শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
জন্মদিনের শুভেচ্ছা

স ম শামসুল আলম প্রথমদিনের আলোকিত সূর্য

মাহমুদ কামাল
  ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
স ম শামসুল আলম প্রথমদিনের আলোকিত সূর্য

স ম শামসুল আলম দু'হাতে লিখতে পারেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া, নাটক, কলাম, উপসম্পাদকীয় এবং তার ভাষায় 'শব্দরম্য'। সাহিত্যের নানা শাখায় তার অবাধ বিচরণ। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে রয়েছে তার আলাদা পরিচয়। শিশু-কিশোর বিষয়ক দু'টো পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন। কিন্তু, তার মূল পরিচয় তিনি কবি। তার ছয়টি কাব্যের একত্র সংকলন 'সমকবিতা' পাঠ করে মনে হয়েছে আপাদমস্তক তিনি একজন কবি। কবি নামের সঙ্গে মিল রেখে কবিতাসমগ্রের নামকরণও অভিনব- 'সমকবিতা।' অভিনব এবং সম্ভবত আর কোথাও দেখিনি নিজের কাব্য নিজেকেই উৎসর্গ করার বিষয়টি। সমগ্রের ছয়টি কাব্যই তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন- এমনকি সমকবিতাও। এ বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে যেমন অদ্ভুত তেমনি চমকপ্রদও মনে হয়েছে। প্রথম কাব্য 'হিংসার নক্ষত্র এক'-এর উৎসর্গপত্র- 'কেউ ভালোবাসেনি, অতএব আমাকে।' অন্য কাব্যগুলোর উৎসর্গ যথাক্রমে- 'আমাকে ভালোবাসে এমন কেউ নেই- আমাকে, আমাকেই'; 'আবার আমাকে'; 'কেউ নেই ভালোবাসে, সুতরাং আমাকে' এবং 'অনেক দিনের আমাকে।' এই যে প্রতিটি কাব্যই নিজেকে উৎসর্গ করা তার মানে এই নয় কবি আত্মকেন্দ্রিক। কবিতা যেহেতু কবি হৃদয়ের একান্ত কথামালা- এ কারণে তার হৃদয় উৎসারিত পঙ্‌ক্তিনিয়ে কবিকে সাধারণ থেকে আলাদা করেছে।

লেখাটির শিরোনাম, 'প্রথম দিনের আলোকিত সূর্য।' কেন আলোকিত, কেনই বা প্রথম দিন। শুরুতে কবুল করেছি সমকবিতাগ্রন্থ; আমি পাঠ করেছি পুরোটাই। কিন্তু আমার চোখ আটকে গেছে প্রথম কাব্যের প্রথম কবিতাটিতে। কবিতাটির নাম, 'এসো।' রচনাকাল ১৯৮৫ সালের ৪ঠা মার্চ। কবির বয়স তখন তেইশ। তেইশ বছরের তরতাজা তরুণ 'এসো' কবিতার মাধ্যমে জানান দিয়েছেন- আমিও এসেছি। আমার ছোট আলোচনাটি এই কবিতটিকে কেন্দ্র করেই। কবিতাটি আমরা আগে একবার পড়ে নিই।

এসো

এসো আমার ঘরে সোনালি শয্যা

এসো চাঁদ, এসো মেঘ

আমি সাজিয়ে রেখেছি ঘর

ফুলে ফুলে, বেলুনে বেলুনে।

এসো আমার ঘরে নবান্নের ধান,

এসো প্রেম, এসো নদী-

আমি প্রেমিক সেজে বসে আছি

পালের নৌকোতে, ছইয়ের ভেতর।

এসো আমার ঘরে মুহূর্ত সুন্দর,

এসো সুখ, এসো শান্তি-

আমি তোমার জন্য যত্নে রেখেছি

একটি সুন্দর জীবন।

সুন্দর জীবনের প্রত্যাশা সবার- সব শ্রেণির। তেইশ বছরের তরুণ কবি রাজবাড়ি জেলার শিকজান গ্রামে বসে কবিতাটি লিখেছেন। সম্ভবত এলাকাটি কবির জন্মভূমি। কবিতাটি পড়ে আমি উদ্দীপ্ত হয়েছি কয়েকটি কারণে। প্রথমত- কবির বয়স বিবেচনা, দ্বিতীয়ত- লেখাটির স্থান এবং মূলত প্রবহমান ছন্দে আবরণহীন সহজ সরল চমৎকার ভাষায় কবিতা বর্ণনা।

'এসো'- এই আহ্বান একেবারেই সরল। সরল এই আহ্বানে রয়েছে জীবনের কথা। প্রথম পঙ্‌ক্তি- 'এসো আমার ঘরে সোনালি শয্যা। জীবনের শুরুতে সোনালি শয্যা মানানসই না হলেও বোধকরি তিনি এখানে নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলা কবিতায় ফুল-পাখি-চাঁদ এখন নির্বাসনে। তেইশ বছরের তরুণের কলমে ফুল যেমন আছে চাঁদও আছে। পাশাপাশি মেঘের কথাও আছে। প্রকৃতির এই ছবি এখন অপরিচয়ের হলেও এই ছবি আমাদের জন্য খুবই জরুরি। উদ্দীপ্ত হয়েছি এই বাক্যে- 'এসো আমার ঘরে মুহূর্ত সুন্দর।' তিনি সুন্দরের প্রত্যাশা করেছেন বড় ক্যানভাসে নয়- এক মুহূর্তের। মুহূর্তের সুন্দরগুলোই কিন্তু হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়। সাদামাটা, নিরাভরণ, অলঙ্কারবিহীন এই কবিতাটি একেবারেই হৃদয়জাত। আজকাল কবিতাকে বিউটি পার্লারে মেয়ে সাজানোর মতো করে সাজানো হয়। প্রকৃত সুন্দরী প্রকৃতজাতই। 'এসো' কবিতাটি এ কারণেই প্রাকৃতিক। আর, প্রাকৃতিক বলেই স ম শামসুল আলম ১৯৮৫ সালে আমাদের জানিয়ে দিলেন তার আগমনি বার্তা। এ বার্তা আলোকিত সূর্যের সঙ্গেই তুলনীয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে