একটি পথের মসৃণ বুক আমারও তো ছিল
সে পথে ছিল না কাঁটার আঘাত
পা পিছলে পড়া- সে ছিল অলীক দূর-কল্পনা
সেই পথ এঁকেবেঁকে চলে যেতো স্বর্গের দিকে
সেখানে তুমুল করতালি ছিল
নতজানু হয়ে ছিল এক সীমাহীন উদ্যান
জলপরী, নীলপরী একসাথে সেই উদ্যানে হাসতো, খেলতো
বড় নিরাপদ ছিল সেই উদ্যান
বড় স্নেহমাখা আনন্দ-সুখে ছিল সেই দিনগুলো।
অমাবস্যার রাতেও সে পথ ছিল উজ্জ্বল
সে পথের বুকে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে শিখেছি
হাসতে হাসতে হাঁটতে হাঁটতে হামাগুড়ি দিতে দিতে
ক্লান্ত হয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি কতদিন সেই পথে।
পথ আর উদ্যান মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতো
যেন হাত ধরাধরি করে হাঁটা যমজ দু'বোন
বৃষ্টিমুখর সকালে কিংবা দুপুরের রোদে-
সেই উদ্যান সুবিশাল ছায়া হয়ে যেতো বটবৃক্ষের মতো
সে কারণে কোনো বৃষ্টি অথবা রোদ
কখনো পারেনি ছুঁতে
বৃষ্টি অথবা কোনো রোদ শুধু নয়-
বেদনার কোনো অশুভ শক্তি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
এ পথ কখনো আমাকে একলা ফেলে
দূর কাফেলায় সঙ্গী হয়নি কারও
কী যে মমতায় বিছিয়ে রাখতো-
পথের ওপর কালো কালো ঘাস
ভাটিপথে বাঁধ নির্মাণ করে আটকে রাখতো ঝিম উষ্ণতা।
ওই পথ কোনো পথের গল্প নয়-
বলছি বাবার কথা- সেও প্রায় তিন যুগ-
সেই পথ আর উদ্যান ছিল আমার বাবার বুক
হামাগুড়ি শেখা থেকে শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়
কখনো পরম আদর-ছায়ায় গন্তব্যের দিশা
আশা ভরসার, পায়ে দাঁড়াবার কুশীলব মন্ত্রণা
সবই অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে বাবা...
এত বছরের শেষে একটাই মিনতি আমার-
বাবা, যদি পারো, ক্ষমা করে দিও!
আমি জানি, তুমি ক্ষমা শব্দের নীরব পূজারি
শিখিয়েছো ক্ষমা করা উত্তম আর বড় গুণ।
আজ যে তোমার হামাগুড়ি দেয়া সময়ের বুকে
আমি দৃশ্যত চাদরও তো মেলে ধরতে পারিনি
\হ-দিতেও পারিনি খেলার সঙ্গী
বাবা, ক্ষমা করে দিও...