শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

হান কাং-এর কবিতা

তরজমা :এ কে আজাদ
  ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
হান কাং-এর কবিতা

১.

পিচ-বরণ কালো আলোর বাড়ি

(পিচ-বস্ন্যাক হাউস অফ লাইট)

উই-ডং-এ সেদিন তুমুল তুষার বৃষ্টি পড়ছিল,

আমার আত্মার সঙ্গী আমার শরীর

শিহরিত হয়ে উঠছিল প্রতিটি পতনশীল অশ্রম্নর সাথে।

(আমি বললাম) তোমার পথ ধরে তুমি যাও।

কি দ্বিধায় পড়েছ তুমি?

কি স্বপন দেখছ তুমি ঝুলে ঝুলে অমন করে?

দোতলা বাড়িগুলো ফুলের মতো জ্বলছে।

তাদের নিচে বসে আমি শিখেছি যন্ত্রণার পাঠ,

আর এখনো অস্পর্শিত আনন্দের দেশের দিকে

বাড়িয়ে দিয়েছি একটা বোকামির হাত।

তোমার পথ ধরে তুমি যাও।

কী স্বপন দেখছ তুমি?

(যাও) হাঁটতে থাকো (তোমার পথের দিকে)।

আর রাস্তার বাতিতে তৈরি হওয়া

স্মৃতির দিকে আমি হাঁটতে থাকলাম।

সেখানে আমি লাইটশেডের ভেতরের দিকে তাকালাম,

দেখলাম- একটি পিচ-বর্ণের কালো বাড়ি।

পিচ-রঙের কালো আলোর বাড়ি।

আকাশ ছিল অন্ধকার,

আর সেই অন্ধকারের ভেতরে দেখলাম-

কিছু ঘরপোষা পাখি উড়ে যাচ্ছে

তাদের শরীরের ওজন তুলে ধরে।

ভাবলাম- ওভাবে উড়তে গেলে আর কতবার

আমাকে মরতে হবে?

কেউ তো আমার হাত ধরতে পারলো না!

কি স্বপন এত সুন্দর হয়?

কি স্মৃতি জ্বলে এমন উজ্জ্বল হয়ে?

আমার মায়ের আঙুলের ডগার মতন

তুষার-বৃষ্টি আমার এলোমেলো ভ্রম্ন-কেশকে

যেন মই দিয়ে মসৃণ করে দেয়;

আর একই জায়গায় বারবার সূক্ষ্ন রেখা টেনে

আকর্ষণীয় করে তোলে আমার হিমায়িত গাল।

তুমি প্রস্তুত হও, তুমি চলে যাও

তোমার আপন পথ ধরে।

২.

আরশির ভেতর দিয়ে দেখা এক শীতকাল

(উইন্টার থ্রম্ন অ্যা মিরোর)

ক.

আয়নার ভেতরে শীত অপেক্ষা করছে।

একটা ঠান্ডা জায়গা, ভয়ানক ঠান্ডা জায়গা এটি।

উহ্‌! কী ভীষণ ঠান্ডা!

জমে যাওয়া বস্তুগুলো যেন কাঁপতেও ভুলে গেছে সব।

আর তোমার হিমায়িত মুখটাও যেন

টুটাতে পারে না বরফের দেয়াল।

আমিও হাত বাড়াই না, আর তুমিও না।

একটা শীতল জায়গা,

এমন একটি জায়গা যেখানে ঠান্ডাই থাকে চিরকাল।

ভীষণ এই শীতলতা!

চোখের তারাগুলো নড়তে পারে না,

চোখের দুটি পাতা জানে না-

কীভাবে একে অপরের কাছে আসবে তারা।

শীতলতা অপেক্ষা করে আরশির ভেতরে-

(হৃদয়ের) আরও গভীরে,

অথচ আমি তো এড়িয়ে যেতে পারি না

তোমার অপলক চোখ,

আর তুমিও পারো না বাড়িয়ে দিতে তোমার হাত।

খ.

আমার এ চোখ দুটি যেন মোমবাতির শলা,

পুড়ে পুড়ে গলে যায় ফোঁটা ফোঁটা

গ্রাস করে (হৃদয়ের) পলিতাকে;

অথচ ছেঁকা লাগে না, লাগে না কোনো ব্যথা,

কেননা, তারা বলে যে, নীলাভ শিখার স্ফুরিত

মর্মমূল থেকেই আত্মার আগমন ঘটে।

আত্মা আমার চোখের উপরে বসে থাকে,

স্ফুরিত হয়, জ্বলতে থাকে,

তারা গুনগুন করে গান গায়,

দূরে ছড়িয়ে পড়া বাইরের শিখা

আবার ছড়িয়ে পড়ে।

দূরের শহরে চলে যাওয়ার জন্য

আগামীকাল তুমি যাবে (আমাকে) ছেড়ে,

আর আমি (একাই) জ্বলবো এখানে;

শূন্যতার সমাধিতে হাত রাখবে তুমি,

আর অপেক্ষা করবে ফের ফিরে আসার জন্য।

স্মৃতিরা তোমার হাতের আঙুলে

কামড়ে দেবে (বিষধর) সাপের মতন।

(আমার চোখে জ্বলা মোমের আগুনে)

তবু তুমি দগ্ধ হবে না, ব্যথাতুর হবে না বেদনায়,

(সে) আগুনে জ্বলবে না তোমার অবিচলিত মুখ,

(অথবা) হবে না বিচূর্ণ তোমার আয়না-মুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে