয়েছে। মহান আলস্নাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, 'আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আলস্নাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।' (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

\হরাসুল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেন, 'তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।' (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)

ইসলাম মেয়ে এবং বোনের সঙ্গেও সদাচরণ করার তাগিদ দিয়েছে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারই তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, সে তাদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে জান্নাতে যাবে।' (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)

উত্তরাধিকার হিসেবেও নারীকে উপরে রাখা হয়েছে। সাধারণত একজন পুরুষ স্বাভাবিকভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পিতা-মাতার সম্পত্তি থেকেই অংশ পায়। কিন্তু একজন নারী সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার কাছ থেকে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে, মা হিসেবে সন্তানের কাছ থেকে সম্পত্তির অংশ পায়। সবগুলো অংশ যোগ করলে এবং উলিস্নখিত সবদিক বিবেচনা করলে নারীর অংশের সম্পত্তি, পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া পুরুষের অংশের সম্পত্তির চেয়ে বেশিই হয়ে যায়। ইসলাম এখানেও নারীকে উপরে রেখেছেন।

নারীদের প্রতি সম্মানজনক ও ন্যায্য আচরণ অত্যন্ত জরুরি। সমাজে নারীরা বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে থাকেন এবং তাদের অবদান অপরিসীম। তাই তাদের প্রতি আচরণে সম্মান ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা উচিত। কর্মক্ষেত্রে নারী সহকর্মীদের প্রতি পুরুষের আচরণ সম্মানজনক ও পেশাদারি হওয়া উচিত। ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিলেও বর্তমান সমাজেও নারীদের অনেকেই ভোগের সামগ্রী মনে করে। তাদের যথাযথ সম্মান দিতে চায় না। নারীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা, শিক্ষা এবং আইনি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা অপরিহার্য। নারীদের অধিকার ও সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাদের প্রতি অন্যায্য আচরণ বা হিংসার বিরুদ্ধে আইনি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিশ্চিত করা। সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা। সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা। এই বিষয়গুলো মেনে চললে নারীরা সমাজে আরও নিরাপদ ও সম্মানিত অবস্থানে থাকতে পারবেন। সবার উচিত নারীদের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে আচরণ করা এবং তাদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা।

নারীদের নিরাপত্তা ও তাদের সম্মান প্রদর্শন আমাদের সমাজের একটি অপরিহার্য বিষয়। তাদের অধিকার প্রদান ও স্বাধীনতা সমাজের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। তবে এই স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা প্রচার একটি গুরুতর সমস্যা, যা সমাজের মৌলিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করে। সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং অশ্লীলতা বন্ধ করা উভয়ই জরুরি। নারীর স্বাধীনতা মানে হলো তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, স্বাবলম্বী হওয়া এবং সমাজে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার। এই অধিকার অর্জনের পথে নারীদের অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তাই নারীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনায় অশ্লীলতার প্রচার একটি বিপজ্জনক প্রবণতা- যা নারীর সম্মান ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। অশ্লীলতা বন্ধের জন্য সমাজের সব স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রসার, আইনি প্রতিকার এবং মিডিয়া ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার না করে যথাযথ ব্যবহার জরুরি। সরকার ও সমাজের যৌথ প্রচেষ্টায় অশ্লীলতা বন্ধের উপায় হিসেবে ইন্টারনেটে অশ্লীল ভিডিও বন্ধ করা, সামাজিক মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে। সব পুরুষ জাতির জন্য একটি বার্তা, 'যে কথা নিজের বোনের জন্য শোনা পছন্দ করবেন না এমন কথা অন্যের বোন তথা কোনো নারীকেও বলবেন না।'

সমাজের প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব হলো নারীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানো এবং অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সচেতন থাকা। একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে হলে নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা অপরিহার্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে