ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ডি পি মুখার্জি নামে পরিচিত, ভারতীয় অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। সমাজতত্ত্ব ও মার্কসবাদ বিষয়ের ওপর কাজে ও বক্তৃতায় দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেন। সাহিত্য সমালোচনায় তিনি 'মার্কসীয় নন্দনতাত্ত্বিকদের পুরোধা' অভিধায় পরিচিত ছিলেন। ধূর্জটিপ্রসাদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির হুগলি জেলার চাতরায়। পিতার নাম ভূপতিনাথ মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম এলোকেশী দেবী। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা উত্তর চব্বিশপরগনা জেলার ভাটপাড়ার কাছে নারায়ণপুর গ্রামে। পিতা বারাসতের আইনজীবী ছিলেন। তাই ধূর্জটিপ্রসাদের শৈশবের পড়াশোনা বারাসত গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে। এখান থেকেই তিনি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পাস করেন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ধূর্জটিপ্রসাদ রিপন কলেজ (বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাসে এম.এ এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে অর্থনীতিতে এম.এ পাসের পর কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
নতুন লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অর্থনীতির ও সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং তিন দশকের (১৯২২-৫৪) বেশি সময় অধ্যাপনা করেন। পরে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জাকির হোসেনের আহ্বানে তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন। ধূর্জটিপ্রসাদ তার সময়কালে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম ছিলেন। পূরণচাঁদ জোশী, ত্রিলোকী নাথ মদন, অশোক মিত্র অওধ কিশোর সরন, ভি বি সিং প্রমুখ তার ছাত্রদের জীবনে ও ভাবনায় আদর্শ হতে পেরেছিলেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে অর্থনীতি বিষয়ক এক সাপ্তাহিকের প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে তিনি 'লাইট উইদাউট হিট' বা 'তাপ ব্যতীত আলো' শীর্ষক এক প্রবন্ধ লেখেন। ১৯৩৭-৪০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে গোবিন্দ বলস্নভ পন্থ নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকারের ডিরেক্টর অফ ইনফরমেশন পদে কাজ করেন এবং ব্যুরো অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্স গঠন করেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এক বছরের জন্য যুক্তপ্রদেশ সরকারের লেবার এনকোয়ারি কমিটির সদস্য হন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইকোনমিক ডেলিগেট হয়ে সোভিয়েত রাশিয়া যান। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নেদারল্যান্ডসের ইনস্টিটিউট অফ সোস্যাল সায়েন্সে সমাজতত্ত্ব বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসর পদে কাজ করার জন্য আমন্ত্রিত হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে অক্টোবর থেকে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে তিনি সেখানে 'সোসিওলজি অফ কালচার' (সংস্কৃতির সমাজবিজ্ঞান) বিষয়ে বক্তৃতা দেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে বান্দুং সম্মেলনে যোগ দেন এবং তিনদিন এশিয়ার দেশগুলোর ইকোনমিক কো-অপারেশন সেমিনারে বক্তৃতা করেন। ধূর্জটিপ্রসাদ সমাজতত্ত্ব ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। ধূর্জটিপ্রসাদের সাহিত্য, সঙ্গীত ও কলা বিষয়ে গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন ঔপন্যাসিক প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচকও ছিলেন। তিনি রাধাকমল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অল ইন্ডিয়া সোসিওলজিক্যাল কনফারেন্স গঠন করেন এবং এর প্রথম সম্মেলন হয় ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। ধূর্জটিপ্রসাদ গলায় ক্যানসারে আক্রান্ত হলে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড যান। উপশম হলেও তার কণ্ঠস্বরের বিশেষ ক্ষতি হয়। তা সত্ত্বেও তিনি ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে থাকেন এবং অবসরের পর দেরাদুনে চলে যান। শেষে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন। মুখার্জি উনিশটি বই লিখেছিলেন। তার মধ্যে দশটি বাংলায় এবং নয়টি ইংরেজিতে।
সেগুলি হলো : বাংলা গ্রন্থ
সুর ও সঙ্গতি (১৯৩৫)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সহ-রচিত।
অন্তঃশীলা (১৯৩৫)/আবর্ত (১৯৩৭)
মোহানা (১৯৩৪)/আমরা ও তাহারা (১৯৩১)
মনে এলো/ঝিলিমিলি/চিন্তসি (১৯৩৪)/কথা ও সুর (১৯৩৮)
ইংরেজি গ্রন্থ
ইধংরপ ঈড়হপবঢ়ঃং রহ ঝড়পরড়ষড়ম (সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাসমূহ, ১৯৩২) চবৎংড়হধষরঃু ধহফ :যব ঝড়পরধষ ঝপরবহপবং (ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক বিজ্ঞান, ১৯২৪)
ওহফরধহ গঁংরপ: অহ ওহঃৎড়ফঁপঃড়হ (ভারতীয় সঙ্গীত : পরিচিতি, ১৯৪৫) গড়ফবৎহ ওহফরধহ ঈঁষঃঁৎব : অ ঝড়পরড়ষড়মরপধষ ঝঃঁফু (আধুনিক ভারতীয় সংস্কৃতি: একটি সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা, ১৯৪২) চৎড়নষবসং ড়ভ ওহফরধহ ণড়ঁঃয (ভারতীয় তরুণদের সমস্যা, ১৯৪২) ঠরবংি ধহফ ঈড়ঁহঃবৎারবংি (মতামত এবং পাল্টা মতামত, ১৯৪৬) ঙহ ওহফরধহ ঐরংঃড়ৎু (ভারতের ইতিহাসে, ১৯৪৪) উরাবৎংরঃরবং (বৈচিত্র্য) জবধষরংঃ (বাস্তববাদী)