গৃহকর্ম এবং সেবামূলক কাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য ভারসাম্যহীনতা রয়েছে- যা নারীর ভালো থাকা ও নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নারী কর্মক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হন- যা পোশাক শিল্প থেকে নারীকে সরে আসতে বাধ্য করে।
'ট্রান্সফরমিং কেয়ার ওয়ার্ক ফর ওমেন ইন রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর' শিরোনামেরর্ যাপিড কেয়ার অ্যানালাইসিসে এমন তথ্যই মিলেছে। সম্প্রতি কর্মজীবী নারী ও অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ পরিচালিত ওই অ্যানালাইসিসের তথ্য বলছে, নারী শ্রমিকরা গৃহস্থালি ও যত্ন/সেবামূলক কাজে দৈনিক ৪ দশমিক ৫৭ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। আর একজন পুরুষ শ্রমিক ব্যয় করেন ১ দশমিক ৮৩ ঘণ্টা। দেখা যাচ্ছে, নারীরা এক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে ২ দশমিক ৭৪ ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করেন। অন্যদিকে, একজন পুরুষ নিজের জন্য দৈনিক গড়ে ১২ দশমিক ৬৯ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। সেখানে একজন নারী নিজের জন্য সময় পান গড়ে মাত্র ৯ দশমিক ২০ ঘণ্টা। এখানে দেখা যায়, নারীরা গড়ে প্রতিদিন নিজের জন্য পুরুষের তুলনায় ৩ দশমিক ৪৯ ঘণ্টা কম সময় ব্যয় করেন।
কর্মজীবী নারীর মিলনায়তনে গতকাল শনিবার এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কর্মজীবী নারীর সহসভাপতি শাহীন আক্তার। অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানার সঞ্চালনায় সংগঠনের প্রকল্প সমন্বয়ক রিনা আমেনা ফলাফল উপস্থাপন করেন। সভায় বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা কামরুন নাহার, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এম এ সালাম, নারী শ্রমিক কাজলরেখা, অক্সফ্যামের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন প্রোগ্রামের প্রধান মেহজাবিন আহমেদ এবং প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারশিপ ব্রোকার ফতেমা তুজ জোহরা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কারখানার কর্মকর্তা, বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন, আইএনজিও, একাডেমিশিয়ান, নারী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মজীবী নারী প্রাতিষ্ঠানিক ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক উভয় খাতের নারী শ্রমিকদের আর্থসামাজিক জীবনমান ও শ্রমঅধিকার পরিস্থিতি জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কর্মজীবী নারী 'অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ'-এর সহযোগিতায় 'ট্রান্সফরমিং কেয়ার ওয়ার্ক ফর ওমেন ইন রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর' শিরোনামে মিরপুরের ৪টি তৈরি পোশাক শিল্পের ১০০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে একটির্ যাপিড কেয়ার অ্যানালাইসিস পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে নারীর অবৈতনিক সেবামূলক কার্যক্রমের একটি চিত্র তুলে আনা হয় এবং এর ফলে কর্মক্ষেত্রে তারা কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হয় সে বিষয়গুলোও শনাক্ত করা হয়।
কাজলরেখা বলেন, আমাদের সন্তানদের দেখাশোনা করাটাই চাকরি ছেড়ে দেয়ার প্রধান কারণ। এছাড়া সন্তানকে নিরাপদে স্কুলে আনা-নেয়া ও দেখাশোনা করার কেউ থাকে না। ফলে বাধ্য হয়েই নারীদের চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে যদি নারী শ্রমিকদের সহযোগিতা করা হয় তাহলে তারা ঝরে পড়বে না।
কামরুন নাহার বলেন, নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রধান্য দেয়া হয় না। সে ঘরে বাইরে অনেক কাজের চাপে থাকে। ফলে এক সময় ঘর সামলানো আর চাকরি সামলানোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে তারা কাজ ছেড়ে দেয়। তাই নারীর মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই কর্মক্ষেত্র থেকে নারী আর ঝরে পড়বে না। এম এ সালাম বলেন, স্থানীয় সরকারি জনপ্রতিনিধি, কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কমিউনিটি ডে-কেয়ার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ডে-কেয়ারে শিশু সন্তান রাখার সময় বাড়াতে হবে। তাহলে নারীরা দুশ্চিন্তামুক্তভাবে কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে।