অটোরিকশা চালাচ্ছেন, এমন অনেক নারীকেই এখন রাস্তায় দেখা যায়। এ পেশার মাধ্যমে তারা নিজেদের সাবলম্বী করছেন। এমনই একজন রানি দত্ত। অভাবকে তাড়িয়ে দিতে সুনামগঞ্জের সড়কে নেমেছেন তিনি। নারী হলেও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন, পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে অটোরিকশা চালানোর মতো কঠিন পেশায় নেমেছেন তিনি। তার এই কঠিন সংগ্রামেকে স্বাগত জানিয়েছেন যাত্রী ও অন্য অটোরিকশা চালকরাও।
বছর বিশেক আগে জেলার তাহিরপুর উপজেলা থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুনামগঞ্জ শহরে আসেন যাত্রী রানি দত্ত (৩২)। শহরে এলেও পরিবারে আয় রোজগারের মানুষ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। বাধ্য হয়ে মায়ের সঙ্গে তিনিও মানুষের বাসায় বাসায় কাজ শুরু করেন। পরে রানি দত্ত নিজ উদ্যোগে সেলাইয়ের কাজ শেখেন। সেলাইয়ের কাজের টাকা দিয়ে ছোট বোনকেও বিয়ে দেন।
এরই মধ্যে হৃদয় দত্ত নামের একজনকে ভালোবেসে বিয়েও করেন। কিন্তু স্বামীর ঘরে সুখ হয়নি তার। বেকার স্বামীর নির্যাতনে রানি সিদ্ধান্ত নেন কিছু একটা করার। কিস্তিতে ক্রয় করেন একটি অটোরিকশা। গত বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অটোরিকশা নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরে বের হন তিনি।
যাত্রী রানি দত্ত বলেন, ছোট বেলা থেকে কিছু একটা করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অভাবের সংসারে তা যেন হয়ে উঠছিল না। লেখাপড়া না করায় সবদিক থেকেই বাধা আসছিল। বিয়ে করলেও স্বামীর সুখ কপালে ছিল না। দিনের পর দিন স্বামীর মারধর আমাকে সহ্য করতে হয়েছে। বেকার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি না হলেও এখনো সে আমার কাছেই থাকে। সাহস করেই অটোরিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নারী হলেও রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ, যাত্রী, অটোরিকশা চালকার আমাকে খুব সাহায্য করে। কখনো তারা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন না। যা টাকা ইনকাম হয় তা দিয়ে কিস্তির দেয়ার পাশাপাশি সংসারও ভালোভাবেই চলছে।
অটোরিকশা চালক আবদুল জলিল বলেন, তারে আমরা অন্য অটোরিকশা চালকদের মতোই দেখি, সবাই তারে সম্মান করে। পুরুষ বা নারী হিসেবে দেখি না, চালক হিসেবেই দেখি।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার মতো একটি মফস্বল শহরে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন রুমা পারভীন (২২)। রাজারহাটের মতো এমন পিছিয়ে পড়া একটি উপজেলা শহরে এই প্রথম একজন নারীকে অটোচালক হিসেবে দেখে অবাক সবাই।
নারী রিকশাচালক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন। অনেকে এ নারীকে কাজ করার সাহস জোগাচ্ছেন। অনেকে কৌতূহলবশত যাত্রী হয়ে তার রিকশায় উঠে পড়েন। আর যাত্রীদের সম্মান করে পৌঁচ্ছে দিচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ওই নারী অটোচালক স্বাচ্ছন্দেই যাত্রী পরিবহণ করছেন উপজেলার আনাচে-কানাচে। তার বড় দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। ছোট ভাই বাবা ও মাকে নিয়ে রুমার সংসার। ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়েছিল। দুই বছর যেতে না যেতেই স্বামী তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়, বাবার ঘরে ফিরে আসেন রুমা। তিনি বলেন, 'বাবা মায়ের সংসারে বোঝা না হয়ে কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। একপর্যায়ে অটো চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। একজনের কাছ থেকে দিন হাজিরা হিসেবে ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছি অটোরিকশা। প্রতিদিন তার আয় ৩০০/৪০০ টাকা থেকে মালিককে ভাড়া দিতে হয় দিনে ১৫০ টাকা। রুমার স্বপ্ন একদিন নিজের টাকায় আটো কিনবেন। অটোরিকশা চালানোর ব্যাপারে প্রথম দিকে সংকোচ লাগলেও ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
উলেস্নখ করা প্রাসঙ্গিক, ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার গত বছর অটোরিকশার মোট লাইসেন্সের পাঁচ শতাংশ নারীদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের নতুন দিলিস্ন ও রাঁচিতে নারীরা গোলাপি রঙের অটো চালাচ্ছেন। তবে সেসব অটোতে শুধু নারীরাই যাত্রী হন। কিন্তু মুম্বাইয়ের নারী চালকদের অটোতে নারী-পুরুষ উভয়ই উঠতে পারেন। আমাদের দেশেও লাইসেন্সের বিষয়ে সরকারকে নারী কোটা রাখতে হবে। তা হলে নারীরা উৎসাহিত হবে।