নারী আর এখন অবলা নয়। এখনো অনেক জায়গায় নারীর প্রতিশব্দ হিসেবে 'অবলা' ব্যবহার করা হয়! সারা বিশ্বের বাস্তবতায় অবিশ্বাস্য শোনালেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'অবলা' হিসেবে নারীকে বোঝানো আশ্চর্য কিছু ছিল না। তবে এখন এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। গত তিন দশকের বেশিরভাগ সময় নারীরাই দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এই দেশের একাধিক নারী মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে উঠেছেন। সারা দুনিয়ায় নারীর অগ্রগতি তো আকাশছোঁয়া। গত শতক শুরুই হয়েছিল ম্যারি কুরির নোবেল জয় দিয়ে। প্রথম নারী হিসেবে এ কৃতিত্ব দেখান তিনি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমানতালে যুদ্ধ করেছেন। বলা যায়, রোজা পার্কসের কথা। ১৯৫৫ সালে আমেরিকায় বাসে শেতাঙ্গদের আসন ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন- যা ছিল সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে নারীদের প্রতি বৈষম্যের সমাজে বড় ধাক্কা। রাজনীতি, খেলা, বিনোদন, আবিষ্কার, শিল্পচর্চা কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই নারীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা নারীদের বড় বড় দায়িত্ব পালনের নজির দেখছি। আমেরিকায় তিনজন নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী- মেডিলিন অলব্রাইট, হিলারী ক্লিনটন ও কন্ডোলিৎসা রাইস সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জার্মানের অ্যাঞ্জেলা মার্কেল দীর্ঘদিন চ্যাঞ্চেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘমেয়াদে নারী শাসক। এটা স্পষ্ট যে, নারীদের হেয় করা হয় কেবল পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকেই। এগুলো পেশি শক্তির জোরেই করা হয়েছে। কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তিতেই আমরা নারীদের পুরুষের তুলনায় কম বুদ্ধিমান বলতে পারি না।
এর মধ্যে প্রথাভাঙা নারীদের কথাও উলেস্নখ করা দরকার বিশেষভাবে। যেমন সৌদি নারী তালিদাহ তামের দেশটির প্রথম নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শোতে অংশ নেন। বলা যায়, জুলিয়ানা মোরেলের কথাও। প্রথম নারী হিসেবে যিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এবার সৌদি নারী সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। তবে নারীকে পার হতে হয়েছে নানা বাধাবিপত্তি। যদিও প্রথা ভাঙতে গিয়ে, নাচ গান ও অভিনয় করতে গিয়ে, দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।
নারী দিবসের শুরুটাও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্যের প্রতিবাদ এবং কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করার দাবিতে মাঠে নামেন নারীরা। ১৯০৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। পরের বছর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে হয় দ্বিতীয় সম্মেলন। ১৭ দেশের ১০০ নারী প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ৮ মার্চকে নারী দিবস ঘোষণা করা হয়। দেশে ও বিদেশে অর্জনের দিকে তাকালে নারীকে আর 'অবলা' বলার সুযোগ নেই। পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরাও এখন সব ধরনের ঝুঁকির কাজও করছে। তাই নারীর সমার্থক শব্দ হিসেবে কোথাও আর অবলা শব্দটি ব্যবহার করা না হোক এটাই আমাদের চাওয়া। নারীর ক্ষমতায়ন বাড়লে সমাজ ও পরিবার সুন্দর হয়ে ওঠে। আমাদের নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আরো বহু পথই এগোতে হবে।