নষ্ট প্রহর

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০

রেজাউল করিম খোকন
নষ্ট হয়ে যাই বার বার নষ্ট হয়ে যাই প্রভু, তুমি আমাকে পবিত্র কর, যাতে লোকে খাঁচাটাই কেনে, প্রভু নষ্ট হয়ে যাই বার বার নষ্ট হয়ে যাই একবার আমাকে পবিত্র কর প্রভু, যদি বাঁচাটাই মুখ্য, প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই! প্রভু, নষ্ট হয়ে তাই \হ-শক্তি চট্টোপাধ্যায় 'হাই হ্যান্ডসাম!' পাশ থেকে মিষ্টি নারীকণ্ঠের ডাক শুনে সচকিত হয় ইমরান। অবশ্য নারী কণ্ঠে তাকে সম্বোধন করে এমন কামনামদির ডাক আজই প্রথম শোনেনি সে। একই ভঙ্গিমায় নারী কণ্ঠের ডাক শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম পুলকিত হলেও আজকাল মনে তেমন ভাবান্তর ঘটায় না। তারপরও কৌতূহলী হয়ে পাশ ফিরে তাকায়। আবছা আলো আঁধারিতে শাড়ি পরা এক নারীমূর্তিকে দেখতে পায় ইমরান। মহিলাকে দেখে দুর্দান্ত সুন্দরী মনে হয় প্রথম দর্শনেই, তবে তার বয়স অনুমান করা যায় না। চেনাজানা কেউ নয়, আগে কখনো দেখা হয়েছে বলে মনে হয় না। তারপরও তার কণ্ঠে এক ধরনের আমন্ত্রণের সুর অনুভব করে ইমরান। ড্যান্স ফ্লোরে নারী-পুরুষ জোড়ায় জোড়ায় নাচছে। নীল গোলাপি সবুজ আলোর অদ্ভুত মিশেলে স্বপ্নময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এখানে। পাঁচ তারকা হোটেলের ড্যান্স ফ্লোরে সব বৃহস্পতিবারের মতো আজও আনন্দপিয়াসী বিত্তবান নারী-পুরুষের ভিড়টা ক্রমেই জমে উঠছে। ইমরান বিত্তবান শ্রেণির কেউ না হলেও গত কয়েক বছরে তাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে করতে অনেক কিছুই রপ্ত করে ফেলেছে। বিত্তবান শ্রেণির রুচি, চাহিদা, পছন্দ-অপছন্দ অনেকটাই তার জানা এখন। কৌতূহলী হয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে সুন্দরী নারীকে দেখে ইমরান। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকার পর মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে অচেনা সুন্দরী তার কাছে এগিয়ে আসে; একদম শরীর ঘেঁষে দাঁড়ায়। তার শরীরের উত্তাপ টের পায় সে। এক অদ্ভুত নেশা ধরানো সৌরভ অনুভব করা যায়। এটা তার শরীরের গন্ধ আর পারফিউম মিলেমিশে সৃষ্টি হয়েছে-অনুভব করে ইমরান। 'ডু ইয়ু্য ইন্টারেস্টেড ড্যান্স উইথ মি?' মাদকতা ছড়িয়ে বলে সুন্দরী নারী। এক মুহূর্ত দেরি কিংবা দ্বিধা সংকোচ না করে 'শিওর, হোয়াই নট?' বলে ইমরান। অচেনা সুন্দরীকে কোনোভাবেই হতাশ করতে চায় না সে। এমন কারও মনোরঞ্জনে নিজেকে নিবেদন করতেই তো তার এখানে আসা। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বলে নিজের অদৃষ্টকে ধন্যবাদ জানায় সে। অনেক সময় ভালো মক্কেল জোগাড় করতে মধ্যরাতও হয়ে যায়। আজ তেমন পরিস্থিতি হয়নি। হাসি হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে সামনে দাঁড়ানো সুন্দরীকে নিজের মধ্যে টেনে নেয় ইমরান। উষ্ণ নরম শরীরের সংস্পর্শ আজকাল তাকে আগের মতো শিহরিত কিংবা উদ্বেলিত করে না। তারপরও নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে রাখা নারীকে নিয়ে ধীরে ধীরে নাচতে থাকে মিউজিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। 'আমি মনিকা, মনিকা রহমান। বনানীতে থাকি। ইয়ু্য ইমপ্রেসড মি টু মাচ। তোমাকে ড্যান্স পার্টনার হিসেবে পেয়ে ভীষণ ভালস্নাগছে। তোমাকে একনজর দেখেই আমার ভালো লেগে গেছে' ফিসফিস করে জড়ানো কণ্ঠে কথাগুলো বলে ইমরানকে জড়িয়ে ধরে জোরে চাপ দেয় সুন্দরী। 'আই অ্যাম ইমরান, আই অলসো ইমপ্রেসড বাই ইয়ু্য। আই ফিল পেস্নজার উইথ ইয়ু্যর কম্পেনি। ইয়ু্য আর মেকিং ক্রেজি মি। মনিকা তোমায় নিয়ে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিতে রাজি আমি, তুমি রাজি তো?' মনিকার কানের কাছে ফিসফিস করে নেশা ধরানো গলায় কথাগুলো বলে ইমরান তাকায় তার দিকে। কাস্টমারকে কীভাবে সর্বোচ্চ আনন্দ উত্তেজনা শিহরণ দিতে হয়, সব কৌশলই জানা তার। কথায় কাজ হয়েছে মুহূর্তেই টের পায় ইমরান। মনিকার শরীরও জেগে উঠেছে। সে ইমরানের কাছে অনেক কিছু পেতে চায়, কয়েক মিনিটের ঘনিষ্ঠ শারীরিক সান্নিধ্যে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে তা। এ রকম পরিবেশে রং-বেরঙের কত নারীর ঘনিষ্ঠ সঙ্গ লাভের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে তার গত কয়েক বছরে। কারও সঙ্গে ঘুরে-ফিরে বেশ কয়েকবার, আবার কারও সঙ্গে শুধুই একবার। কেউ বয়সে তার চেয়ে ১০ থেকে ১২ বছরের বড়, আবার কেউ সমবয়সি। বয়সে তার চেয়ে ছোট এমন কিছু মেয়ের একান্ত সান্নিধ্য লাভেরও সুযোগ হয়েছে ইমরানের। গত কয়েক বছরে যত নারীর সংস্পর্শে এসেছে তাদের প্রত্যেকের রুচি, পছন্দ, মেজাজ-মর্জি একেক রকম। অনেকের জঘন্য রুচি বিকৃতির কুৎসিত প্রকাশ দেখে অবাক হয়েছে। অথচ বাইরে থেকে দেখে তা বোঝার অবকাশ নেই। সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত অর্থবিত্তবান পরিবারের বধূ-মাতা-কন্যাদের জীবনের অন্ধকার দিকটা দেখতে দেখতে এক ধরনের ঘৃণা জেগে উঠেছে তার মনে। দশ-বারো মিনিট ড্যান্স ফ্লোরে পরস্পরের শরীর জড়াজড়ি করে ধীর লয়ের মিউজিকের সঙ্গে হালকা নাচের পর মনিকার যেন ধ্যান ভাঙে। কিছুটা ক্লান্তও যেন সে। ক্লান্তি ঝেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে জাগে মনে। 'ওহ ডার্লিং, এভাবেই কি ড্যান্স ফ্লোরে বাকি রাতটা কাটিয়ে দিতে চাও? আমরা সেই জার্নিটা শুরু করব কখন?' মনিকার কণ্ঠে এক ধরনের অস্থিরতা ঝরে পড়ে। ইমরান অনুভব করে, সুন্দরী নারীর আর তর সইছে না। সে চায় দ্রম্নত কাজ শুরু করতে। 'ডিয়ার মনিকা, মাই সুইট বেবি! আই অ্যাম রেডি অ্যাট ইয়ু্যর সার্ভিস,' গাঢ় গলায় উচ্চারণ করে ইমরান। 'তাহলে আমরা দেরি করছি কেন, এখানে অযথা সময় নষ্ট করে কী লাভ? লেটস এনজয় আওয়ার টাইম, উই মাস্ট মেক পেস্নজেন্টফুল আওয়ার মোমেন্টস', আগের মতো কণ্ঠে অস্থিরতা নিয়ে উচ্চারণ করে মনিকা। 'সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেওয়ার জার্নিটা তো অলরেডি শুরু হয়ে গেছে ডার্লিং, এখন এটার স্টার্টিং পয়েন্টে রয়েছি, কনক্লু্যশনে যেতে হলে তো আমাদের নিরিবিলি কোথাও যেতে হবে। এটা তো তোমার হাতে। বল, কোথায় যাব? আই অ্যাম রেডি টু জাম্প ইয়ু্যর বিলউ সি। আই মিন, তোমার উত্তাল সাগরে ঝাঁপ দিতে চাই এক্ষুণি।' ইমরান কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গি করে কথাগুলো বলে। তার কথা বলার ভঙ্গি দেখে আর কথা শুনে কাঁচভাঙা হাসিতে লুটিয়ে পড়তে চায় মনিকা। 'ওহ নটি বয়, দেখা যাবে সেই উত্তাল সাগরে কতটা সাঁতরাতে পার। আই অ্যাম ওয়েটিং ফর দ্যাট এক্সাইটিং মোমেন্ট'। তার কণ্ঠে দুষ্টুমি আর কপটতা ঝরে পড়ে। এরপর মনিকা ফিসফিস করে বলে, 'ফলো মি, আমরা এখন যাব ধানমন্ডিতে। আজ আমি বনানীর বাসায় যাব না। বাসায় বলে এসেছি লায়লার বাসায় থাকব রাতে।' হোটেলের পার্কিং লটে লেটেস্ট মডেলের একটা পার্ল কালারের টয়োটা এক্সিও দাঁড়িয়ে। গাড়িতে ড্রাইভার বসে নেই। তার মানে, মনিকা গাড়িটা নিজে চালিয়ে এসেছে এখানে। আজকাল ঢাকা-শহরে নারীদের গাড়ির ড্রাইভিং সিটে স্টিয়ারিং ধরা অবস্থায় হরদম দেখা যায়। গাড়ির কাছে পৌঁছে পার্স থেকে গাড়ির রিমোট কী বের করে আলতভাবে চাপ দিতেই গাড়ির ইন্ডিকেটর লাইট জ্বলে ওঠে। হাতলে টান দিয়ে দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে মনিকা। ইমরানও অপেক্ষা না করে দরজা খুলে তার পাশের সিটে বসে। বসুন্ধরা মার্কেটে ক্রস করে পান্থপথ ধরে ধানমন্ডির দিকে এগোতে থাকে মনিকার গাড়ি। রাত তেমন বেশি না হলেও রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। জ্যাম নেই তেমন। চমৎকার হাতে স্টিয়ারিং ধরে বসে আছে মনিকা। চেহারায় কিছুটা উত্তেজনা ফুটে উঠেছে। গাড়িতে এসি চলার পরও গালে, নাকের ডগায়, চিবুকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। বেশ মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে সে। মনিকার গাড়ি চালানো দেখে মুগ্ধ হয় ইমরান। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামার আগে লায়লার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছে মনিকা। 'লায়লা, মাই সুইট ডার্লিং, আমি কিন্তু আসছি। ঘুমিয়ে পড়িস না আবার। তোর জন্য দারুণ ইন্টারেস্টিং একটা সারপ্রাইজ আছে। আজকের রাতটা হবে সুপার এনজয়বল। ইয়ু্য ক্যান্ট ইমাজিন হাউ ইট উড বি এক্সাইটিং'। হাসতে হাসতে কথাগুলো বলে মোবাইলটা পার্সে রেখে দেয় সে। 'লায়লা আমার কাজিন আবার ক্লোজ ফ্রেন্ডও। ধানমন্ডিতে লেকের পাশে ওর ফ্ল্যাট। হাসবেন্ড চাকরি করে একটা বিদেশি বড় এনজিওতে। বছরের বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে থাকতে হয়। সারা দুনিয়া টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। ছেলেমেয়ে দুটি অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করতে গেছে। একাকী বিরাট ফ্ল্যাটে থাকতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে লায়লা। একসময় একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াত। কি মনে করে সে কাজটা ছেড়ে এখন নিজেকে ঘরবন্দি করেছে। আমি মাঝেমধ্যে ওকে কোম্পেনি দিই। কেউ তাকে বুঝতে চায় না। আমি কিন্তু লায়লার ফিলিংসগুলো বুঝতে চেষ্টা করি এবং পারিও।' রাস্তার দিকে গভীর মনোযোগ রেখেই কথাগুলো বলে মনিকা। ধানমন্ডি লেক ঘেঁষে বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। দেখেই অনুমান করা যায় অনেক দামে কেনা প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্ট। এখানে যারা বসবাস করে তাদের অর্থবিত্তের প্রাচুর্য অনেক। একটি বিল্ডিং-এর গেটের সামনে গিয়ে হর্ন বাজাতেই ইউনিফর্ম পরা গার্ড ছুটে আসে গাড়ির কাছে। পাশের জানালার কাচ নামিয়ে মনিকা নিজের পরিচয় দিতে বলে, 'আমি ফোর ডি অ্যাপার্টমেন্টের লায়লা ম্যাডামের কাজিন।' তার কথা শোনামাত্র স্যালুট ঠুকে গার্ড বলে, 'জ্বি ম্যাডাম, আপনার আসার কথা কিছুক্ষণ আগে লায়লা ম্যাডাম ইন্টারকমে জানিয়েছেন। আপনার গাড়ি রাতে থাকবে বলেছেনও। আপনার গাড়ি পার্ক করার জায়গাও ঠিক করে রেখেছি। পিস্নজ, আসুন!' লিফটে চড়ে পাঁচতলায় ওঠার সময় ইমরানের শরীর ঘেঁষে দাঁড়ায় মনিকা। তারপর ফিসফিস করে বলে, 'আমার বান্ধবী লায়লাও তোমাকে চাইবে ক্রেজিভাবে, পারবে তো দু'জনকে সামাল দিতে?' 'আই মাস্ট ট্রাই টু গিভ পেস্নজার বোথ অব ইয়ু্য, ডোন্ট ফিল অ্যানি ডিস্যাটিসফেকশনস, তোমাদের ম্যাক্সিমাম পেস্নজার দিতেই তো আমি এসেছি। আর আমার কাজই তো তোমাদের চাহিদা পূরণ করা'। ফোর ডি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই সালোয়ার-কামিজ পরা দুর্দান্ত সুন্দরী এক নারী দরজা খুলে দাঁড়ায়। ইমরানকে একনজর দেখে তার মুখে হালকা হাসি ছড়িয়ে পড়ে। 'মনিকা, আয় ভেতরে আয়', বলে আহ্বান করে নারী। তাকে দেখে ইমরান ভেতরে ভেতরে চমকে ওঠে। বেশ কয়েক বছর পর লায়লা আনজুম ম্যাডামকে দেখছে সে। ওদের ইউনিভার্সিটিতে সোসিও ইকোনমিক ডাইমেনশন বিষয়ে বেশ কয়েকটি ক্লাসে তার লেকচার শুনেছে ইমরান। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে এমএস করে আসা লায়লা ম্যাডামের ক্লাসে অন্য অনেক ছাত্রের মতো ইমরানও মুগ্ধ হয়ে তার লেকচার শুনত। চোখ ধাঁধানো সুন্দরী শিক্ষিকার প্রতি ভেতরে ভেতরে তীব্র আকর্ষণ অনুভব করলেও কোনো ছাত্র তার কাছে ভিড়তে সাহস করেনি। ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার সৌন্দর্য মিলে অদ্ভুত এক আবেশ সৃষ্টি করেছিল। ছাত্ররা সাধারণত সহপাঠী কিংবা জুনিয়র ছাত্রীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে কিংবা দুর্বল হয়ে থাকে। কিন্তু সুন্দরী লায়লা আনজুম শিক্ষক হয়েও অধিকাংশ ছাত্রের মনে নানা ফ্যান্টাসি ছড়িয়ে রাখতেন। অনেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে একজন ইমরান হাসানকে আলাদাভাবে মনে রাখার কথা নয় তার। আজ সেই ফ্যান্টাসির নায়িকা লায়লা ম্যাডামের অ্যাপার্টমেন্টে এসেছে সে তার বান্ধবী মনিকার সঙ্গে। মনিকাই তাকে পাঁচতারকা হোটলের ড্যান্স ফ্লোর থেকে তুলে এনেছে নিজের অতৃপ্ত কামনা পূরণ করতে। রাতভর তার এবং বান্ধবী লায়লার বাসনা পূরণের জন্য যা করা দরকার তার সবই করতে হবে ইমরানকে। এর বিনিময়ে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে, জানে সে। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের এই পেশা নিয়ে চরম হতাশায় ডুবে যায় ভার্সিটি থেকে পাস করা আটাশ বছর বয়সের টগবগে যুবক ইমরান। এখন ইমরানের মোবাইল নম্বর এই শহরের অনেক নামিদামি, ভদ্র, বিত্তশালী পরিবারের নারীর মোবাইলে সেভ করা আছে। প্রয়োজন হলে তারা কল দেয়, এবং তাতে সাড়া দিয়ে জায়গামতো পৌঁছে যায় সে। অন্ধকার জীবনে পথ চলতে গিয়ে কত বিচিত্র নারীর দেখা পেয়েছে ইমরান। মা-খালার বয়সি নারী থেকে শুরু করে কলেজ-ভার্সিটি, ও লেভেল-এ লেভেল পড়ুয়া মেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে গড়তে আজকাল অরুচি ধরে গেছে। কিন্তু এ পথে উপার্জন করেই পুরো সংসারটা চালাতে পারছে সে। এমনি এমনি তো কেউ তাকে এত টাকা দেবে না-এটা মনে হতেই ইমরান তার অন্ধকার জীবনের গস্নানি, দুঃখ, লজ্জা, সবই ভুলে যায়। পরিবারের সবাই, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, চেনাজানা সবাই জানে- ইমরান কয়েক বন্ধুর সঙ্গে মিলে বিভিন্ন অফিসে স্টেশনারি সাপস্নাইর ব্যবসা করে। এর বাইরে কনসালট্যান্সির কাজও করে সে। মনিকা রহমান এখন বান্ধবী লায়লা আনজুমের বাসায় নিয়ে এসেছে ইমরানকে। কার পালা আগে, মানে আগে কে শুরু করবে? মনিকা না লায়লা, নাকি দু'জনে একসঙ্গে-এ নিয়ে দুই বান্ধবী তর্কে লিপ্ত হয়। এতে অবাক হয় না ইমরান। গত কয়েক বছরে এরকম বহু নারীর সঙ্গ লাভের সুযোগ হয়েছে ওর। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা তার কাছে কিছুটা অন্য রকম মনে হয়। এই মুহূর্তে যে দু'জন নারী তাকে নিয়ে মেতে উঠেছে তাদের একজন এক সময় তার শিক্ষক ছিলেন, যার ক্লাস লেকচার দারুণ মনোযোগ দিয়ে সে শুনত। মেধাবী, ব্যক্তিত্বময়ী, সুন্দরী সেই শিক্ষক সেই লায়লা ম্যাডামের সঙ্গে বিছানায় এখন সে। এক সময়ের রহস্যময় আবেশ সৃষ্টি করা সেই ব্যক্তিত্বময়ী সুন্দরী স্মার্ট নারী শিক্ষকটি নিজের কোনো কিছু আবৃত কিংবা আড়াল না করে পুরোপুরি উন্মুক্ত করেছেন তার কাছে। তিনি কোনোভাবেই ইমরানকে চিনতে পারছেন না। সে তার ছাত্র ছিল, মনে থাকারও কথা নয় তার। যে নারী শিক্ষকটিকে নিয়ে অন্যরকম ফ্যান্টাসিতে আচ্ছন্ন থাকত ইমরান, আজ সেই লায়লা ম্যাডামকে এরকম একান্তভাবে পাবে কোনোদিন ভাবেনি সে। ব্যাপারটা তাকে আচ্ছন্ন করে তোলে বারবার। লায়লার পালা শেষ হলে মনিকা শুরু করে। পরপর দু'জন কাস্টমারকে সার্ভিস দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যেতে হয়, যদিও ইমরানের জন্য এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। আজকাল ঢাকা-শহরে কত কী ঘটনা ঘটছে ঘরে ঘরে! অবশেষে মনিকার কাছ থেকে রেহাই পায় সে। ক্লান্তিতে ইমরানের শরীর ভেঙে আসতে চাইছে। ওপাশে বিছানায় মনিকা ও লায়লা ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাদের মৃদু নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ইমরান বিছানা ছেড়ে অ্যাটাচড বাথরুমে লাইফ সাইজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে কিছুক্ষণ। তার মুখে এক ধরনের বিদ্রম্নপের হাসি ফুটে ওঠে। শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। দামি বিদেশি সুগন্ধী সাবান সারা শরীরে ভালোভাবে মাখায় সে। সারা শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে তুলতে ভুলে যেতে চায় রাতভর ঘটে যাওয়া সব ঘটনার কথা। সব ভুলে নিজেকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে সে।