রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

আমি আছি

প্রমিত দেবনাথ
  ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০
আমি আছি

মাঝরাত। ঘরের ভেতর ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকা মোমবাতির শিখার শেষ প্রহর চলছে। জানালার বাইরে শনশন বাতাসের প্রবাহে জানালা আর দরজাটা ঝপঝপ শব্দ করছে।

তৃণার ঘুম ভেঙে গেল। জানালাগুল বন্ধ করতে হবে। বৃষ্টির জলে ওর টেবিলের বইখাতাগুল ভিজে চুপসে গেছে। জানালাগুল বন্ধ করতেই দক্ষিণ পাশ থেকে আসা একটা মৃদু, কম্পমান আলোয় হঠাৎ চমকে উঠল সে। একী! ওই পাশের দরজাটা বন্ধ করে শুইনি ও! না! দরজা তো ও বন্ধ করেছিল! হ্যাঁ, স্পষ্ট মনে আছে ওর! দরজা খোলা রেখে কেনোই বা ঘুমাবে ও! ও তো জেগে থাকা অবস্থাতেও সবসময় ঘরের দরজা বন্ধই রাখে! তাহলে দরজা খুলল কীভাবে! ও দরজার কাছে এসে খুব ভালোমতো চোখ বোলাল। দরজা তো ঠিকই আছে! কোনো জায়গায় ভাঙা নেই। তাহলে! হঠাৎ ভয়টা যেন আরও ঝেকে বসছে তৃণার মনে। বাইরে থেকে সশব্দে একটা হাওয়া প্রবেশ করল ওই ঘরে। মৃদু, কম্পমান আলোটা যেন দূর থেকে ইশারা করে ডাকছে তৃণাকে। তৃণা বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে! দোতলায় তমা আছে। তাকে ডাকবে ও? কিন্তু এতো রাতে! কয়টা বাজে? ঘড়িতে সময় দেখল তৃণা। রাত দুটো! না এতোরাতে ডাকা ঠিক হবেনা।

তৃণা দরজাটা আরেকটু খুলে বারান্দায় পা রাখতেই ওর মনে হলো একটা প্রাণী ওর পায়ের পাশ দিয়ে সরে গেল! একটা কুকুর! এতো রাতে ও জেগে আছে আজ! ও তো শুনেছে রকি সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল অব্দি জেগে থাকে না! তাহলে!

তৃণার কাছে সবকিছু এলোমেল লাগছে। সে যে কেন বাইরে বেরিয়ে এল সে কথাও সে জানে না। হঠাৎ তৃণার মনে হলো ওর নাম ধরে কেউ ডাকল। ভুল শুনেছে ও? না! আবার! একটা নারীকণ্ঠ! ফিসফিস করে ডাকছে, 'তৃণা..'

তৃণা শঙ্কিত কণ্ঠে আওড়াল, 'কে?'

কোনো প্রতু্যত্তর এল না।

বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে। দমকা হাওয়ার ঝাপটায় বৃষ্টির জলে বারান্দাটা একদম ভেসে গেছে। দূরের ওই আলোটা এখন আর মৃদু নয়, ক্রমশ যেন গাঢ় হয়ে উঠছে। বারান্দার বৃষ্টির জলেও ওই আলোর শিখা স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠেছে।

তৃণার ফোনে কেউ কল করেছে। অবিরত বেজে চলেছে ফোনটা। ও ওর ফোন ঘরে ফেলে এসেছে। এখান থেকে শুনতে পেয়ে ঘরের দিকে এগুচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ তৃণার মনে হলো কেউ ওর পিঠে হাত রেখেছে। চমকে উঠল ও। পিছন ফিরে তাকাতেই তমার মুখাবয়ব ভেসে উঠল। একটু যেন স্বস্তি পেল তৃণা।

'কি রে! সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, ধরছিস না! কী হয়েছে? সমস্যা হয়েছে কোনো? আর তুই বাইরে কি করছিস? পাগল-টাগল হয়েছিস? নাকি!'

'না..না..' কি যেন ভাবতে ভাবতে বলে তৃণা।

'কি না না! আমি তোর চিৎকার শুনলাম দোতলা থেকে। কিসব বলছিলি! ফোন দিলাম তাও ধরলি না! আর এখন বারান্দায়..কী এসব! আংকেল যদি জানতে পারেন না..! আস্ত রাখবে না তোকে! নতুন এই জায়গায় এসে মেয়ে পাগলামি করলে কারও মাথা ঠিক থাকে বল!'

তৃণা কিছু বলল না, শুধু না সূচক মাথা নাড়ল।

তৃণা ওর বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। গ্র্যাজুয়েশন কমপিস্নট করার পর ঝিনাইদহের একটা সরকারি স্কুলে চাকরি পায় সে। বাবা-মা নেহাৎই মেয়েটাকে একা ছাড়তে চাননি। বলেছিলেন ওর চাকরিই করা লাগবে না। কিন্তু তৃণা শোনেনি। এখানে এসে একটা বাংলো মতোন বাসা স্কুলের কাছাকাছিই পেয়ে গিয়ে বেশ খুশি হয় তৃণা। ওর বান্ধবী তমার সূত্রেই এই বাড়িটাতে আসা। ভাড়াও কম। ভাবল থেকে যাওয়া যায়। তমার সঙ্গে ওর হাজবেন্ড আর ৪ বছরের একটা ছেলে থাকে। তমা আর তমার হাজবেন্ড দুজনেই চাকরি করছেন। নিচের ঘরটা খালি ছিল। তমাও পরামর্শ দিল, এখানে তৃণা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই থেকে যেতে

পারবে।

তৃণাকে ঘরে এনে শুইয়ে দিয়ে উপরে চলে গেল তমা। কিন্তু কিছুতেই যেন ঘুম আসতে চাচ্ছিল না তৃণার। তার নাম ধরে কে ডাকল সে সময়? নাকি ও ভুল শুনেছে! আর ওই আলোটা কিসের! ওই আলোটা যেখান থেকে আসছিল; সেখানে কি কেউ থাকে!

সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হলো তৃণার। শুক্রবার, তাই স্কুল নেই। বাইরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তমা খুব সম্ভবত বাইরে বেরিয়েছে ওর হাজবেন্ড আদিত্যের সঙ্গে। ঘুম যদিও বা ভেঙেছে তৃণার, তবে ঘুমের ঘোরটা কাটেনি ওর। মাথাটাও ঝিমঝিম করছে। একটু চা চাপালে ভালো হতো। তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা নিয়েই রান্নাঘরে যায় তৃণা। সিদ্ধ হওয়ার জন্য জল চাপিয়ে দেয় সে। হঠাৎ তৃণার মনে হলো ওর ঘর থেকে একটা ক্ষীণ শব্দ আসছে অনবরত। শব্দটা এমন যে, কেউ যেন কলম দিয়ে টেবিলে কোনো ছন্দ সাজাচ্ছে। খুব ভয় হতে থাকে তৃণার। আরও কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শোনে। না হয়েই চলেছে শব্দটা! কেউ কি ঢুকেছে ওর ঘরে! কিন্তু কে ঢুকবে! দরজা তো লক করা ভেতর থেকে। ও এবার ধীরপায়ে অতি সন্তর্পণে সামনে এগিয়ে যায় একটু একটু করে। আস্তে আস্তে পর্দা সড়িয়ে উঁকি দেয় ভেতরে। না, কেউ নেই! শব্দটাও থেমে গেছে। কিন্তু, খানিক বাদেই বেশ অদ্ভুত একটা বিষয় লক্ষ্য করে তৃণা। ওর টেবিলের বই-খাতাগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে! কে করেছে এসব! কী হচ্ছে এসব! তৃণা নিজেকে সামলে নিয়ে টেবিলটার কাছাকাছি এগিয়ে আসতেই যা দেখল তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না! ওর খাতায় একটা ছবি আঁকা! বেশ পাকা হাতের কাজ। ছবিটায় নারীদেহের উদরের অংশ দৃশ্যমান। তৃণার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। কী হচ্ছে এসব তার সঙ্গে! কেউ কী মজা করছে! কিন্তু কে মজা করবে! ছবিটা কে আঁকল! ও ঘরের এদিক-সেদিক তন্নতন্ন করে খুঁজল। কোথাও কেউ নেই!

'তমা, আমি বাসাটা ছেড়ে দেব। তুই পিস্নজ আমাকে না করিস না!'

'কী বলছিস তুই! আংকেল আমার ওপর তোর দায়িত্ব দিয়েছে আর এখন..'

'আমার মনে হচ্ছে, সামথিং ইস টু মাচ রং! আমি আর নিতে পারছি না, তমা!'

'কিন্তু তুই যা বলছিস এটা সম্ভব না, তৃণা! তুই কেন বুঝতে পারছিস না? দেখ, হয়তো রাতে ঘুমের ঘোরে এসব এঁকেছিস!'

'আমি কখনোই আঁকিনি, তমা! আঁকাবুকি আমার একদম পছন্দ না। আর তাছাড়া আমার ঘরে আঁকায় রং দেওয়ার মতো কোনো সরঞ্জাম নেই। কিন্তু..কিন্তু..ওখানে রং ছিল! আর.. আর..আমি তুলি, রং কিছু খুঁজে পাইনি পুরো ঘরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও!' বলেই প্রচন্ড আতঙ্কে ফোপাতে শুরু করল তৃণা।

তমা বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। তৃণা যা বলল কথাগুলোর যুক্তি রয়েছে। কি হচ্ছে আসলে সেও কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

সন্ধ্যা ৭টা। এ সময় ঘুমায় না তৃণা। কিন্তু আজ ঘুমিয়ে আছে। বিকালে কখন ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই ওর। বাইরে থেকে ঠান্ডা একটা হাওয়া ঘরে প্রবেশ করছে। তৃণার ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল। ঘুম ভেঙে গেল তৃণার। উঠে বসল সে? জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগল। ফোনের দিকে তাকিয়ে বিচলিত হয়ে পড়ল সে। আরতি! এই নামে কারও নাম্বার তো সে ফোনে সেভ করেনি! পরক্ষণেই একটা বিষয় মনে পড়ে গেল ওর। আরতি! এই নাম তো...সঙ্গে সঙ্গেই প্রচন্ড ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে মেঝের একপাশে বসে পড়ল ও। না, এটা হতে পারে না! এটা কিছুতেই হতে পারে না!

ফোনটা বিছানার একপাশে অনবরত বেজে চলেছে। তৃণা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে চলেছে, 'আমি এই কল রিসিভ করব না...কিছুতেই করব না।'

বাইরের ঠান্ডা হাওয়াটা পুরো ঘরকে শীতল করে তুলেছে। হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা খুব অদ্ভুত, মৃদুছন্দ ঘরের ভেতর যেন প্রবেশ করেছে। ছন্দটা একটা সুর সাজাচ্ছে চারদিকে।

সঙ্গে কারও পায়ের নূপুরের শব্দ ভেসে আসছে। কেউ নূপুর পায়ে নৃত্য করছে। তবে অতি সন্তর্পণে।

তৃণা চারদিকে তাকাচ্ছে। না, কেউ তো নেই। তাহলে এ শব্দগুলো কোথা থেকে আসছে? তৃণার মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে যাবে! হঠাৎ নৃত্য থেমে গেল। বাইরের হাওয়াটা আরও শীতল হয়ে কনকনে একটা অনুভূতি জাগাচ্ছে শরীরে। তৃণার এবার মনে হলো ওর খুব কাছে একজন কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। তার নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সে! একটা কিশোরী ছায়ামূর্তি! হাওয়ার শব্দের সঙ্গে একত্র হয়ে কয়েকটা শব্দধ্বনি তৃণার কানে প্রবেশ করল, 'মা..মা.. আমি আছি! এই যে দেখ...!'

তৃণার সারাশরীর অবশ হয়ে এলো! কথা বলা বা নড়াচড়ার সমস্ত শক্তি হারিয়েছে ও। মনে হচ্ছে যেন এই মুহূর্তেই জ্ঞান হারাবে। শেষবারের মতো চেষ্টা করল তৃণা! শরীরের অবশিষ্ট শক্তি একত্র করে চিৎকার করে উঠল। সেই চিৎকার বন্ধ দরজার আস্তরণ ভেদ করে দোতলা পর্যন্ত পৌঁছল কিনা তা বুঝে উঠতে পারল না তৃণা!

তৃণার যখন জ্ঞান ফিরে, সে নিজের সামনে তমা, ওর হাজবেন্ড আর একজন ব্যক্তিকে দেখতে পায়।

'তৃণা, এখন শরীর কেমন লাগছে তোর?' তৃণার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে তমা বলে।

তৃণা কিছু বলল না।

'তুই যে কী করছিস, তুই জানিস! এতো ভয় কেন পাচ্ছিস, কী নিয়ে পাচ্ছিস সেটাও তো বলছিস না! কাল রাতে তোর চিৎকার শুনে ঘরে এসে তোকে অজ্ঞান অবস্থায় পাই! কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এদিকে ফোন করে বাসায় আসতে বলি। ওই ডাক্তারবাবৃকে নিয়ে আসে।'

হঠাৎই যেন কী মনে পড়ে যায় তৃণার! ও বিড়বিড় করে বলে ওঠে, 'আ..আ..আরতি..আরতি..! ও আমাকে ছাড়বে না, তমা! ও আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে মেরে ফেলবে..!

তমা আর আদিত্য ডাক্তারবাবুকে এগিয়ে দিতে এসেছে। চিন্তিত মুখে তমা বলে, 'স্যার, কি হয়েছে ওর?'

'ওনার অন্য কোনো প্রবলেম নেই। শুধু একটু পরপর কিছু একটা নিয়ে ভয় পেয়ে উঠছেন। কিছু একটা নিয়ে বেশ শঙ্কিত উনি। কালরাতেও এজন্যই হঠাৎ প্রেশারটা ফল করেছিল। আর উনি সেন্সলেস হয়ে যান। আর আরেকটা ব্যাপার, উনি হ্যালুসিনেট করছেন। আপনারা একটা কাজ করুন। উনাকে একটু সময় দিন আর জানার চেষ্টা করুন ওনি অ্যাক্সেক্টলি কি দেখে, শুনে বা ভেবে নিজের মনের ভেতর এই ভয়ের জন্ম দিচ্ছেন।'

তৃণা ঘুমাচ্ছে। তমা তৃণাকে ওর ঘরে নিয়ে এসেছিল ডাক্তারবাবু চলে যাওয়ার পর। এলোমেলো একটা বাতাস বইছে ঘরজুড়ে। জানালার সামনে পর্দাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। বাইরে থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসছে ঘরে। শব্দটা ক্ষীণ তবে বেশ স্পষ্ট।

আজ সকাল থেকে তৃণার বাবা-মা বেশ কয়বার তমার কাছে ফোন দিয়েছেন। উনারা আসতেও চেয়েছেন। তৃণা না করে দিয়েছে। বয়স্ক মানুষ, একা একা এতোটা পথ আসবেন.. তমা বলেছে সে-ই তৃণাকে দেখে রাখবে। সমস্যা হবে না!

তৃণার পাশে বসে থাকতে থাকতে গানের সুরে কখন যে ঘুম চলে এসেছে যেন বুঝতেই পারেনা তমা। হঠাৎ ঘুমের ঘোরের মধ্যে হঠাৎ তমার মনে হয় কেউ খুব মৃদুস্বরে তৃণার নাম ধরে ডাকছে!

তমার ঘুম কেটে গেল। কী হলো! সে কী ভুল শুনল! কেউ তো নেই এখানে। গানের সুরটাও নেই! তমা বেশ অবাক হলো। সে যদিও ঘুমের ঘোরে ছিল, তবে ডাকটা বেশ স্পষ্ট ছিল!

তৃণার দিকে ফিরতেই চমকে উঠল তমা। তৃণার মুখ ফ্যাকাসে। চোখগুলো খোলা। নির্বাক দৃষ্টি। ওর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে।

তমা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, 'তৃণা, কখন উঠলি? ঘুম হয়েছে ঠিকঠাক?'

কোনো উত্তর এল না।

'কি রে, তৃণা, কিছু বলছিস না কেন?'

এরপর যা ঘটল তার জন্য তমা বোধহয় কোনোদিন প্রস্তুত ছিল না। একটা ক্রোধান্বিত শিশু নারীকণ্ঠ হঠাৎই বলে উঠল, 'আমি আরতি, আরতি, আরতি!'

কি ভয়ংকর সে কণ্ঠ! শরীরের রক্ত হিম হয়ে যায় তমার। সেই কণ্ঠটা যেন তৃণার নাম সহ্যই করতে পারছে না তমার মুখে। আরতি! এই নামটাই তো তৃণা বলছিল সেসময়! তৃণার মনে হচ্ছে সে জ্ঞান হারাবে। সবকিছু নিমিষেই অন্ধকার হয়ে এল তৃণার চোখে!

আদিত্য সবটা তমার মুখে শুনে থ হয়ে গেল।

'তৃণা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তমা। কিন্তু তোমাকে তো ঠিক থাকতে হবে। তৃণার নেগেটিভিটিগুলো তোমার মধ্যেও স্প্রেড করছে। সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ?'

'না, আদি। আমি যা বলছি, ঠিকই বলছি। সামথিং ইজ অ্যাক্সট্রিমলি রং। আমি এখন শক্ত আছি। এটুকু আমি বলতে পারি, যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না। সেদিনের তৃণার খাতার ড্রয়িং, তৃণার এ অবস্থা, আমার শোনা ওই শিশুকণ্ঠ- কোনোকিছুই কিন্তু স্বাভাবিক না আদি। দেখ, আমি মানছি, একবিংশ শতাব্দীর তরুণী হয়ে এসব কথা বলা আমার সাজে না। কিন্তু...'

'কিন্তু...?'

'উহ্‌...আমার মনে হয় আমাদের তৃণার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা দরকার। আরতি কে!...'

তৃণা এখন কিছুটা স্বাভাবিক। গম্ভীরভাবে একদৃষ্টে ঘরের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। তমা আর আদি অনেকক্ষণ হলো ওর ঘরে এসেছে, তবে এখনো কেউ কিছু বলেনি। এবার তমা বলে, 'তৃণা, আমি বুঝতে পারছি, যা হচ্ছে, তা ঠিক হচ্ছে না। তোর সঙ্গে, ইভেন আমার...কিন্তু, আমাদের কিছু বিষয় জানা দরকার। আমি জানি তুই আমাদের একটু হলেও হেল্প করতে পারবি।'

তৃণা বিড়বিড় করে বলে, 'কি জানতে চাস, বল।'

তমা এবার ধীরে ধীরে বলে, 'আরতি..'

'আরতি আমার মেয়ে।'

মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তমা ও আদিত্যের।

'তুই কি পাগল হয়েছিস? কি বলছিস, জানিস তুই!'

'ও আমার মেয়ে, তমা। আরিয়ানের ব্যাপারে তো তুই জানিস। ওর সঙ্গে এখন আমার সম্পর্কের

বিচ্ছিন্নতার ব্যাপারটাও!'

একটু থেমে আবার বলে তৃণা, 'হঠাৎ কী হয়ে যায়...! আমরা অ্যাবোরশনের সিদ্ধান্ত নেই শেষ পর্যন্ত আমার আর আরিয়ানের সম্পর্কটাও আর...!'

তৃণা ঘুমিয়ে আছে। দমকা হাওয়া বইছে বাইরে। তমা আর আদি অনেকক্ষণ থেকে দরজায় নক করছে। তৃণা দরজা খুলছে না। তৃণার চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল ওরা দোতলা থেকে। বাতাসের হাওয়ায় এখন একটা বেশ ক্ষীণ শব্দের সুর যেন দোল খাচ্ছে। আদিত্য আর তমা দরজার ওপাশে স্পষ্ট শুনতে পায় একটা ক্ষীণ অথচ স্পষ্ট শব্দ, 'মা!..মা!..আমি আছি! এই তো..আমি এসেছি, মা!'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে