শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

শিল্পী এস এম সুলতান রংতুলির দার্শনিক

সৌরভ দুর্জয়
  ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শিল্পী এস এম সুলতান রংতুলির দার্শনিক

বোহেমিয়ান সুলতান (১০ আগস্ট, ১৯২৩- ১০ অক্টোবর ১৯৯৪) ছিলেন অকৃতদার। করেন নি ঘর সংসার। ছিল এক ছন্নছাড়া জীবন ছিল যার। গাঁয়ের কৃষক। অবুঝ শিশু। বনের পাখি। অবোলা প্রাণি। সবুজ প্রকৃতি। বহতা নদী ছিল সুলতানের আপনজন। তাই তো তিনি ছেড়েছিলেন কলকাতার হোসেন শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর রাজকীয় মেহমানখানা। আর্ট কলেজের সনদ অর্জনের বাসনা। কাশ্মীর, দিলিস্ন, লাহোর, লক্ষ্ণৌ, আমেরিকার, ইউরোপের লোভনীয় হাতছানি তাকে আটকাতে পারেনি। শীতের শেষে পরিযায়ী পাখি যেমন ফিরে যায় আপন দেশে। সুলতানও তেমনি দেশ-বিদেশের নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফিরে এসেছিলেন। চিত্রা নদীর কলতান শুনতে। সূইচোরা পাখি দেখতে। গাঁয়ের কৃষকের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে। দূর্বাঘাসের সবুজ গালিচা মাড়াতে। নিজের দর্শন বাস্তবায়ন করতে নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে। নিভৃত গ্রামের গহীন জঙ্গল কেটে গড়ে তুলেছিলেন নন্দনকানন আর্ট স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। সৃষ্টি করেছিলেন শিশু স্বর্গ। গড়ে ছিলেন কাঠের নৌকায় ভাসমান শিশু স্বর্গ। নির্জন রাতে বাজাতেন বাঁশের বাঁশি। পালন করতেন ছয়টা বিষধর গোখরা সাপ। একপাল বিড়াল। বানর। মদনটাক। ঝাঁকে ঝাঁক কবুতর।

সুলতানের অভাবী পিতা মেছের শেখ ছিলেন রাজ মিস্ত্রি। প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি সুলতান পিতার কাজের সহযোগী ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে মাটির ঢেলা। চুলার কয়লা, চালের গুড়া, কাঁচা হলুদ, পুঁই ফলের রঙ ও শ্মশানের কয়লা, যা পেতেন হাতের কাছে তাই দিয়ে এঁকে ফেলতেন ছবি। নান্দনিক আল্পনা। আর এ কাজের গুরু ছিলেন নড়াইল ভিক্টোরিয়া স্কুলের শিক্ষক কৃষ্ণনাথ ভট্টাচার্য। এই শিক্ষকের প্রেরণা পেয়েই ১৯৩৩ সালে ১০ বছর বয়সে পেন্সিল স্কেচে স্কুল পরিদর্শক ডক্টর শ্যামা মুখার্জির ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শিশু সুলতান। শৈশবে মাকে হারিয়ে শুরু হয় সুলতানের ছন্নছাড়া জীবন। ১৯৩৮ সালে সুলতান চলে যান কলকাতায়। মনে বাসনা জাগে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সুলতানের প্রতিভা আছে সত্য, তবে আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার নূ্যনতম শিক্ষা সনদ নেই। তবু নাছোড়বান্দা সুলতান। কলকাতার ভবানিপুরের রুবি স্টুডিও। সাইনবোর্ড লেখার দোকান। যার মালিক সুলতানের বাল্যশিক্ষক কৃষ্ণনাথ ভট্টাচার্য। সেখানেই থাকেন সাম্রাজ্যহীন সুলতান। লেখেন সাইনবোর্ড। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলে রংতুলির সাধনা। করে বসেন ধনুক ভাঙা পণ। কলকাতা আর্ট কলেজে তিনি ভর্তি হবেনই, হবেন। রুবি স্টুডিও ছেড়ে একদিন হঠাৎ করে হাজির হলেন নড়াইলের জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের কলকাতার বাড়িতে। যেখানে থাকতেন নড়াইল জমিদার পরিবারের ছোট জমিদার অরুণ বাবু। তিনি তখন কলকাতা আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। সুলতান অরুণ বাবুর কাছে গুপ্তভাবে সুপ্ত থাকা মনের বাসনা ব্যক্ত করলেন। কিন্তু অরুণ বাবু করুণ সুরে উত্তর দিলেন : তোমার প্রতিভা আছে কিন্তু ভর্তির জন্য নূ্যনতম যোগ্যতা নাই। নাছোড়বান্দা সুলতান ধরলেন জমিদার বাবু ধীরেন্দ্রনাথকে। ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বন্ধু ছিলেন বিখ্যাত চিত্রকলা সমালোচক, কলকাতা আর্ট কলেজের গভর্ণিং বডির সদস্য ব্যারিস্টার হোসেন শাহেদ সোহরাওয়ার্দী। তার বিশেষ সুপারিশের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি হন সুলতান। এত সময় আমরা যাকে সুলতান বলে আসছি। তিনি আসলে লাল মিয়া। অভাবের স্রোত যাকে ভাসিয়য়ে নিয়েছিল পাঠশালার বেঞ্চ থেকে। মাছিমদিয়ার মায়াবী কোল থেকে। বন্ধুদের খেলার মাঠ থেকে। অদম্য মনোবলের ভেলা যাকে পৌঁছে দিয়েছিল কলকাতা আর্ট কলেজের সবুজ চত্বরে। কলেজের গভর্ণিং বডির সদস্য, চিত্র সমালোচক, ব্যারিস্টার হোসেন শাহেদ সোহরাওয়ার্দী মাতৃহারা অভাবী এই লাল মিয়ার নাম রাখেন শেখ মুহাম্মদ সুলতান। নিয়ে যান নিজের বাড়িতে। সুযোগ করে দেন চিত্র কলাসহ নানাধর্মী দুর্লভ বইয়ে ঠাসা হোসেন শাহেদ সোহরাওয়ার্দী ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে পড়ার। গাড়িতে করে দিয়ে আসেন কলেজে আবার নিয়ে আসেন বাড়িতে। মাতৃহারা রাজমিস্ত্রীর ছেলে হয়েও পেয়ে যান হোসেন শাহেদ সোহরাওয়ার্দী পিতৃস্নেহ। কলকাতা আর্ট কলেজে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ছিলেন এস এম সুলতানের সিনিয়র, তখন তিনি আর্ট কলেজের শিক্ষক। কামরুল আহসান ছিলেন সহপাঠী। অল্পদিনের মধ্যে আর্ট কলেজের অতিপরিচিত মুখ হয়ে উঠেন লাল মিয়া থেকে রূপান্তরিত শেখ মুহাম্মদ সুলতান বা এস এম সুলতান। লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৪৩ সালে সক্রিয় কর্মী হয়ে উঠেন ইনায়েতউলস্নাহ খান মাশরকি (রহ.) প্রতিষ্ঠিত খাকসার আন্দোলনের। করতে থাকেন মানবিক কাজ। মূল উদ্দেশ্য ভারতবর্ষ স্বাধীন করা। তবুও প্রথম সেমিস্টারে দ্বিতীয়, দ্বিতীয় সেমিস্টারে প্রথম এবং তৃতীয় সেমিস্টারে প্রথম হন। কিন্তু সারা বিশ্ব যার পাঠশালা। স্রষ্টা যার শিক্ষক। সে কী আর থাকতে পারে কলেজের সীমিত গন্ডিতে? অধ্যয়ন করতে পারে নির্দিষ্ট সিলেবাস নিয়ে? তাই বুঝি ১৯৪৪ সালে আর্ট কলেজে ছেড়ে চলে যান দিলিস্ন। তারপর দিলিস্ন থেকে লক্ষ্ণৌ, মুশৌরী এবং আগ্রা যান। আগ্রা থেকে আবার দিলিস্ন এলেন সুলতান। ১৯৪৬ সাল দিলিস্ন থেকে আজমীর। সেখান থেকে গেলেন লক্ষ্ণৌ। টানা ছয় মাস থাকলেন লক্ষ্ণৌ। তারপর সিমলা যান। শিমলা ছেড়ে গেলেন কাশ্মীর। ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে স্বাধীন হলো ভারতবর্ষ। কিন্তু কাশ্মীর মুসলিম অধু্যষিত জনপদ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে পারল না। তাই বেধে গেল হট্টগোল। মরতে থাকল মানুষ। অনেকই ছাড়তে থাকল কাশ্মীর। তখন সুলতানও তার অনেক পেন্সিল স্কেচ, জিনিসপত্র ফেলে রেখে লাহোর পৌঁছান। ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে সুলতান আমেরিকা যান। আমেরিকা সফর শেষে তিনি ইউরোপের পথে পাড়ি জমান। লন্ডনে তিনি বেশ কয়েকটি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। যেখানে পাবলো পিকাসো, কর্ণেট, মাতিস, ডুফি, দালি, পল ক্লীর ছবি ছিল। ১৯৫৩ সালে সুলতান নড়াইলে ফিরে আসেন। দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি কোনো ছবি আঁকেন নাই। এর আগে করেন পাকিস্তানে আর্ট স্কুলে শিক্ষকতা। তখন নাগী, ইসমত চুকতাই, শাকের আলী, শেখ আহম্মদ প্রভৃতি শিল্পী ও পন্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে সুলতানের পরিচয় ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাদের অভিজ্ঞতার আতর বিনিময় হয় সুলতানের প্রতিভার লোবানের সঙ্গে। সনদবিহীন এই শিল্পী অর্জন করেছেন বহু অভিজ্ঞতা। গড়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৬ ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে তার একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। আহমদ ছফা, জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ গুণীজন চেয়েছিলেন এস এম সুলতানকে ঢাকায় রাখতে। কিন্তু তিনি ঢাকাতে থাকেন নাই। থেকেছেন চিত্রা নদীর তীরে নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে। পাখির ডাক শুনতে, জোনাকির আলো দেখতে। চিত্রা নদীর তরঙ্গে ভেসে যেতে। কৃষকের সঙ্গী হতে। শিশুদের মানুষ করতে।

এত প্রতিভাবান মানুষটি কেন নেননি শিক্ষা সনদ? কেন হন নাই ঢাকা আর্ট কলেজে ভাইস প্রিন্সিপাল? কেন করেন নাই ঘরসংসার? কেন থাকেননি ঢাকাতে? এসব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিলেও। তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে দিয়েছেন উত্তর।

শিল্পী এস এম সুলতান ছিলেন একজন দার্শনিক। তার জীবন ছিল এলোমেলো কিন্তু তার দর্শন ছিল সুনির্দিষ্ট। রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তার দর্শন। আহমেদ ছফা তার 'যদ্যপি আমার গুরু আব্দুর রাজ্জাক' বইতে চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন এ বিষয়ে। এছাড়া তিনি শাহাদুজ্জামান, তারেক মাসুদ, আবুল হাসনাত আবদুলস্নাহ, কবি মহসিন হোসাইনসহ বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষক, সাংবাদিক ও চিত্রপরিচালকদের কাছে তার দর্শন, তার জীবদ্দশায় বর্ণনা করেছেন। সেখান থেকে আমার ক্ষুদ্র মাথার ডোবাজলে ভেসে উঠেছে রংতুলির এই জগৎ সেরা দার্শনিকের দর্শন। এই গুণী শিল্পী ১) শিশু বিকাশ, ২) গ্রামীণ প্রকৃতি ও ৩) কৃষকের অধিকার ও সাহস এই তিন দর্শনের ওপর ভিত্তি করে অতিবাহিত করেছেন কর্মময় জীবন। এঁকেছেন ছবি। অভাবের বেড়ায় ঘেরা জীর্ণ কুটিরে জন্ম নেওয়া এস এম সুলতান দেখেছেন গ্রামের শিশুদের জীবন যুদ্ধ এবং যে যুদ্ধের তিনিও ছিলেন সক্রিয় যোদ্ধা। তিনি দেখেছেন ক্ষুধার দৈত্য কীভাবে চিবিয়ে খায় শিশু কিশোরদের প্রতিভা। একটা সুন্দর পরিবেশের অভাব কীভাবে ডুবিয়ে মারে শিশু-কিশোরদের সোনার তরী। এছাড়া শৈশবে মাতৃহারা হওয়ায় বুঝেছেন শিশুদের কষ্ট। তাই তো তিনি তার চিত্রকলার মাধ্যমে ঘুঁচাতে চেয়েছিলেন শিশু-কিশোরদের দুঃখ-কষ্টের অমানিশা। ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন নতুন সূর্য। ১৯৫০ সালে যখন তিনি আমেরিকার আমন্ত্রণে সেদেশ ভ্রমণ করেছিলেন তখন তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমেরিকার কর্তৃপক্ষ, সুলতান সে সেদেশের বিশেষ কিছু সম্পর্কে জানতে চান কি না? অথবা বিশেষ কিছু দেখতে চান কি না? প্রতিত্তোরে সুলতান আমেরিকার শিশু, শিশুদের শিক্ষা ও শিশুদের বিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে ও দেখতে চেয়েছিলেন। আমেরিকার সরকার সুলতানের সে ইচ্ছে পূরণ করেছিলেন। সুলতান ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন আমেরিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়। মিশে ছিলেন শিশুদের সঙ্গে। জেনেছিলেন শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে। তাই তো ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে এসে নড়াইল শহরের অদূরে তার মামার গ্রাম পুরুলিয়াতে গহীন জঙ্গল কেটে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নন্দন কানন আর্ট স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবং সুলতান তার ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন গ্রামের শিশুরা ক্ষুধা কিংবা দরিদ্রতার কারণে তাদের লেখাপড়া শেষ করতে পারে না। তাই তিনি তার প্রতিষ্ঠিত শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। যদিও আর্থিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় সুলতানের স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তবুও তিনি আমৃতু্য শিশু শিক্ষা বিকাশের এই দর্শনের ওপর কাজ করে গেছেন। তাই তো তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শিশু স্বর্গ, শিশু স্বর্গ-২ নামে ভাসমান শিশু স্বর্গ। লালন পালন করেন হিন্দু বিধবা ও তার শিশু কন্যাকে। সুলতানের দ্বিতীয় দর্শন ছিল গ্রামীণ প্রকৃতি। সুলতানের জন্ম বর্ষাকালে কাদা জলে ভেজা। শরতের কাশফুলের ভরা। হেমন্তের সোনালি ধানে ভরা। গ্রীষ্মের ধুলো উড়া গ্রামে। যেখানে গাছের ডালে পাখি ডাকে। জঙ্গলে সাপ থাকে। রাতের বেলা শিয়াল ডাকে। খোলা আকাশের উদার সাগরে রূপালি চাঁদ ভাসে। এদের সঙ্গে মিলেমিশে গ্রামের কৃষক, মজুর, কামার, কুমোর, সাধু, দরবেশ, ধনী গরিব বসত করে। তাই তো সুলতান যেখানে দেখতে চান নাই কৃত্রিমতার জৌলুশ। ইট পাথুরে অট্টালিকা।

তাই তিনি তার ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন বাঁশের খুঁটির শোনের ঘর। সবুজবীথি। ফসলি মাঠ। সুলতান তার ছবিতে কোনো অট্টালিকা আঁকেননি। এমনকি কোনো টিনের ঘরও না। সুলতান গ্রামীণ প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে তার চিত্রকলার মাধ্যমে আজীবন কাজ করে গেছেন। এসব কারণেই তিনি কলকাতা কিংবা ঢাকা শহরে থিতু হন নাই। করেন নাই ঢাকা কলেজের শিক্ষকতা। হন নাই ভাইস প্রিন্সিপাল। আজীবন মিশে ছিলেন মা মাটির সঙ্গে। তুলির বুলেটে যুদ্ধ করেছেন গ্রামীণ প্রকৃতির শত্রম্নর সঙ্গে। তার তৃতীয় দর্শন ছিল : কৃষকের অধিকার ও সাহস। তেভাগা আন্দোলন। জমিদারদের কৃষক নিপীড়ন। আষাঢ় মাসের অভাব। মহাজনের খতের দায় দারুণভাবে আলোড়িত করেছিল সুলতানের কোমল হৃদয়। সুলতান হয়ে উঠেন বিপস্নবী চিত্রকর। কৃষকের মুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করেন তার তৃতীয় দর্শনে। গ্রামের ক্ষুধার্ত কৃষক। মেদহীন কৃষাণিকে তার দার্শনিক তুলের টানে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করে পেশীবহুল মেদময়রূপে।

মেধাবী সুলতান অর্জন করতে পারতেন উচ্চতর শিক্ষা সনদ। হতে পারতে আর্টস কলেজের অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ। করতে পারতেন নাগরিক জীবন উপভোগ। গড়তে পারতেন সোনালী সংসার। কিন্তু তিনি তা করেন নাই। ছিলেন বোহেমিয়ান। তবুও তিনি ঠিক রেখেছেন তার রংতুলির দর্শন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে