বাঙালি সংস্কৃতি উপাত্তের সন্ধানে

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

আলমগীর রহমান
বাঙালি আদি বা প্রথম সাহিত্য বলতে আমরা ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে সংগৃহীত বৌদ্ধ দোহা বা সহজিয়া যা চর্যাপদ বলে পরিচিত। বলা যেতে পারে বাঙালির জাতীয়তাবাদী স্বরূপ এ চর্যাপদের মাধ্যমে প্রথম উন্মোচিত হয়েছিল। এখন সবাই নিশ্চিত বাংলা ভাষার আদি সাহিত্য চর্যাপদ এবং এ সাহিত্য একটি পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য। অবশ্য একটি পরিপূর্ণ সাহিত্য রচিত হয়ে গেলে নিশ্চয় তার পটভূমি আগে থেকেই তৈরি হতে হয়। এ পটভূমি নির্মাণের যে সাহিত্য অর্থাৎ প্রাক চর্যাযুগের সাহিত্য নিশ্চয় বাঙালির ছিল। যা চলমান কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। যার মূল স্বরূপ এখন আর উদ্ধার সম্ভব নয়। হয়তো তার বহু উপদান আমাদের চার পাশে বিরাজমান। আমরা সেই বিরাজমান উপাদানকে এখন আর চিহ্নিত করতে পারছি না। যা আমাদের কাছে একেবারেই উপকরণহীন অপসৃত। চর্যাপদের সমসাময়িক যুগে সংস্কৃতি ভাষায় প্রচুর সাহিত্য রচিত হয়েছে। এগুলো সাধারণত বর্ণবাদী হিন্দু ব্রাহ্মণ কর্তৃক রচিত। পাল উত্তর যুগে অর্থাৎ হিন্দু সেন রাজাদের আমলে এই সংস্কৃতি ভাষা চর্চা প্রচন্ড রকম বেড়ে গিয়েছিল। বর্ণবাদী হিন্দু ব্রাহ্মণরা বাঙালিদের অচু্যত ব্রাত্যজন বলে ঘৃণা চৈতন্য পরবর্তী সময়েও চলমান ছিল। তুর্কি মুসলমান যুগে ব্রজবুলি, মৈথালী ও বাংলাভাষায় কাব্য রচনার প্রসার ঘটে। এ সময়কার প্রসিদ্ধ সাহিত্য হচ্ছে বৈঞ্চব পদাবলি এবং মঙ্গলকাব্য। তার পাশাপাশি রামায়ণ, লাইলি-মজনু, ইউসুফ-জুলেখাসহ অনেক বিদেশি সাহিত্য অনূদিত হয়। তখন থেকেই আরবি, ফার্সি এবং সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে বাঙালিদের পরিচয়। বাংলা সাহিত্য শুরুর থেকে পূর্ণতা পেলেও আসলে তার উপাদান ছিল ধর্মভিত্তিক। দেব-দেবীদের লীলা ও স্রষ্টা কীর্তন আর তত্ত্ব উপদেশ। এসব ধর্মীয় উপকরণের বাইরে সাহিত্য সৃষ্টি হতে পারে তখনো এমন চিন্তা আসেনি তৎকালীন কবিদের মধ্যে। তবুও এসব অপার্থিব বিষয় ছাপিয়ে সে সময়কার সাহিত্যে যে চিত্রকল্প রচিত হয়েছিল তাতে মানবীয় জীবনাচরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এ স্পষ্টতার ভেতর থেকে মানুষ গেয়ে উঠল, 'মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না।' এ বাণী ধর্মীয় ক্লান্তিবোধের বাইরের সৃষ্টি। এ বাণী চিরায়ত মানুষের। সেই থেকে মূল এবং বিকল্পধারা সৃষ্টি। যে সৃষ্টির কোনো শেষ নেই। ছোটদের নয়, বড়দের নয় শুধু আর্থসামাজিকতার ক্রমবিকাশ। যে বিকাশ পুরোপুরি বাঙালির। বাঙালির দর্শন বাউল দর্শন। এ দর্শনে সাহিত্য রচিত হয় ষোড়শ শতাব্দীতে। অবশ্য সেই চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদাবলি ও মঙ্গলকাব্যে বাউল দর্শনের উপাদান বিকশিত হয়েছিল আবহমান বাংলা ও বাঙালির মননে। যার পূর্ণ স্বরূপ অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি লালন সাঁইয়ের হাতে। যার উপস্থিতি অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকজুড়ে। তিনি এ মতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তবে এ মতের উৎপত্তির ইতিবৃত্ত ও বিকাশ নিয়ে রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। কেউ কেউ এ বিতর্ককে হিন্দু বা মুসলিমায়ন করতে চেয়েছে। অনেকে বলেছে, বাজনা বাজানো গাইয়েরাই বাউল। বাংলার বাউল দর্শনের উৎপত্তির যত বিতর্কই থাকুক না কেন এ দর্শনের উৎপত্তি লোকজ বাঙালির সংস্কৃতি থেকে। ড. আহমদ শরীফের ধারণা 'বজ্রকুল' থেকেই কালে 'বাউল' শব্দের উদ্ভব। বৌদ্ধ বজ্রসহজযানীদের থেকে এ মতের আবির্ভাব। পরপর্যায় বিবিধ মত ও দর্শনের অনুপ্রবেশের ফলে দৃঢ়মূল হয়েছে এ দর্শন বাঙালির মননশীল সৃজনীতে। বাঙালির এ বাউল দর্শনে মিশ্রণ ঘটেছে বৈষ্ণব, সুফি ও মরমিবাদের। প্রভাব পড়েছে ব্রাহ্মণ, জৈন, বৌদ্ধ এবং ইসলামের। শ্রীকৃষ্ণ এবং চৈতন্যকেও বাউল বলা হতো। তা অবশ্য 'বৈঞ্চব' ব্যাপক অর্থে। এ বৈঞ্চব বাউল দর্শনের অজেয় কবি চন্ডিদাস ফরাসি বিপস্নবের প্রায় আড়াইশ' বছর আগে গেয়েছিলেন মানবতাবাদের গান- 'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।' তারপরও বাঙালির মননশীলতার বিকাশ ঘটেনি। যতটুকু ঘটেছিল পরবর্তী সময়ে তার থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল। যে পিছিয়ে পড়াটা আবহমান বাংলা ও বাঙালির প্রগতিশীলধারাকে অবদমিত করে ফেলে। যে কারণে মূলধারার বিকাশ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে একাধিক ক্রান্তিকাল। যে ক্রান্তিকালকে অতিক্রম করতে হয়েছে আবহমান বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ঘাটলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, বাংলা সাহিত্য বা বাঙালির মননধারাকে বিভিন্ন ধর্ম ও শাসকরা তার বিকাশ পথকে অবরুদ্ধ করতে চেয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে। আসলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য কোনো কালে কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। যেটুকু পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে তার সবটুকু শাসকের স্বার্থ রক্ষার্থে। যা বিভ্রান্তিকর বিপর্যয়কর অপসংস্কৃতির বিচ্ছিন্নধারা। কারণ পরাধীন দেশে পৃষ্ঠপোষকতা তো দূরের কথা জাতীয় চেতনা এবং ঐতিহ্য বিকশিত হয় না। জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্য উপনিবেশিক বুর্জোয়া প্রভুদের স্বার্থবিরোধী। তবুও পৃষ্ঠপোষকতাহীন অনেক মহত্তম কবিদের উৎকৃষ্ট সৃষ্টি আজকের এ আধুনিক বাংলা কবিতার স্বরূপ। যে স্বরূপ অন্তঃপ্রেরণার তাগিদে সৃষ্টি। লালন উত্তর যুগে মাইকেল মধুসূধন দত্ত প্রায় ছয়শ' বছরের প্রচলিত কাব্যধারায় বিপস্নবী আঙ্গিকের আধুনিকায়ন ঘটায়, যা গতিশীল এবং বিকাশমান। যার শ্রেষ্ঠ বিকাশ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সমকাল পরপর্যায় নজরুল আর জীবনানন্দের মতো কবিও ছিলেন। প্রাসঙ্গিকক্রমে বলতে হয় বাঙালি কোনো নৃতাত্ত্বিক জাতি নয়, ভাষাভিত্তিক জাতি। নৃবিজ্ঞানের মতে বাঙালি একটি শঙ্কর জাতি। যার মধ্যে রয়েছে দ্রাবিড়, মঙ্গলীয়, ককেশিয়ান এবং নেগ্রিট। এসব কারণে বাংলায় নৃতাত্ত্বিক বিবর্তনীয় ধারায় কোনো একক নৃতত্ত্ব বিকশিত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো নির্মোহ গবেষণাও হয়নি। তেমনি নির্মিত হয়নি কোনো অখন্ড কেন্দ্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণে। যার মাধ্যমে সব বিতর্কিত বিষয়গুলোর মীমাংসা হতে পারে। ফলে জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে ব্যবধান বেড়েই চলেছে। এ ব্যবধান এতটা এগিয়েছে যে, স্বাধীনতার মতো বিষয়টি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যে বিতর্ক হাজার বছরের ধারাবাহিক ঐতিহ্যপূর্ণ। আর্যপূর্ব ভারতবর্ষে বর্ণ প্রথা কর্মভিত্তিক সামাজিক বিবর্তনের মাধ্যমে অবিন্যস্তভাবে গড়ে উঠেছিল। তবে আর্যদের মতো এ বর্ণ-বিন্যাস মানুষকে ঘৃণার পর্যায়ে উন্নীত করেনি কখনো। যা ছিল সম্পূর্ণ কর্মভিত্তিক। দ্রাবিড় বাঙালির খাওয়া-দাওয়া আচার-আচরণ বিবাহে বাধানিষেধ ছিল বটে কিন্তু চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে আর্যদের মতো বিধিনিষেধ ছিল না। কর্তাদের মতো জন্মান্তরবাদের ধারণাও ছিল না ভারতীয় অনার্য দ্রাবিড় সমাজে। এই অনার্য অস্ট্রো-এশিয়ান দ্রাবিড়রা গাঙেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে শক্তিশালী কর্মবাদী আর্থসামাজিকতার এক স্বনির্ভর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছিল। বাঙালির কর্মবাদী সমাজে একচলিস্নশটি পেশাভিত্তিক বর্ণ-বিন্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যে বর্ণ-বিন্যাসের কিছু উপাদান আর্য সমাজ থেকে বাঙালি সমাজে এসেছিল। এ বিন্যাসগুলো আজকে পৃথকীকরণ খুবই দুঃসাধ্য। সম্ভবত সেন আমলে এগুলো প্রবেশ করে থাকতে পারে। পাল আমলে এ ধরনের আত্মঘাতী বর্ণ-বিন্যাস ছিল না। এ বিভেদাত্মক বর্ণ-বৈষম্যের ফলে সেন রাজত্ব বাঙালিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। গ্রহণযোগ্য হয়নি সনাতন ধর্মের আবেদন। আর্য সনাতন ধর্মের শ্রেণি-বিন্যাস ভারতীয় জনজাতির সমাজ ও সভ্যতার বিকাশকে বিভ্রান্ত করেছিল। তাদের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশের যে আঙ্গিক বাংলার সমাজ এবং সভ্যতার আঙ্গিকের ধরন সেরকম নয়। তারা তাদের আর্থসামাজিকতা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল বাঙালির ওপর। কারণ তারা তাদের ধর্ম ও দর্শনকে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল লোকজ বাঙালিদের উচ্ছেদপূর্বক জাতপাত ও শ্রেণি-বৈষম্যের সনাতনী আর্যধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থা। উৎপাদন সম্পর্কহীন এক দল পরজীবী ব্রাহ্মণ সমাজ, যা সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। বাঙালির পেশাভিত্তিক বর্ণ-বিন্যাসগুলো ছিল এরকম যেমন; নাপিত, ধাই, সূত্রধর, ধোপা, শুদ্র (চাষি) সুতার, কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, গোয়ালা, মুচি ও চন্ডাল। আর আর্যরা তাদের চতুবর্ণ দ্বারা সারা ভারতবর্ষকে বাঁধতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রথমে বাধাপ্রাপ্ত হয় বাঙালির পেশাভিত্তিক বর্ণের কাছে। বাঙালির এ কর্মজাতের অস্তিত্ব উপমহাদেশের কোথাও ছিল না। আর্যরা সমগ্র ভারতীয় আর্থসামাজিকতাকে চারভাগে বিভক্ত করেছিল এ কথা অনস্বীকার্য। যেমন; ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রীয়, বৈস্য ও শূদ্র। শুধু যে আর্যদের মধ্যে শ্রেণি-বৈষম্য ছিল তা নয়, তৎকালীন পৃথিবীর সব জনজাতির সভ্যতাগুলোয় শ্রেণি-বিভাজনের এ বিষবাষ্প চলমান ছিল। চলমান ছিল জাতি পুনর্গঠনের ধাপে। আর এ বৈষম্যমূলক শ্রেণি সমাজের উদ্ভব আর্যদের আদিনিবাস ইউরোপে। ইউরোপে দর্শন বিকাশের ইতিহাস ধর্মীয় প্রভাব-বহির্ভূত ব্যক্তিকেন্দ্রীয় ধারাবাহিকতার ইতিহাস। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাস লেখা যতটা সহজ, বাংলারটা তেমন নয়। তেমনি রাষ্ট্র ও বিজ্ঞানের ইতিহাস লেখা যতটা সহজ, শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাস ততটা কঠিন। রাজ্য, রাজবংশ, যুদ্ধবিজয় এবং শাসন ব্যবস্থার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা যেমন সুবিধা শিল্প সংস্কৃতি বা দর্শনের ক্ষেত্রে সেরকম নয়। মৌল বিষয়গুলো অভিন্ন থাকলেও পৃথিবীর অন্যসব অঞ্চলে সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ যেভাবে বিকশিত হয়েছে বাংলার সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ সেরকম নয়। কারণ ধর্মীয় আগ্রাসন যেভাবে বাঙালির সংস্কৃতির স্বরূপকে বিকৃত এবং বিভ্রান্ত করেছে সে জন্যে এখন তার মৌল স্বরূপকে উদ্ঘাটন ব্যাপক অনুশীলন ও গবেষণার বিষয়। ফলে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন তত্ত্ব নির্মাণ আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে সম্পন্ন দার্শনিকের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলা ভাষা ভারতীয় প্রাচীন ভাষাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম ভাষা। একক জনজাতি হিসেবে বাংলা ভাষা পৃথিবীর বৃহত্তম জনজাতির জাতীয় ব্যবহারিক ভাষা। বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত সংগ্রহে একসময় অধিকাংশ পন্ডিত বেদ ও উপনিষদের ওপর নির্ভর করতেন। এ ধারণা অবশ্য এখন আর নেই। ভাষা এবং সাহিত্যের বিবর্তনিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা বিকশিত হচ্ছে। ফলে বেরিয়ে এসেছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঠিক ইতিবৃত্ত। বাঙালি জনজাতির কর্মবাদী সংস্কৃতির সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বহিরাগত ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ এবং সুদীর্ঘকালের পরাধীনতার কারণে এ বিকাশের পথ বারবার বিঘ্নিত হয়েছে। বিভ্রান্ত হয়েছে বাংলার সংস্কৃতির ধারাবাহিক বিকাশের ঐতিহ্য। যা হয়েছে তা মিশ্র বা শঙ্করাশ্রয়ী সংস্কৃতি। বিষয়টি এ রকম শাসক এবং জনজাতির সংস্কৃতিতে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্নতা। অর্থাৎ পাল ও সুলতানি আমলে যে দর্শনের সূত্রপাত হয়েছিল তা আর বিকশিত হয়নি। পরপর্যায় মুঘল এবং ইংরেজ শাসনকালে 'অফলা' 'বিভক্তি' শব্দ দুটোর রাজকীয় বিকাশ ঘটেছে পুরো এ দুটো আমলজুড়ে। দ্বিজাতি তত্ত্বের গোলক ধাঁধায় বাঙালির নৈতিক অধঃপতনের অপঘাতে পতিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যসহ ভূখন্ড। যার চূড়ান্ত রূপ বাঙালি জনজাতির বিভক্তি। তবুও বাঙালি পরাধীনতা ও ষড়যন্ত্রের শৃঙ্খল ভেঙে জাতীয়তাবাদী চেতনাসহ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দীর্ঘ সংগ্রামের পথ অতিক্রমে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতা ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনার স্রষ্টা।