তোমার চোখ এতো লাল কেন
প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
শারমিন সুলতানা রীনা
রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটে সিমির ঘুম আসেনা। মাঝ রাতে ঘরময় পায়চারি অথবা জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অন্ধকারে চোখ যেখানে স্িহর দূরে কিছু গাছের পাতা ঝাপটানো শুনতে পায় একটা দুটো পাখির কিচির মিচির। নিবিড় নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে নিজেকে মিশিয়ে ফেলে সিমি।একটা চেয়ার টেনে বেলকুনিতে বসে।হালকা হিমেল বাতাসের দোলা লাগে চোখে মুখে আকাশের দিকে তাকায়। চাঁদকে ঘিরে নক্ষত্রের লুকোচুরি উপভোগ করে। কী চমৎকার ভাবে ঝলমল করে নক্ষত্র। প্রকৃতির কী অপরূপ খেলা। নিজেকে বিলিন করে দেয় প্রকৃতির মাঝে। হেড ফোন কানে লাগিয়ে গান শোনে রবী ঠাকুরের সেই গানটি "যে রাতে মোর দুয়ারগুলি যায় ভেঙে ঝড়ে জানিনাইতো তুমি এলে আমার ঘরে।" হঠাৎ ফোনে ম্যাসেজ আসার শব্দ শুনে ম্যাসেজটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর উত্তর লেখে কে আপনি আপনাকে চিনি বলেতে মনে হয়না।অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর আসে অনেক দিন আপনি আমার ফেসবুকে আছেন কিন্তু কথা হয়নি।তাহলে আজ কেন কথা বলতে আসলেন এনি প্রবলেম?
অপর প্রান্ত থেকে উত্তরটা এভাবেই আসে সমস্যা আমার নয় আপনার।সিমির রাগ চরমে ওঠে একেতো এতো রাতে ম্যাসেজ দেয়া তারপর আবার বেশী কথা।
\n: কী বলতে চান সহজ করে বলেন। আমি জেগে আছি তাতে আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে বলেতো মনে হচ্ছে না তাছাড়া আপনি জেগে না থাকলে বুঝলেন কিভাবে আমি জেগে আছি?
\n:প্লিজ নো এক্সাইটেড আমি অনেক দিন ধরে আপনাকে ফলো করছি আপনি প্রায় রাত জাগেন।এভাবে রাতের পর রাত না ঘুমালে শরীর মন দুটোই আপনার বিরুদ্ধে চলে যাবে।আমি বাংলাদেশের বাইরে থাকি আপনার থেকে দশ ঘন্টা পিছিয়ে আপনার গভীর রাত আমার মধ্য দুপুর।
\n: আপনার কী খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই ? আপনি আমাকে কেন ফলো করছেন।এটা কোন ধরনের ভদ্রতা প্লিজ আমাকে আর ফলো করবেন না।আমাকে আমার মতো চলতে দিন।আমার রাত যাপনে আপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে বলেতো মনে হচ্ছে না।
\n:ক্ষতি হচ্ছেনা আপনি কি করে বুঝলেন।আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি চাই আপনি ভালো থাকুন।
\n: ধন্যবাদ এবার আপনি আসতে পারেন। আমি খারাপ আছি সেটা আপনাকে কে বোললো।আপনি কি গোয়েন্দা হিসেবে আমার পিছনে লেগেছেন নাকি।যদি তাই হয় করজোড়ে বলছি প্লিজ ফিরে যান, আমাকে আমার চলতে দিন।আর আমি কারো ব্যাক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা পছন্দ করিনা। আমার ব্যাপারেতো নয়-ই
\n:ওকে আমি এখন চলে যাচ্ছি আপনার রাত জাগা দেখলে আমি আবার আসবো। মনে রাখবেন কথাটা।
যতোসব ঢং মনেমনে গদগদ করে সিমি। চিনি না জানিনা হুট করে জ্ঞান দিতে আসা
সিমি বুঝতে পারেনা লোকটা আসলে কে কেথায় বা থাকে কি করে কোন কিছুই তার সমন্ধে জানা গেলো না।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় ঘুম তার কাছে অধরা এক পাখি চোখ বুজে থাকলেও ঘুম আসেনা।শরীর জুড়ে এতো অবসাদ তবু চোখে ঘুম নেই।ঘুমের ওষুধের রেশও সামান্য সময়ের জন্য। ভোরে কারো ফোনে ঘুম ভাঙে সিমির। ম্যাসেন্জারে ফোন। এতো ভোরে তাকে সাধারণত কেউ ফোন দেয় না।তারপরও ঘুম জড়ানো চোখে মেবাইলটা তুলে নেয়।হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে বলতে থাকে
\n: রাতে আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম। ফোনটা কেন ধরেননি বুঝলাম না।আর শুনুন রাতে আপনি ফোনটা বন্ধ করেওতো ঘুমাতে পারেন।
\n: সরি আমি শুনি নি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিলাম।
অপর প্রান্তে থাকা মানুষটার কণ্ঠে কিছুটা শাসন।
\n: আপনি এতো দায়িত্বহীন হলে চলবে কিভাবে? এইযে কানে হেড ফোন দিয়ে ঘুমান আপনার কতো ধরনের ক্ষতি হতে পারে তাকি আপনার জানা আছে।
\n: আপনি জানলে হবে আমার জানার প্রয়োজন নেই।আর শুনুন উপযাচক হয়ে আমাকে আর বুদ্ধি দিতে আসবেন না। কে আপনি আপনাকে আমি চিনি না নামও জানি না। আপনার সমন্ধে আমি এখনও কিছুই জানি না তবু কেন আমাকে জ্ঞান দিতে আসেন।আমার জায়গায় আপনি থাকলে বুঝতেন কত ধানে কত চাল।জীবনের মানেটা বুঝতে পারতেন।
\n: আমি সবই বুঝি সবই জানি শুনুন আমার পরিচয়। আমি শাহরিয়ার ইমন একসময় সরকারের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা ছিলাম বর্তমানে চাকরী ছেড়ে কানাডা স্হায়ী ভাবে বসবাস করছি
\n: কে কে আছে আপনার সাথে?ভাবী এবং বাচ্চা কজন আপনার।
\n: সরি আমি বিয়ে করিনি একাই আছি কানাডাতে
\n:স্যাক খেয়েছেন মনে হয়
\n: এভাবে বলালাটাকি আপনার ঠিক হলো আমিতো কষ্টও পেতে পারি।মানুষ কত কারনে বিয়ে করে না আমারও হয়তো তেমন কোন কারন আছে।
\n: ওকে সময় করে শুনবো আপনার কথা।এই ভাবে বলার জন্য সরি।আমার কথায় কেউ কষ্ট পাক সেটা আমার কাম্য নয়।
সময় বয়ে যায় সময়ের নিয়মে।ভালোবাসি মুখ ফুটে বলার বিষয় না সেটা নিতান্তই অনুধাবনের বিষয়।সিমি আর ইমন কখন যে দুজন দুজনের কাছাকাছি চলে আসে টের পায় না।ইমনের কণ্ঠের কাছে হেরে যায় সিমি।পণ করেছিলো কখনও আর কারো সাথে নিজেকে জড়াবে না কিন্ত কেমন করে যেন হেরে যায় ইমনের কাছে।ইমনের সাথে কথা বলার জন্য সিমি ছটফট করে। রাত বারোটার আশায় বসে থাকে সিমি।ঠিক বারেটায় ইমনের ফোন।তার ঘুমহীন চোখ আরো ঘুমহীন হয়ে যায়। খুব ভোরে সিমির ঘুম ভেঙে যায় ইমনের ওখানে রাত। প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুনের কবিতা পড়ছিলো সিমি।হঠাৎ কি মনে হয় কবিতাটা পেষ্ট করে পাঠিয়ে দেয় ইমনকে।কিছুক্ষন পর কবিতাটা আবৃত্তি করে পাঠায় ইমন।সিমি তাকে ফোন দেয় দুষ্টামি করে বলতে থাকে তোমার চোখ এতো লাল কেন?
এমনি হাজারও কথার দোলাচলে সময় গড়িয়ে যায়।সিমি কবিতা লিখতে পারে ইমনকে নিয়ে কবিতা লিখে পাঠিয়ে দেয় হটসআপে ইমন আবৃত্তি করে পাঠায় সিমিকে।তাদের ভালোবাসা পাল তোলা নৌকার মতো স্রোতের টানে বয়ে যায়।দুইজন দু'প্রান্ত থেকে গলা মিলিয়ে গান গায়।ইমনের কণ্ঠ সিমিকে সন্মোহিত করে ফেলে।গান আবৃত্তি উপস্থাপনা কথা বলার ষ্টাইল সব কিছুইতেই সিমি সন্মোহিত হয়ে যায়।সিমিকে নিয়ে ইমনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সিমিকে নতুন এক অধ্যায়ের সাথে পরিচিত করে।জীবন নদীর তীরে সাঁতার কাটে নব উদ্যেমে।কিন্ত সিমি বুঝতে পারেনি অন্ধকার সিড়ি বেয়ে আসা আগন্তুক আবার ফিরে যাবে সেই একই পথে।হাজারও প্রতিশ্রুতির প্ররেচনায় প্ররোচিত করে ফিরে যাবে আগন্তুক। না দেখা স্পর্শহীনতায় একজন মানুষ আরেকজন মানুষের অন্তরে এভাবে জুড়ে থাকতে পারে বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছে গুরুত্বহীন কিন্ত যাকে সে রাজপ্রাসাদের স্বপ্নে সন্মোহিত করেছিলো তাকে কি পৃথিবীর আর কোন কিছু দিয়ে মিথ্যা বলে অভিহিত করা যায়?আজো সিমি ইমনের পথপানে চেয়ে আছে জানে সে কখনও আসবে না।আসবেনা তার অপেক্ষার অবসান ঘটাতে।তবু প্রতারিত মন স্বপ্ন দেখে হারিয়ে যায় দূর থেকে দূরে। তার স্বপ্নের মানব এসে সামনে দাঁড়িয়ে বোলবে আমি এসেছি তোমার কল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করতে। তুমি আমাকে মন প্রান দিয়ে চেয়েছো তাই আমি আর দূরে থাকতে পারিনি।তোমার নিরব নির্বিকার চোখের ভাষায় আমি সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এসেছি।এবার হাত ধরো প্রিয়া আমার। আর কখনও আমরা ভিন্ন হবোনা আমাদের ভালোবাসা ধ্রুবতারার মতো সত্য।এবার হাত ধরো আমার। পিছনে ফেরার আর অবকাশ নেই।তোমার সকল অপেক্ষার আজ হোক অবসান।তাহলে তুমি শুধু একবার প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুনের সেই কবিতাটা আমাকে শোনাও "তোমার চোখ এতো লাল কেনো"আমি আর ভাবতে পারছি না দিনের পর দিন যেই নাম ধরে ডেকেছি নির্জনে চোখের জল ফেলেছি। পাবো বলে আর আশা করিনি কিন্তু সে আমাকে ছুঁয়ে আছে। আমার সকল সত্তা জুড়ে যার বিচরণ সেতো মিথ্যে হতে পারে না।প্রিয়তম আমার একবার শুধু আমাকে অনুভব করতে দাও তুমি আমার স্বপ্ন আমার কল্পনা আমার বাস্তবতায় নাকি আমার অবচেতন মনের গভীরে। যেখানে ছোট্ট একটা পৃথিবী। সেই পৃথিবীতে তুমি আমি আর আমাদের কাঙ্িক্ষত কবিতার বসবাস।
ঘোর ভেঙে যায় সিমির তাকে মহাশূন্যতা গ্রাস করছে কোথাও কেউ নেই।এই সব তার দীর্ঘ দিনের লালিত অবচেতন মনের কল্পনা।
বুকের ভীতরে নিরব এক ঝড় সব কিছু ওলট পালট করে দিচ্ছে।মানুষের মন বড় বেয়ারা কিছুই বুঝতে চায়না।মিথ্যে কল্পনা বিলাস, ভাবনার অতিরঞ্জন সমুদ্রের কাছে ঝরণার বয়ে যাওয়া গল্পের মতো সব কিছু মিথ্যা পরিপূর্ণ। আবেগ উচ্ছাস এখানে গৌন।সিমি এখনও কল্পনার স্রোতে ভেসে ভাবনার দোলনায় দুলে ওঠা মনে কল্পনায় এঁকে ফেলে এক পটে আঁকা ছবির মতো ঘর দুয়ার।ভালোবেসে যে মন নীলকণ্ঠ পাখির মতো বিষকে অমৃত ভেবে গলায় তুলে নেয় সেই মনে কখনও সংকীর্ণতা বাসা বাঁধতে পারে না।
ইমনকেও কখনও সে খাটো করে দেখে না ভালোবাসার মানুষকে ছোট করার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই।না আসুক জীবনে সে, তবু কল্পনার দুয়ারে দাঁড়িয়ে থেকে অদ্ভুত এক আত্ম দর্শনে চোখের জলে মিশে থাকা উপলব্ধি যা তার সমস্ত সত্তা জুড়ে বিরাজমান। প্রেমিক কখনও প্রতারক হতে পারেনা।ভালোবাসার মানুষকে ছোট করে দেখার মধ্য কোন কৃতিত্ব থাকতে পারে না।যাকে সে বুকে স্হান দিয়েছে।মাথার মুকুট করেছে যার ভালোবাসায় নিজেকে পুর্ণ করেছে তাকে নিয়ে কখনও বিরুপ মনোভাবকে ঠাঁই দেবে না অন্তরে।ইমন তার জীবনে ফুল হয়ে না ফুটুক। কাটা হয়ে ক্ষতবিক্ষত করুক তবু তাকে ঘৃণা করার মতো দুঃসাহসী সে হতে পারবে না।প্রেম শুধু মিলন ঘটাতেই আসে না।দু চোখে দীঘি হয়ে পদ্ম হয়ে ভাসতেও আসে।নিজেকে রক্ষা করতে যতোবার ঘৃনার তীর ছুড়েছে। তা ফিরে এসে তাকেই পুনরায় বিদ্ধ করেছে বার বার।আজো তার অপেক্ষার প্রহর গুনে।না আসুক এ জীবনে যদি কখনও কোন ক্ষনে দেখা হয় শুধু একবার কবিতার ভাষায় জানতে চাইবে তোমার চোখ এতো লাল কেন?