নববর্ষ :নদী ও নারী
প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সাধন সরকার
প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম দিন প্রত্যেক বাঙালির জীবনে নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা-প্রেরণা-প্রত্যয় ও স্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'মুছে যাক গস্নানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।' প্রকৃতির পালাবদলের মধ্য দিয়ে নতুন রূপ পরিগ্রহ করে বৈশাখ আমাদের সামনে হাজির হয়। জানান দেয় তার সজীবতা, স্বচ্ছন্দতা ও শুদ্ধতা। নববর্ষ পালন শুধু সমস্ত কূপমন্ডূকতা, অন্যায়, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অবিচার থেকে দূরে থাকতে শিক্ষা দেয় না, পাশাপাশি এসবের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠে প্রতিবাদের মশাল জ্বালাতেও বলে।
কিন্তু আমরা কি আমাদের মূল্যবোধ, সততা ও সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছি? অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী ও নারী আজ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে মানুষ নামের কিছু অমানুষের দ্বারা। দখল-দূষণকারীদের দ্বারা নদী আর ধর্ষক-নিপীড়কদের দ্বারা নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে। প্রশ্ন জাগে, কেন আমরা নদী ও নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ব্যর্থ হচ্ছি? কেন আমরা দেশের সম্পদ নদী হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছি না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি নির্যাতনকারীদের উসকে দিচ্ছে! নির্যাতনকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে অবৈধ ক্ষমতাবলে, প্রভাব খাটিয়ে টাকার জোরে! নদী আমাদের সংস্কৃতি-সভ্যতার অংশ। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিত।
এক সময় এ দেশে ৭০০-রও বেশি নদনদী ছিল। এখন নদনদীর সংখ্যা কমে ২৩০-এ নেমে এসেছে! যদিও নদনদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন বইতে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যায়। নদী দখল আর দূষণ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। নদীর সঙ্গে এ দেশের কৃষির সেচব্যবস্থা, যোগাযোগ, মৎস্যসম্পদ, অর্থনীতি সর্বোপরি জীবনজীবিকা জড়িত। পলি পড়ে ভরাট হয়ে আর দখল-দূষণের কবলে পড়ে অনেক নদী ইতোমধ্যে মরে গেছে, অনেক নদী মৃতপ্রায়। একশ্রেণির মানুষ ক্ষমতার প্রভাব ও শক্তি খাটিয়ে নদী দখল-দূষণ আর ভরাট করে চলেছে। নদীরও যে জীবন আছে এ কথা আমরা বিশ্বাস করি না কিংবা করতে চাই না! দেশের অধিকাংশ নদনদী আজ অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। কঙ্কালসার দেহ নিয়ে নদনদীগুলো ধুঁকছে। দেখে মনে হয়, নদনদী দখল করা এ দেশে সবচেয়ে সহজ কাজ! মনে হয় নদীর কোনো মা-বাপ (কর্তৃপক্ষ) নেই! বিভিন্ন সময় ভরাট হয়ে যাওয়া নদনদী খননে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তবে সেই অর্থ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন আছে! কর্তৃপক্ষের চেষ্টা সত্ত্বেও তদারকি ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে নদনদীগুলো প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না।
এ দেশের নদনদীগুলো বাঁচানো না গেলে অদূর ভবিষ্যতে এজন্য চরম মূল্য দিতে হবে। নদনদী না বাঁচলে বাংলাদেশও বাঁচবে না! নদী ও নারী ভালো থাকা মানেই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়া। করোনাকাল আমাদের কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে এটা সত্য। যা হোক, বাংলা নববর্ষ আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি রক্ষা ও এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আর যেন একটি নদীও দখল-দূষণ আর ভরাটের কবলে না পড়ে। আর যেন একজন নারীও নির্যাতনের শিকার না হয়- নতুন বছরে এ প্রত্যাশা সবার।