রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সফল নারী শিরিনার জীবন কথা

শিরিনা তার কর্মজীবনেও প্রথম প্রথম কাজ করতে গিয়ে নিজে নিজে অস্বস্তিকরভাব মনে করতেন। ভাবতেন গ্রামের লোকজন কে কি বলবে? এখন তার কাছে সেটা আর কোনো সমস্যা বলে মনে হয় না। এখন তিনি তার সাধ্যানুযায়ী মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। যেসমস্ত লোকজন অগোচরে তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন তারা এখন তাদের ভুল বুঝতে পারছেন।
জেড আর খান
  ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
সফল নারী শিরিনার জীবন কথা

নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন জীবনযুদ্ধে জয়ী এক সংগ্রামী ও সফল নারী। তার নাম শিরিনা আক্তার। ডাকনাম গোলাপী। কুমিলস্নার চান্দিনা উপজেলার মেহার গ্রামে তার বাড়ি। স্বামী ওসমান গনি একজন সাংবাদিক ও ওষুধের ফার্মেসি ব্যবসায়ী। শিরিনা ১৯৮৬ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি চান্দিনা পৌরসভার হারং গ্রামের সরকার বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত খোরশেদ আলম সরকার, মাতা রীনা সরকার। পরিবারে ৬ বোন, ১ ভাই। ভাইবোনের মধ্যে শিরিনা দ্বিতীয়। বাড়িসংলগ্ন স্কুল ও কলেজ থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। ১৯৯৮ সালের ৪ ডিসেম্বর উপজেলার মেহার গ্রামের ওসমান গনির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শিরিনা পারিবারিক জীবনে এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জননী। সংসার জীবনে গৃহিণী হলেও সংসারের সমস্ত কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে সংসারে সচ্ছলতা আনয়নের জন্য বেসরকারি বীমা কোম্পানি ন্যাশনাল লাইফ ইনসু্যরেন্স কোম্পানিতে উন্নয়নকর্মী হিসেবে খন্ডকালীন কাজ শুরু করেন। তার মা রীনা সরকার ওই কোম্পানির একজন কর্মকর্তা। মা কোম্পানিতে চাকরি করে দেখে তারও ইচ্ছা হয় কোম্পানিতে কাজ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার। সেই চিন্তাচেতনা থেকে শিরিনা আক্তার তার মায়ের সঙ্গে ওই কোম্পানির উন্নয়নকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছুদিন কাজ করে কোম্পানির কাজের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে অতি অল্প সময়ে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে এখন কোম্পানির একটি বস্নক ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছেন। কোম্পানির কাজের শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি তার বাড়ির আঙিনায় সখের বসে মালটা ও ড্রাগন ফলের চাষ করেও লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ রোজগারে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে সচ্ছলভাবে সংসার পরিচালনা করছেন। শিরিনা আক্তার কোম্পানির চাকরি করার কারণে এলাকার সব মানুষের কাছে রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি- যার কারণে এলাকার মানুষ যে কোনো বিপদাপদে পড়লে তিনি দৌঁড়ে গিয়ে তার পাশে দাঁড়ান ও খোঁজখবর নেন এবং বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। তার কাজের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার কারণে অফিসের কর্মকর্তারা তাকে খুব মূল্যায়ন করে থাকে। তার চিন্তাচেতনা হলো, কোম্পানি বাঁচলে আমরা কর্ম করে বাঁচতে পারব। সেই চিন্তাচেতনা থেকেই তিনি কাজ করেন। তার মতে, এখন আর নারীদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নাই। লেখাপড়া শিখে কর্ম করে পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে সমানতালে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে একজনের উপার্জনে সচ্ছলভাবে সংসার চালানো কষ্টকর। একটি সংসারকে আদর্শ সংসার হিসেবে গড়ে তোলতে হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কর্ম করা দরকার। দেশের প্রতিটি নারীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। নারীরা শিক্ষিত হলে গোটা জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব। তাই নারীদের জীবনের সব দিক বিবেচনা করে কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়ের পর বেশিরভাগ নারীদের জীবনে যৌতুকসহ নানা কারণে বিয়েবিচ্ছেদসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে, এমন কি ঘটেও থাকে। এ সময়টা হলো নারীদের জীবনে সবচেয়ে দুর্যোগের সময়। এজন্য নারীদের সে সময়ের দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আগ থেকেই নারীদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

পেছনে কে কী বলল তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। শিরিনা তার কর্মজীবনেও প্রথম প্রথম কাজ করতে গিয়ে নিজে নিজে অস্বস্তিকরভাব মনে করতেন। ভাবতেন গ্রামের লোকজন কে কি বলবে? এখন তার কাছে সেটা আর কোনো সমস্যা বলে মনে হয় না। এখন তিনি তার সাধ্যানুযায়ী মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। যেসমস্ত লোকজন অগোচরে তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন তারা এখন তাদের ভুল বুঝতে পারছেন। পাছে লোকে কিছু বলে সেই বাক্যকে পেছনে ফেলে আনন্দের সঙ্গে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এখন আশপাশের মানুষ যে কোনো সুবিধা ও অসুবিধায় তার কাছে চলে আসেন বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করার জন্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে