মোহাম্মদ রফিকুল কাদেরের কবিতা

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

প্রশ্ন সহজিয়া
আশ্চর্য এক মহাপ্রাপ্তি পুষ্প-পলস্নবে মুখরিত এ জীবন ফিরতে হয়, ফিরতে হবে তাই তো বিষাদে ভরে এ মন। সকাল দুপুর বিকাল গড়িয়ে গেলে আসে গোধূলিবেলা অসমাপ্ত লেনদেন ও কোলাহলে সাঙ্গ হয় মায়ার খেলা। সাঁঝের মায়ায় ম্রিয়মান হলে কোমল সোনালি আলো চরাচরে নৈঃশব্দের ডানায় ভর করে ঘন আঁধার কালো। ফেলে যায় স'বে অসমাপ্ত গদ্য-পদ্য, পেরোতে হয় বাঁক ওপারেও কি আছে ভোর, দেয় কি দোয়েল-শালিক ডাক? দিন জুড়ে ভাঙা গড়ার খেলা, সাঁঝেরবেলা শুধু হাহাকার জন্মমৃতু্যর রহস্যঘেরা মানবজীবন কেন, প্রশ্ন এ আমার? প্রতিবাদী পদ্য প্রতিবাদ দিয়েই তোমার শুরু, আদিতেই কেঁদেছিলে, অধিকার আদায়ে শূন্যে তোমার পা-হাত ছুড়েছিলে জানিয়েছিলে তোমার সরব উপস্থিতি ধরণির পথে তীব্র চিৎকারে; তোমার জয়যাত্রা ভুলো না কোনোমতে। কান্নায় তোমার প্রথম দাবি, প্রতিবাদ করেছ পৃথিবীতে বায়ু-জলে-মাতৃস্তনে আপনার অধিকার কেড়ে নিতে। নতজানু হয়ে কেন আজ ভুলে আছো নিজ অধিকার? হারিয়েছো গান, হারিয়েছো মান, খাচ্ছো যে রোজ মার। ফুরোয় ধান-পান, ফুরোয় ভাত-ভোট-জল-জ্বালানি, বিষাক্ত কর্ণফুলি-গঙ্গা, আর কত রচিবে বোবা কাহিনী? চিৎকারে দাও দাবি; দাও কেন অযোগ্যদের তৈল-ঘৃত? দাবি ছেড়ো না কভু, প্রতিবাদই জীবন, নইলে তুমি মৃত। ভুলো না তুমি- ভাত ও ভোটের অধিকার নির্বিশেষে সমান, মনে রেখো প্রতিবাদেই জন্ম তোমার প্রতিবাদেই অবসান। কিঞ্চিৎ দেহতাত্ত্বিক কিঞ্চিৎ প্রত্নতাত্ত্বিক সবকিছু ক্ষয়ে যায় লুপ্ত হয় প্রাগৈতিহাসিক নগর। থামবে নহবৎ-সানাই, ভাঙবে ঝাড়বাতি নাচঘর। নিউরনে নিউরনে জমানো রঙিন স্মৃতি হবে লীন, অসমাপ্ত পান্ডুলিপির বেদনাভারে ফুরাবে যে দিন। যমুনা শুকাবে, ধসে যাবে তাজমহলের নিপুণ খিলান মুছবে মমতাজ-স্মৃতি, ফুরাবে একদিন বুলবুলের গান। দেহমন্দির হতে ক্ষয়ে পড়বে খাজুরাহোর কারুকাজ কালের থাবায় পড়বে খসে খসে রেশমী বসন সাজ, ভেঙে যাওয়ার পুরনো স্বভাব পুতুলের খেলার ঘর। সবকিছু ক্ষয়ে যাবে, ক্ষয়ে যাবে ঝলমলে এই শহর। দেখেছি দিনের শেষে নিজ ছায়া লুকিয়ে রাখে কায়া। বুঝেছি শেষে- বন্ধন যত সবই মিছে, কেবলি মায়া। প্রণয়ের ধারাপাত সকাল হতে রাতদুপুরে হাতের নাগাল থাকুক কেউ, ঘাড়ের পরে, লোমশ বুকে গভীর শ্বাসে লুটাক ঢেউ। উষ্ণ-কোমল বুকের মাঝে সংগোপনে লুকিয়ে মাথা, তনুমন আর শোণিত ধারায় যাক ছড়িয়ে নীরব কথা, যেমন তরো ফাগুণ মাসের কৃষ্ণচূড়ায় আগুন ডাকে, লেপ্টে থাকা বারোমাসের নকশিকাঁথা যেমন থাকে। যদি স্বপ্নঘোরে হঠাৎ জেগে চুমোর রেখা আঁকে ঠোঁটে, চমকে দেব কপট রাগে, দস্যিপনায় পড়ব লুটে। রাত দুপুরের পেলব পরশ কাঁপন জাগায় মর্মমূলে। তাকে পেলে মরতে রাজি, চড়তে রাজি ফাঁসির শূলে। এমন কেউ থাকুক আমার প্রকাশ্যে বা গোপন বেশে, মায়ার বাঁধন রইবে অটুট সকাল-দুপুর-দিনের শেষে। সব লুটে নিক, ইচ্ছে মতো; হোক সে সদা স্বেচ্ছাচারী, দখলদারের প্রবল দাবি, বলবে- 'কেবল তুই আমারি!'