অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নবজাগরণ ঘটেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। নারীর স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন দেশ শাসন করে বিশ্বের শীর্ষ নারী শাসকদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে নারী সরকারপ্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনায় তিনি পেছনে ফেলেছেন ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, যুক্তরাজ্যের মার্গারেট থ্যাচার ও শ্রীলংকার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার মতো জনপ্রিয় নেতাদের।
\হঅতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন ৯৪ জন নারী। এদের মধ্যে বেশিরভাগই স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে থাকলেও দল হিসেবে নারী প্রার্থী মনোনয়নে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আওয়ামী লীগ। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী লড়ছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। আছেন ট্রান্সজেন্ডার প্রার্থীও। নির্বাচনে মনোনয়ন ও দলীয় পদে আরও বেশিসংখ্যক নারীকে যুক্ত করার কথা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো। আর শুধু নির্বাচনে মনোনয়ন নয়, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে নারীদের ক্ষমতায়নের পরামর্শ বিশ্লেষকদের। অন্যবারের মতো এবারও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা গিয়েছেন। নির্বাচকদের মন জয়ের প্রতিযোগিতায় একচুলও পিছিয়ে থাকেননি নারী প্রার্থীরা। তাইতো সমানতালে সংসদীয় এলাকার আনাচে-কানাচে অলি-গলে চষে বেড়িয়েছেন তারা।
\হদেশের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচন ১৯৭৩ সালে মাত্র দু'জন নারী প্রার্থী ছিলেন। পাঁচ দশকের পরিক্রমায় এবার রেকর্ডসংখ্যক ৯৪ জন নারী প্রার্থী আছেন ভোটযুদ্ধে।? আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়ে সংসদে যেতে চান ২০ নারী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি সহ অনেকেই সংসদে প্রতিনিধিত্বও করেছেন। দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি নারীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগই। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরিফা কাদের ও সালমা ইসলামসহ ৯ নারীকে সংসদে দেখতে চায় জাতীয় পার্টি। ৯ জন করে নারী প্রার্থী দিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টিও। আর তৃণমূল বিএনপি ৬, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও বিএনএফ ৩ জন করে নারী প্রার্থী দিয়েছে। গণফ্রন্ট আর সুপ্রিম পার্টি ২ জন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, জাতীয় পার্টি- জেপি, বিএনএম, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি সংসদে ১ জন করে নারী প্রতিনিধি চায়। আর স্বতন্ত্র হিসেবে মাহিয়া মাহি, জয়া সেন গুপ্তা, সাবিনা আক্তার তুহিন ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীসহ ভোটে লড়ছেন ২৬ জন। এবার রংপুর-৩ ও গাজীপুর-২ আসনে আছেন দুই ট্রান্সজেন্ডার সংসদ সদস্য পদ প্রার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, নারীর উন্নয়ন নিশ্চিতে জাতীয় সংসদে আরও বেশি নারী প্রতিনিধির দরকার। কারণ একজন নারীই কেবল নারীর কষ্টের কথা বলতে পারেন, অন্যদের দিয়ে তা সম্ভব না। সমাজে নারীর অগ্রগতি হয়েছে এটা যেমন সত্য একইভাবে সত্য পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যার কারণে নারী ঘরে বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজ পরিবর্তন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কার্যাবলি ও আচরণের পরিবর্তন। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। নারীর ক্ষমতায়ন আরও ঘটলে এই চিত্র বদলে যাবে।