ঠিকানাবিহীন পথ শাহানাজ শিউলী
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
মাগো বলে চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়ল ফারিয়া। আজ সকালে ফারিয়া একটু অন্যরকম সেজেছিল। ফিরোজা রঙের শাড়ির সঙ্গে বস্নাউজ পেটিকোট, জুতা ম্যাচিং করে পরেছিল। ঠোঁটে মেজেন্ডা কালারের লিপিস্টিক। কপালে ফিরোজা রঙের টিপ,
খোপাই ছিল লাল গোলাপ। সারা শরীরে মিষ্টি পারফিউমের সুগন্ধি। ছোট ছোট সিল্কি চুলগুলো ঝলমল করছিল কাঁধের উপর। কি অপূর্বই না লাগছিল ফারিয়াকে। ফারিয়া সাজ্জাদকে আজ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। তাই সে অফিস থেকে একটু আগে ছুটি নিয়ে বাজারে গেল। সাজ্জাদের জন্য ফিরোজা কালারের একটা পাঞ্জাবি এবং সোনালি কালারের একটা হাত ঘড়ি ও একটা ফুলের তোড়া কিনল। ভেবেছিল সাজ্জাদকে নিয়ে আজ সে রেস্টুরেন্টে খাবে তাই বাড়িতে কোনো রান্না করল না। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সাজ্জাদকে। আজ ওদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী। যদিও এ নিয়ে সাজ্জাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। মাত্র বিয়ের তিন বছরে সাজ্জাদের এত পরিবর্তন ফারিয়াকে রীতিমতো ভাবিয়া তোলে। মুক্ত মনের সাজ্জাদকে এখন বড্ড অচেনা মনে হয় ফারিযার। তবুও নিজের পক্ষ থেকে এতটুকু ঘাটতি রাখেনি ফারিয়া। সংসারের যাবতীয় কাজসহ চাকরি সে নিজের হাতেই সব সামলায়।
ফারিয়া মিষ্টি একটা হাসিতে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বলল, হ্যাপি অ্যানিভার্সারি ডে। তারপর সাজ্জাদের হাতটা ধরে ঘড়িটা পরাতে গেলে সাজ্জাদ হাতটা টান দিয়ে নিজের কাছে নিলো। ফারিয়া বলল, ঘড়িটা কি তোমার পছন্দ হয়নি? এই দেখো, আমার শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে তোমার পাঞ্জাবি কিনেছি। তাড়াতাড়ি পরে নাও। সেদিকে সাজ্জাদ তাকাও দেখল না। সাজ্জাদকে আজকাল বড় অচেনা মনে হয় ফারিয়ার। কথায় কথায় ঝগড়া করে। ফারিয়া একটু সাজুগুজু করলে সাজ্জাদের চোখে রক্ত উঠে যায়। চাকরি করা একদমই সহ্য করতে পারে না সাজ্জাদ। অথচ বিয়ের আগে এক উন্মুক্ত আকাশের স্বপ্ন দেখাত। স্বাধীনতার কথা বলত। মুক্ত মনের মানুষ ভেবেই ফারিয়া সাজ্জাদের প্রেমে পড়েছিল। অথচ সেই সাজ্জাদ আর এই সাজ্জাদের মধ্যে এখন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তাহলে কি ফারিয়া ভুল লোককে ভালোবেসে ছিল? ভাবতে থাকে ফারিয়া। আবার সাজ্জাদকে বলে, কি হলো? তৈরি হয়ে নাও। আমরা রেস্টুরেন্টে খেতে যাব। সাজ্জাদ কোনো প্রশ্নের উত্তর দিল না। চোখ দুটি গোলস্না গোলস্না করে ফারিয়ার আপাদমস্তক একবার দেখল। ফারিয়ার সাজসজ্জা দেখে সাজ্জাদের চোখ আরো রক্তাক্ত হয়ে উঠল। ভয়ংকর চেহারা নিয়ে ফারিয়ার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো। ফারিয়া ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল, কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আমার কি কোনো অপরাধ হয়েছে? কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাজ্জাদ ফারিয়ার হাত থেকে পাঞ্জাবি ও ঘড়িটা কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিল। ফারিয়া ঠেকাতে গেলে তার চোখে গায়ের শক্তিতে একটা ঘুসি মারল। তার চোখ দিয়ে দরদর করে রক্ত ঝরতে লাগল। ফারিয়া আর কিছুই দেখতে পেল না। এক নিকষ আঁধার ফারিয়ার চোখ দুটোর সঙ্গে জীবনটাকে ঢেকে দিল। শুধু এতটুকুই সাজ্জাদ ফারিয়াকে বলল, আমি যেন এসে তোমাকে না দেখি। ফারিয়া জানে না সে কোথায় যাবে এখন। কোথায় থাকবে? মা বাবার কাছে কোন মুখ নিয়ে ফিরে যাবে। তাদের অমতেই বিয়ে করেছিল সে। তাছাড়া সে যাবে কি করে? চোখে তো কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। কোনো কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ না করে দ্রম্নত প্রস্থান করল সাজ্জাদ।