নারীকে যারা কেবল শয্যাসঙ্গী ভাবে, চোখ দিয়ে মাপে তাদের না চিনতে পারলে জীবনে নরক নেমে আসবে। নারীর হাসিমুখের কথা শুনে, ভালো আচরণ পেয়ে, বিনীত ব্যবহার দেখে যারা মনে করে, যে কাউকেই বিছানা পর্যন্ত নেয়া যায়, যথেচ্ছা ঘুরানো যায়, মনকে খেলানো যায়- তাদের ভুল সহসাই ধরা পড়ে। তখন লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা থাকে না। মাতৃত্বের গুণ, ভ্রাতৃত্বের কোমলতাকে যারা অপব্যবহার করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায় তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। নারীর কোমলতার সঙ্গে সঙ্গে সে কঠোরতাও লুকিয়ে রাখে। পরিবেশকে কীভাবে মোকাবিলা করে পরিস্থিতকে ভিন্ন খাতে মোড় নেয়াতে হয় সেটা নারী জানে। যাদের কাছে নারী মানেই কামনার কুশীলব তারা মানুষের চেয়ে অমানুষ বেশি। জীবনের পদে পদে এদের পর্যুদস্ত হতেই হবে। নারীকে অঙ্গ মেপে বিচার করা, চোখে কামনা রেখে ছুরত দেখা- এসব বুঝতে পারার সক্ষমতা নারী জন্মসূত্রে প্রাপ্ত হয়েই বেড়ে ওঠে। সে নিজেকে সামলাতে সামলাতে কাপুরুষদের লাম্পট্য মেপে ফেলে। নারীর মন জয় হলে কোথাও বাধা থাকে না। সে ভালো-মন্দ কিংবা লোভ-পরার্থের পার্থক্য বুঝতে পারে। পুরুষের চোখের চাহনি দেখে, কথা শুনে তাদের মনের কথা বলে দিতে পারে। নারী-পুরুষের সম্পর্ক মর্যাদার না হলে, পারস্পারিক সম্মান-সৌহার্দ না থাকলে, শ্রদ্ধাবোধ শানিত না হলে, দ্বিপক্ষীয় বিশ্বাস-ভরসা না পেলে কেউ কারো হতে পারে না, হয় না। দাম্পত্যের কাম এককভাবে মুখ্য নয়। নারীর দেহের মধ্যে মায়ের দেহ লুকিয়ে থাকে, বোনের-স্ত্রী'র এবং কন্যার শরীরের ছায়া থাকে। তাকে নিয়ে অবৈধ কল্পনা করাও পাপ। পুরুষকে যারা ধন দিয়ে মাপে, পদ-পদবি দেখে কাছে ঘেঁষে সেই লোভীদের না চিনতে পারলে সংসার বিষিয়ে যাবে। বেকার বলে যে ছেলেটার প্রেমিকা পালিয়ে গেছে সে ওই ছেলেকে বাঁচিয়ে গেছে। যারা মানুষকে ভালো না বেসে তার অবস্থানকে ভালোবাসে, তার ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে তারা জীবনে না থাকলেই বরং ভালো। জীবনের শান্তির জন্য রূপের চেয়ে অন্তরের পবিত্রতা বেশি খোঁজা দরকার। রাগে-অভিমান সামলে রেখে যারা ভেতরের মানুষটিকে বুঝতে পারে তাদেরই বুকের ভেতর রাখা দরকার। যখন ভুল ধরা পড়ে তখন পুরুষও কঠোর হতে জানে। যারা জীবন উৎসর্গ করে ভালোবাসতে পারে তারা প্রয়োজনে আলাদা হতেও পারে। এটা জানতেই হয়। সাধনায় যে জীবন পাওয়া সেটা ভুল মানুষে নষ্ট করবে, কথায় কথায় কষ্ট দেবে সেই সুযোগ দেয়া ঠিক নয়। যে বিলিয়ে দিতে জানে সেই তো আবার কেড়ে নিতেও পারবে- নয়তো পৌরুষ কীসের। যারা ভালোবাসার অমর্যাদা করবে, বিশ্বাসের অপমান করবে, সরলতাকে বোকামি মনে করবে তাদের শিক্ষা হওয়া উচিত। পুরুষ কেন একা কাঁদবে? যারা কাঁদায় তারাও যেন কাঁদে, কাঁদতে বাধ্য হয়- সেই আচরণ হোক! পুরুষ তার দেহের রক্ত দিয়ে, শরীরের ঘাম দিয়ে তথা গোটা একটা জীবন দিয়ে সঙ্গীর সুরক্ষা, পরিবারের স্বার্থ ব্যর্থ হতে দেয় না। সে পুরুষের শখ, পছন্দ-অপছন্দের মূল্য না দিয়ে, ইচ্ছার প্রধান্য না দিতে যারা বাধ্য করে সেই নারীদের জীবনজুড়ে অবহেলা জোটে। বিশ্বাস ক্ষয়ে গেলে, ভরসা ধুয়ে গেলে সে কাউকে ছুঁয়ে দেবে- সেই আশাও বোকামির! যে পুরুষ পথে পথে ব্যথা পায় সে মরে যায়! মৃত মানুষ কাউকে ভালো রাখল নাকি আঘাত দিল সেটার আবার শাস্তি কী? নারী-পুরুষের মিলেমিশের সমষ্টিতে আমরা। কেউ এককভাবে পূর্ণ নয়। নারীকে পুরুষের, পুরুষকে নারীর ছায়া-মায়া হয়েই থাকতে হবে। নারীর মতের প্রতি সম্মান, পুরুষের ইচ্ছার দিকে খেয়াল, এসব পুরোপুরি না থাকলে ভালোবাসার কেমিস্ট্রি জমে না। এভাবে চললে অনাদর-অবহেলায় জীবন ফুরিয়ে যাবে কিন্তু জীবনের যা আশা তা কি আর মেটে? সুখের হাট বসে? তারাদের দেখা পায়? পারস্পরিক সম্মান, বিশ্বাস, ভরসা ও আস্থা হয়ে চিরকাল থাকুক। পবিত্রতায় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জড়িয়ে রাখুক। কামনার ঊর্ধ্বের যে মানবসত্তা, লোভের ঊর্ধ্বের যে প্রেম তা অঙ্গাঙ্গী হয়ে মাখামাখি করুক। চোখের ক্ষুধায় নয় বরং মনের ক্ষুধায় মানুষ মানুষের হোক। দেহের ক্ষুধা একদিন ফুরিয়ে যাবে, ফুর্তি-আমোদ ক্ষান্ত হবে কিংবা একলা চলাও ক্লান্ত হবে, সেদিনও মনের চাওয়া থেকে যাবে। ভালোবাসায় ভালোবাসা জড়িয়ে র'বে। ভরসা-বিশ্বাসের সেতু যত মজবুত হবে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও স্থায়িত্ব ততই টেকসই হবে। ক্ষুধা মিটে গেলে উদ্বৃত্বে লাথি- এটা মানুষের আচরণ নয়। বরং মান-অভিমানের ভাষা বুঝে অবহেলা কমিয়ে ফেলায় প্রেম বাড়ে! মানুষে প্রেম, জীবে প্রেম-এক ধর্মে, মর্মের মর্মে!