প্রয়োজন শর্তহীন বিয়ে
বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন, যার মাধ্যমে দুইজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ বৈধভাবে সমাজে বসবাস করার অনুমতি পায়। যেখানে নিজ আনন্দ-বেদনা পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ থাকে, সুযোগ থাকে একসঙ্গে বিশ্বজয় করার। তবে অধিকাংশ নর-নারী উপযুক্ত বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন না। এর প্রধান কারণ পরিবার ও সমাজ
প্রকাশ | ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
হিমেল আহমেদ
সামাজিকভাবেই মানুষ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই এ নির্ভরশীলতা চলে আসছে। সমাজ বিনির্মাণে সামাজিকতার বিকল্প নেই, আর এই সামাজিকতা তৈরির সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম হলো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধকরণ। বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন, যার মাধ্যমে দুইজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ বৈধভাবে সমাজে বসবাস করার অনুমতি পায়। যেখানে নিজ আনন্দ-বেদনা পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ থাকে, সুযোগ থাকে একসঙ্গে বিশ্বজয় করার। তবে অধিকাংশ নর-নারী উপযুক্ত বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন না। এর প্রধান কারণ পরিবার ও সমাজ। তাদের মানসিকতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যে, যুবকদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত আলোচনা যেন অপরাধ। এই ভয়ে অবিবাহিত যুবকদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত মতপ্রকাশের অনীহা দেখা দেয়, যা আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে হুমকি স্বরূপ। সুতরাং পরিবার ও সমাজের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ কাজ করা স্বাভাবিক, আর এটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। আকর্ষণ কাজ করলে প্রকাশ করা দোষের নয়, তবে সেটি হতে হবে লাগামসহ বৈধ উপায়ে। আর আকর্ষণ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লাগামহীন হয়ে পড়লে সমাজে নেমে আসবে মানবিকতার বিপর্যয়। সুতরাং লাগাম টানতে হবে আর এই লাগাম টানার একমাত্র পন্থা হলো বিবাহ। প্রায় সব ধর্মেই নর-নারীর পরিণত বয়সে বিবাহ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এবং বিবাহবহির্ভূত সব প্রকার সম্পর্ককে করা হয়েছে নিষিদ্ধ। জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণ করা হলে বিষয়টি সবার জানার কথা। তবে সেটা জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, মান্য করার ক্ষেত্র অবধি কেউ পৌঁছায় না। সমাজ চায় ছেলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবসান ঘটিয়ে কর্ম জগতে প্রবেশ করবে, প্রতিষ্ঠিত হবে, অতঃপর বিয়ে। আমরা যদি সাধারণ সমীকরণ দেখি, তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবসান বলতে বুঝি স্নাতকোত্তরের সমাপ্তি। একজনের স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করতে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ বছরে অতিবাহিত করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া, ইয়ার লস কিংবা ইয়ার গ্যাপের কারণে উক্ত সময়ে আরও দুই বছর যোগ করলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্ত করতে প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আর গড়ে পাঁচ বছর বয়সে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলে একজনের শিক্ষাজীবন শেষ করার পর তার জৈবিক বয়স দাঁড়ায় ২৫ কিংবা ২৬ বছর। শিক্ষাজীবন শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে কেউ চাকরি পায় না। যেহেতু এই দেশে বেকারত্বের হার অধিক, তাই চাকরির প্রত্যাশা করলে কমপক্ষে আরও তিন থেকে চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। সুতরাং চাকরিপ্রাপ্তির সময় বয়স দাঁড়াবে ৩০-এর কোঠায়, অতঃপর বিয়ে। অথচ বয়ঃসন্ধিকালের পরপরই একজন মানুষের দৈহিক চাহিদা সম্পন্ন হয়ে ওঠে। আর বয়ঃসন্ধিকাল শেষ হয় নরের ক্ষেত্রে ১৮ আর নারীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভেদে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সে। সুতরাং, বৈধভাবে দৈহিক চাহিদা পূরণের জন্য একজনের ১০ থেকে ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়। এই দীর্ঘ সময়ে নিজ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত ভিন্ন উপায় থাকে না। হাতের সব আঙুল যেমন অসমান, তেমনি সমাজে সবাই এক নয়। অনেকেই নিজ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে অক্ষম হয়ে জড়িয়ে পড়ে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে। আর শিক্ষা জীবনে এটির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এর ফলে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সময় অপচয়ের ক্ষেত্রে এইরূপ সম্পর্কের জুড়ি মেলা ভার, যা প্রভাবিত করে প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলকে। প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল আশানুরূপ না হলে ভবিষ্যতের সুন্দর সম্ভাবনা ও পরিকল্পনা বিঘ্নিত হবে। এছাড়াও অসামাজিকতার বিস্তার তো রয়েছেই। যাদের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের অবক্ষয়ে দেশ কী করে এগোবে? এইসব অসামাজিকতার ফলে নৈতিকতার অবক্ষয় হয়, যার দরুণ নানান দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের হার বৃদ্ধি পায়।
আমাদের সমাজ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক সমর্থন করে না। অথচ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। সমাজে বিবাহের প্রচলন সহজ হলে ধর্ষণ ও হত্যা, নারী উত্ত্যক্তকরণ, নারী পাচারসহ নানান নেতিবাচক কর্ম হ্রাস পাবে। সমাজে বৃদ্ধি পাবে নারীদের সম্মান। নারীর প্রতি সব নরের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে। সুতরাং পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি দ্রম্নত বিবেচনায় আনতে হবে। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলবেন, একজন বেকার যুবক কি করে বিয়ে করবে, খাওয়াবে কী? এক্ষেত্রে পারিবারিকভাবে সম্মতিক্রমে দু'জনের বিবাহ সম্পন্ন করে ছেলে উপার্জনক্ষম হওয়ার আগ অবধি মেয়ে নিজ বাবার বাড়িতেই থাকবে। শুধু তাদের মেলামেশা বৈধ করে দেওয়া হবে। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, সমাজে সংঘটিত অপরাধসমূহের মূলে রয়েছে অর্থ ও ক্ষমতা লিপ্সা এবং যৌনাকাঙ্ক্ষা। সুতরাং শুধু বিবাহের মাধ্যমেই সমাজের অর্ধেক পাপাচার হ্রাস করা সম্ভব।